এটা একটা চিরকালীন রীতি। আর তা পালন করে আসা হচ্ছে বহু, বহু দশক জুড়ে। কখনও টানা আউটস্ট্যান্ডিং পারফরমেন্স না দিয়ে গেলে সে প্লেয়ারের জন্য কলমের কালি বা মুখের প্রশংসাবাক্য – কিছুই খরচ হয় না। সাম্প্রতিককালের লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো অথবা ইদানিং কিলিয়ান এমবাপ্পে, আর্লিং হাল্যান্ড এমনকি বছরের পর বছর ধরে বাজে খেলে যাওয়া আলভারো মোরাতার জন্যও লেখালিখি হয়, অথচ দিনের পর দিন গোলের নিচে সার্ভিস দেওয়া ডেভিড ডি গিয়া থেকে যান আড়ালে।
২০১৮ বিশ্বকাপের পর তো আরওই অন্তরালে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কাছে পেনাল্টি হজম এবং হাতে লেগে বল গোলে ঢুকে যাওয়ার পর কার ইচ্ছে হয় ওরকম রিফ্লেক্সহীন এক গোলরক্ষকের জন্য রাত জেগে লেখালিখির পালা চালিয়ে যেতে।
অথচ ডেভিড ডি গিয়া গোলে কুম্ভ না হয়ে দাঁড়ালে গত ভিলারিয়াল ম্যাচে অন্তত তিন গোল হজম করা নিশ্চিত ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। প্রথম হাফে অত্যন্ত সাদামাঠা খেলা ম্যান ইউয়ের ডিপ ডিফেন্সে না ছিল হ্যারি মিগুয়ের, না ছিল এই মুহূর্তে অসম্ভব ভাল লেফটব্যাক লুক শ’। আনকোরা অ্যালেক্স টেলসকে নামিয়ে কাজ চালানো ওলের কপালে নিশ্চিত হার লেখা ছিল, যদি না তাঁর টিমে সেদিন ডেভিড ডি গিয়া থাকত।
২০১৯-২০ মৌসুম থেকে যেন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠল ডি গিয়ার হাত। বহু ম্যাচে নিশ্চিত গোল বাঁচানো বটেই, কখনও কখনও সুইপারের ভূমিকাতেও আজকাল দেখা যাচ্ছে তাকে। অথচ ডেভিড ডি গিয়া জাতীয় দলের সেকেন্ড চয়েস। লুইস এনরিকের তত্ত্বাবধানে জাতীয় দলে যেমন সুযোগ হয়নি ইয়াগো আসপাসের, যার শেষ মৌসুমে লা লিগায় টপ অ্যাসিস্টে নাম রয়েছে, যেমন সুযোগ হয়নি ইস্কোর, তেমনই ব্রাত্য ডেভিড ডি গিয়াও।
শুধু ভিলারিয়াল নয়, কিছুদিন আগে উলভ্সের সাথে লিগ ম্যাচেও উপর্যুপরি পরপর দু’বার গোললাইন সেভ দিয়েছিল ডেভিড ডি গিয়া। একবার পায়ে, একবার হাতে। গোল খেতে খেতেও শেষ মূহূর্তে বেঁচে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কারণ গোলের নিচে ছিল সবুজ জার্সি পরা এই লোকটা। পরে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে পেনাল্টি সেভ করল।
শেষ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে গোটা ক্রিমটা রোনালদো খেয়ে চলে গেলেও, প্রথম হাফে গাদাখানেক দুরন্ত সেভের মাধ্যমে ডেভিড ডি গিয়া বুঝিয়ে যাচ্ছেন যে তিনি এখনও শেষ হননি। এখনও তার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ম্যানচেস্টারকে, স্পেনকেও। এখনও তার দু’হাত ভরসা জোগায়, আশ্বাস প্রদান করে। ডেভিড ডি গিয়া লাল ম্যানচেস্টারের শেষ প্রহরী, একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গোলের নিচে, দলকে চাগিয়ে তুলছেন তাঁর অনবদ্য সেভের মাধ্যমে।
ডেভিড ডি গিয়া যতদিন আছে, ম্যানচেস্টারের চিন্তার কোনও কারণ নেই। একটা বাড়ি সুন্দর ক’রে সাজাতে গেলে যে যে সরঞ্জামের প্রয়োজন, ওলের কাছে তার প্রতিটিই মজুত রয়েছে। শুধু ডেকরেশনটা পোক্ত হওয়া চাই। তবে কিছু কিছু হার মেনে নেওয়া যায় না, যেমন – ওয়েস্ট হ্যাম এবং ইয়ং বয়েজ। জেতা উচিত ছিল। তবে যাই হোক, এই ম্যাঞ্চেস্টার ফুটছে টগবগিয়ে। আগামিতে ডেভিড ডি গিয়ার গ্লাভস আরও ভরসা যোগাবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে, এ স্থির বিশ্বাস আরও স্থির হচ্ছে সময়ের সঙ্গে।