দুই অক্টোবর, ২০২০। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) মৌসুমের ১৪ তম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসকে সাত রানে হারানোর ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জয়ের নায়ক প্রিয়াম গার্গ। মাত্র ২৬ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকার পাশাপাশি ডেঞ্জারম্যান ডু প্লেসিকে করেছেন রান আউট। প্রিয়ম গার্গ চলতি বছরের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের রানারআপ ভারতের অধিনায়ক ছিলেন।
একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এই চেন্নাইয়ের বিপক্ষেই মাত্র ৪৩ বলে ৬৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন পৃথ্বী শ। জেনে রাখা ভাল, পৃথ্বী শ ছিলেন ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক। সব ফরম্যাটেই ভারতের হয়ে খেলে ফেলা পৃথ্বী শ এখন ভারতের নেক্সট বিগ থিঙ।
সেই বছরেরই ২৮ সেপ্টেম্বরের টাই ম্যাচের কথা মনে আছে? সেই পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচটার কথা? যে ম্যাচে একদম ব্যাঙ্গালুরুর মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার মত অবস্থা করে ফেলেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, নির্দিষ্ট করে বললে ঈশান কিষাণ। সেদিন মাত্র ৫৮ বলে ৯৯ রানের এক অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেন ঈশান কিষাণ। জেনে রাখুন, এই ঈশান কিষাণ কিন্ত ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের রানার আপ হওয়া ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। এই ঈশান, পৃথ্বী শ’রা এখন দূর আকাশের তারা।
পাঠক কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন কিছু? ভারতীয় ভবিষ্যত তারকাদের, মোটা দাগে বললে ভবিষ্যৎ ভারতীয় দলের নেতাদের এমন সাবলীল পারফরম্যান্স দেখে কি একটু আফসোস হচ্ছে নিজ দেশের তরুণদের জন্য? তবে আফসোস শুধুই আমাদের একার না, আফসোস আছে ভারতীয়দেরও।
সঙ্গে আক্ষেপ আছে ক্রিকেট ভক্তদেরও। চলতি দশকে কোন ক্রিকেটারকে আপনার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে? বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেটে? বিশ্লেষকরা বলেন আর ক্রিকেটবোদ্ধারা বলেন নামটা সবার ক্ষেত্রে একই। সঙ্গে কোন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের জন্য আফসোস হয় এই প্রশ্নেও সবার উত্তর হবে একটাই, নামটাও অজানা নয় কারোরই।
উন্মুক্ত চাঁদ! নীল আকাশের ওই চাঁদেরও যেমন কলঙ্ক আছে, তেমনি ভারতীয় ক্রিকেট আকাশের চাঁদেরও কলঙ্ক ওই ভারতীয় নীল জার্সি গায়ে জড়িয়ে ক্রিজে নামতে না পারা। আক্ষেপটা শুধু তাঁর একার নয়, ভারতীয় ক্রিকেটেরও!
ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেট অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আর তাদের রঞ্জি ট্রফি পৃথিবীর অন্যতম মর্যাদার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট। ভারতীয় ক্রিকেটের পাইপ লাইন এত সমৃদ্ধ এই রঞ্জি ট্রফি, মুস্তাক আলী ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফির জন্যই। তবে একজন ভারতীয় ঘরোয়া মঞ্চের ক্রিকেটারকে বিশ্বমঞ্চে প্রচারের বড় মাধ্যম এই আইপিএল। সহজ ভাষায় আইপিএল খেলোয়াড়দের বিজ্ঞাপন।
প্রিয়াম গার্গ আজ নিজের চতুর্থ আইপিএল ম্যাচেই প্রথম ফিফটি পেয়েছেন, যদিও এটা ছিল তার দ্বিতীয় ইনিংস। পৃথ্বী পেয়েছিলেন দ্বিতীয় ম্যাচেই। পৃথ্বী শ, ঈশান কিষাণ, প্রিয়ম গার্গ আর সেই উন্মুক্ত চাঁদ, এদের মধ্যে ভারতীয় জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন শুধুই পৃথ্বী শ। পৃথ্বী শ আবার অভিষেকেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন টেস্টে। খেলেছেন ওয়ানডেও। তবে পৃথ্বী ছাড়া আর কারো অভিষেক না হওয়ায় ইন্টারন্যাশনালের হিসাব করছি না।
প্রিয়ম গার্গ তার আইপিএল ক্যারিয়ারে খেলেছেন দুটো ইনিংস, যেখানে ৬৩ গড়ে আর ১৬১.৫৪ স্ট্রাইক রেটে একমাত্র ফিফটিতে করেছেন ৬৩ রান।
পৃথ্বী শ তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে ২৮ ইনিংসে প্রায় ২৪ গড়ে আর ১৪০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬৮৯ রান। সেখানে ফিফটি পাঁচটি আর কেকেআরের বিপক্ষে গত বছরের সুপার ওভারের ম্যাচে করেছেন সর্বোচ্চ ৯৯ রান।
ঈশান কিষাণ তার আইপিএল ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৩৫টি ইনিংস, যেখানে সাড়ে তেইশ গড়ে আর ১৩২ স্ট্রাইক রেটের করেছেন ৮২২ রান। সেখানে সর্বোচ্চ সেদিনের সেই সুপার ওভারের ম্যাচের অনবদ্য ৯৯।
আর উন্মুক্ত চাঁদ?
তিন তিনটা আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন মোটে ২১ টা ম্যাচ, ২০ ইনিংস। যেখানে ১০০ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ১৫ গড়ে করেছেন ৩০০ রান। সর্ব সাকুল্যে ২০১৫ সালে একটা ফিফটি মেরেছিলেন, এই যা!
কিন্ত, এই পরিসংখ্যান কখনোই বলবে না উন্মুক্ত টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তিনি তিনটা শতকের মালিক। বলবে শুধুই অধারাবাহিকতার কথা। বলবে আক্ষেপের কথা, আফসোসের কথা। উন্মুক্ত চাঁদ আসলেই ভারতীয় ক্রিকেট তো বটেই, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের জন্য এক আক্ষেপ।