আইপিএল মিডিয়া স্বত্ব: বিসিসিআই বনাম আইসিসি

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির জন্য খুব দ্রুতই দরপত্র আহ্বান করবে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলও (আইসিসি) একই সময়ে তাদের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির দরপত্র আহ্বান করতে আগ্রহী। এই দুই সংস্থার একই সাথে মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি নিয়ে আগামী ছয় মাস যুদ্ধের আবহ তৈরি হতে পারে।

আইপিএলের বর্তমান মিডিয়া স্বত্বের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। আইপিএলের এই চক্রে অংশগ্রহণ করছে আটটি দল। আগামী আইপিএলে দুটি দল বাড়ানো হবে। দল দুটি চূড়ান্ত হওয়ার পরই আইপিএলের ২০২৩-২৭ এই চার বছরের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি জন্য দরপত্র আহ্বান করবে বিসিসিআই।

আগামী ২৫ অক্টোবর আইপিএলের নতুন দুটি দল চূড়ান্ত করা হবে। এরপর অক্টোবর থেকে নভেম্বরের ভিতর আইপিএলের পরবর্তী মিডিয়া স্বত্বর জন্য বিসিসিআই ইনভাইটেশন টু টেন্ডার (আইটিটি) প্রকাশ করবে বলে আশাবাদী। আইপিএলের এবারের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রিতে কিছু নতুনত্বও থাকবে।

২০১৭ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ই-নিলামের মাধ্যমে আইপিএলের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি করা হবে। পাঁচ বছরের জন্য টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে হবে, যদিও বিসিসিআই তিন বছরের জন্য বিক্রি করতে আলোচনা করছে এবং তিন বছরের জন্য বিক্রি করতেই তাঁরা আগ্রহী।

আইপিএলের প্রতিটা ম্যাচের ৫৪.৫ কোটি মূল্য ধরা হতে পারে। তবে এখনো এটা নিশ্চিত নয়। ভারতীয় উপমহাদেশ, বৈশ্বিক, টেলিভিশন ও  ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য মিডিয়া স্বত্ব আলাদা ভাবে দেওয়া হবে। এই চারটি ক্যাটাগরিতে মিডিয়া স্বত্ব কেনার জন্য প্রতিষ্ঠান গুলো আলাদা আলাদা ভাবে বিড করতে পারবে।

দ্রুত আইপিএলের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বিসিসিআই এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত কাজ করছে। প্রথমত আইপিএলে নতুন দুটি দল কিনতে আগ্রহীদের উৎসাহী করে তুলছে। কারণ প্রতিটা ম্যাচের জন্য প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হতে পারে। এই ঘোষণা বিসিসিআই আগেই দিয়েছে।

এখন বিসিসিআইয়ের আইপিএলের দরপত্র আহবান করা আইসিসির মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন কী আইসিসিকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিও খুব দ্রুতই আগামী আট বছরের জন্য মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির দরপত্র আহ্বান করবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় কারণটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আইসিসির পরবর্তী আট বছরের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত। আগামী ১৬ অক্টোবর আইসিসির সভা রয়েছে। এই সভাতেই আইসিসির আগামী আট বছরের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির দরপত্র নিয়ে অনুমোদন আসতে পারে। কিন্তু বিসিসিআই সভাপতিও এটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে।

আইসিসির বর্তমান মিডিয়া স্বত্বর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালে। এরপর নতুন মিডিয়া স্বত্বর সময় শুর হবে ২০২৪ সাল থেকে। আর আইপিএলের নতুন টিভি স্বত্বর মেয়াদ শুর হবে ২০২৩ সাল থেকেই। অর্থ্যাৎ আইসিসির বর্তমান চক্রটি যখন শেষের দিকে যাবে, তাঁর অনেক আগেই আইপিএলের নতুন চক্র শুরু হবে। আইসিসির হাতে আগামী আট বছরের মিডিয়া স্বত্বের দরপত্র আহ্বান করার জন্য অনেক সময় রয়েছে।

তাই বিসিসিআই বিশ্বাস করে এত আগে আইসিসি মিডিয়া স্বত্বর দরপত্র আহ্বান না করে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসবে। কারণ আইপিএলের সাথে আইসিসিও মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির দরপত্র আহ্বান করলে সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আইসিসি যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে আইপিএলের সমস্য করতে না চায় তবে এটা নিয়ে এখন তাড়াহুড়া করার কোন মানেই দেখছে না বিসিসিআই।

এখন আইসিসির মিডিয়া স্বত্ব বিক্রির পদক্ষেপকে একদম অযৌক্তিক হিসাবে দেখছে বিসিসিআই। কারণ হিসাবে তাঁরা মনে করছে, আইসিসির মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি হয় আট বছরের জন্য, কিন্তু এখনো সেই আট বছরে আইসিসির ইভেন্ট গুলোর আয়োজক দেশই নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি। আইসিসি এখনো পূর্ণ সদস্য দেশ গুলো, বিশেষ করে ভারতের সাথে কর সংক্রান্ত সমস্য গুলোও সমাধান করতে পারেনি।

তবে আইসিসি মনে করছে মিডিয়া স্বত্ব কেনার প্রতিষ্ঠান গুলো শুধুমাত্র আইপিএলকেই একমাত্র অগ্রাধিকার দেবে না। তাই বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তাঁরা উচ্চ মূল্য মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি করতে পারবে। এমন কী আইসিসির আরো একটা যুক্তি রয়েছে একটু সময় নিয়ে করলে দ্বিপাক্ষিক ইভেন্ট গুলো নিয়ে আরো ভালো ভাবে পরিকল্পনা করতে পারবে তাঁরা।

তবে আইসিসির কোন যুক্তিই যথার্থ মনে হচ্ছে না বিসিসিআইয়ের কাছে। তাঁরা এখন মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি নিয়ে আইসিসির তাড়াহুড়া করার কোন মানেই দেখছে না। তাই বিসিসিআইও এই বিষয়টাকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link