মালে যেন এক টুকরো বাংলাদেশ

এরই মধ্যে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও ১০ জনের দল নিয়ে ১-১ গোলে ড্র করে ভারতের বিপক্ষে। দুটি ম্যাচেই মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা অকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছেন জামাল ভূঁইয়ার দলকে।

ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর যখন দল নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে তখন ইয়াসিন আরাফাতের গোলে যেন প্রাণ ফিরে পায়। এই ডিফেন্ডারের গোলের পর গ্যালারি যেন পুরো বাংলাদেশে পরিণত হয়ে যায়। বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম।

ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়রাও সেই আনন্দে যোগ দিতে চাইছে বাধ সাধে নিরাপত্তাকর্মীরা। ফুটবল যে এখনো মানুষের প্রাণের খেলা সেটা বোঝাতে আর বুঝতে এতটুকু বাকি নেই। নয়তো খেলাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে বড় কোন সাফল্য নেই। এবারের সাফেও ফাইনালে খেলতে পারবে কিনা সেই সংশয় রয়েছে। তবুও নিজের কাজকে তুচ্ছ করে প্রিয় জন্মভুমিকে উৎসাহ দিতে যেন আগ্রহের কো কমতি নেই। দ্বীপ রাষ্ট্রটি এক টুকরো বাংলাদেশ হওয়ার পথে এবার বাধ সেধেছে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন।

আগামীকাল স্বাগতিক দেশের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলবে অস্কার ব্রুজোনের শীষ্যরা। কিন্তু তার আগে দর্শকদের মাথায় হাত! ভোর থেকে মালে ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরে লাইনে দাড়িয়েও প্রতাশিত টিকিট পাচ্ছেন না তারা। বাংলাদেশ ম্যাচ টিকেটের জন্য প্রবাসীদের হাহাকার তাই বেড়েই চলেছে। মালদ্বীপ-বাংলাদেশ ম্যাচের মতো প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই ৭ হাজার টিকেটের ব্যবস্থা রেখেছে আয়োজক দেশটির ফুটবল ফেডারেশন।

কিন্তু, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এর মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য মাত্র ২০০ টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে! ফুটবলসহ যে কোন খেলার প্রাণ হচ্ছে ভক্ত-সমর্থকরা। পাশাপাশি যে কোন দল এবং খেলার মূল চালিকা শক্তি হয়ে মাঠে প্রিয় দলকে সমর্থন যোগাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। ভক্ত সমর্থকরাই একটা দলকে অতিরিক্ত শক্তি যোগায় এবং তাদের সেরাটা বের করে আনতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে।

এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্যেই মূলত প্রবাসী বাংলাদেশি সমর্থকদের সাথে বৈষম্য মুলক আচরণ করছে মালদ্বীপ ফুটবল ফেডারেশন! অথচ মালেতে উপস্থিত থেকেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

এছাড়া বাফুফে সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠানটির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণও সভাপতির সাথে মালদ্বীপে অবস্থান করছেন। কিন্তু ৭ হাজার টিকিটের মধ্যে কেন মাত্র ২০০ টিকিট দেওয়া হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেই প্রশ্ন তিনি মালদ্বীপ ফুটবলকে করতে পারতেন। বিষয়টি যে তারা ইচ্ছাকুতভাবে করেছে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর ভারত ম্যাচে যেভাবে গ্যালারিতে থেকে লাল সবুজের দলকে উৎসাহ যুগিয়েছেন সেটাই হয়তো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেছে স্বাগতিক দলের জন্য।

টিকিটের জন্য যে হতাশা সেটা অনেকের মনে কষ্টের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল হলে মালদ্বীপে এক লাখের মতো বাংলাদেশি মালদ্বীপে বাস করেন। এখানে অনেকেই আছেন যাদেরকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে দালালরা নাকি দ্বীপ রাষ্ট্রে ফেলে গেছে! তাদেরই বিনোদনের বড় খোরাক হয়ে এসেছিল এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ। প্রথম দুই ম্যাচে সবকিছু ভালমতো চললেও তৃতীয় ম্যাচে এসে সবকিছু উলট পালট হয়ে গেছে। সেটা এতটাই যেন মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচে গ্যলারিতে গলা ফাটানোর মতো দর্শক থাকবে একেবারে হাতে গোনা। খেলোয়াড়রাও তাই হতাশ হয়েছেন এই খবর শোনার পর।

সব দলই চায় গ্যালারীতে যেন নিজেদের সমর্খন বেশি থাকে। তাইতো ফুটবল মাঠে এগারো জন খেললেও গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা পালন করে ১২তম খেলোয়াড়ের ভূমিকা। দুদিন আগে ভারতের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচের দিকে থাকলেও স্পষ্ট বুঝা যায় মাঠে দর্শকদের সমর্থন কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ভারতের বিপক্ষে শুরু থেকে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জন্য গলা ফাটিয়ে সমর্থন দেওয়া বাংলাদেশী প্রবাসী দর্শকদের সমর্থন এবার মালদ্বীপ ম্যাচে তেমন একটা পাবে না বাংলাদেশ ফুটবল দল।

আগামীকাল স্বাগতিক মালদ্বীপের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু এ ম্যাচের জন্য বাংলাদেশীদের কাছে পর্যাপ্ত টিকেট বিক্রি করছে না বলেই অভিযোগ করছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ম্যাচের দুদিন আগে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট না পাওয়ায় হতাশ হয়ে এক দর্শক বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচ দেখার জন্য আমি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে টিকেটের জন্য অনেকের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু যখন আমি কাউন্টারে পৌঁছালাম, তখন তারা বলেছিল যে বাংলাদেশের জন্য টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। মালদ্বীপের সঙ্গে ম্যাচটা দেখতে না পারার কারণে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি।’

টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে না পাওয়া আরেক সমর্থকও একই অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার সামনে লাইনে খুব বেশি বাংলাদেশী ছিলনা। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছিল যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য বরাদ্দ ২০০টি টিকেট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এই টিকেটগুলো পরে গোপনে বিক্রি হতে পারে বলে আমরা ধারনা করছি।’

বিষয়টি নিয়ে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল জানিয়েছেন, মোট টিকেটের ৮ শতাংশ অতিথি জন্য রাখা হয়ে থাকে। তবে টিকেটের সংকট নিয়ে মালদ্বীপ এফএ’র সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন হেলাল। তাতে কতটা উপকার হবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেটা দেখা যাবে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link