’ঠেকানোর পাশাপাশি গোল করতেও হবে’

প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র দুটি গোল করেছে। কাকতালীয়ভাবে দুটি গোলই এসেছে দুই ডিফেন্ডারের মাধ্যমে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পেলান্টি থেকে গোল করেছিলেন তপু বর্মন। আর ভারতের বিপক্ষে বিপদজনক অবস্থায় থাকা দলকে উদ্ধার করেন ইয়াসিন আরাফাত। অথচ ভারতের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী। কিন্তু, বাংলাদেশের ষ্ট্রাইকাররা ঠিকঠাক জ্বলে উঠতে পারছেন না।

সেই বিষয়টি মনে করেই কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেন, ‘আমার দলে ১১ জন অ্যাটাকার, আবার ১১ জনই ডিফেন্ডার!’ এই নীতি নিয়েই আজকে মাঠে নামতে যাচ্ছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। কোচ হিসেবে মালদ্বীপের ক্লাবে কোচিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তার। নিউ রেডিয়েন্ট এফসির হয়ে এক বছর কাজ করায় দ্বীপ দেশটির সবকিছুই তাঁর ভালো ভাবে জানা রয়েছে। তাই হয়তো স্বাগতিকরা স্প্যানিশ কোচকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তায়।

যদিও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে মাঠের লড়াইটা একটু অন্যভাবে দেখছেন ব্রুজোন। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আলাদা প্রস্তুতির কথা বলে গেছেন ৪৪ বছর বয়সী কোচ। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচটা শুধু তার জন্য নয়, দলের সবার জন্যই যে কতটা চ্যালেঞ্জের, সে কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছেন ব্রুজোন, ‘এটা আমার একার চ্যালেঞ্জ নয়, এটা আমাদের দলের সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতে পুরোপুরি প্রস্তত আছি। এই ম্যাচের জন্য আমাদের আলাদা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাদের চেয়ে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি মালদ্বীপের। তারা স্বাগতিক হিসেবে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে।’

টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে মালদ্বীপের ৩ পয়েন্ট দরকার। উল্টো দিকে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাঙ্কিংয়েও মালদ্বীপ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। সর্বশেষ মুখোমুখিতে বাংলাদেশ ধরাশায়ী হয়েছে, এটা পরিসংখ্যানই জানা দিচ্ছে। এমন রেকর্ড দেখলে আশাবাদী হওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে সাফের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখলে ইতিবাচক কিছু ভাবাটাই বর্তমানে স্বাভাবিক। যদিও ম্যাচটি যে সহজ হবে না, জানা আছে বাংলাদেশ কোচেরও। সে কারণে গোল ঠেকানোর পাশাপাশি গোল করাতেও বেশ পারঙ্গমতা দেখাতে হবে। যা নিয়ে কাজ করছেন এ স্প্যানিয়ার্ড।

৫-০, ৫-০, ৮-০। ১-৩, ১-৩, ০-৫। অনেকের কাছেই ধাধা লাগতে পারে, এটি কোন ম্যাচরে স্কোর। প্রথম তিনটি ম্যাচ স্কোরলাইন ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে। বাংলাদেশের ফুটবলের তখন দারুণ সময় পার করছে। শেখ মোহাম্মদ আসলাম, কায়সার হামিদদের যুগে তো মালদ্বীপকে বলে-কয়ে গোল দিতেন। শেষ তিনটি স্কোরলাইনে সেই মালদ্বীপের বিপক্ষেই বাংলাদেশের সর্বশেষ তিন ম্যাচের হারের অবস্থাটা পরিস্কার হয়েছে। এখন সময় বদলেছে।

আর সে কারণে অনেকেই বলতে পারেন বাংলাদেশ কয় গোলে হারবে আজকে! কারণ ১৮ বছর আগে সর্বশেষ জয়ের দেখা পেয়েছিল লাল সবুজ পতাকাধারীরা। বিষয়টি মালদ্বীপের কোচ আলী সুজেইনেরও বেশ জানা রয়েছে, ‘২০০৩ সালে বাংলাদেশ আমাদের বিপক্ষে সর্বশেষ জিতেছিল। এর পর থেকে আমরাই বেশি ভালো করেছি আর ম্যাচগুলো জিতে যাচ্ছি। কিন্তু পেছনের এই ইতিহাস এই ম্যাচে কি আমাদের খুব বেশি সাহায্য করবে? একসময় আমরাও তো ওদের কাছে ৮ গোল হজম করতে হয়েছে। সেই সময়টা বদলে এখন মাঠে মালদ্বীপই রাজত্ব দেখাচ্ছে। তবে আজকে ম্যাচে আমাদের জন্য সহজ হবেনা। প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ ফুটবল খেলেছে তারা। বিষয়টি মাথায় নিয়েই আমার দল মাঠে নামবে।’

এদিকে মালদ্বীপকে আটকাতে বাংলাদেশ কোচের ‘গোপন’ সুত্রের খবর পাওয়া গেছে। এবারের সাফে মালদ্বীপের আক্রমণভাগই যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, তা নিয়ে সংশয় নেই কারোরই। ব্রুজোনের কথাটা সেটিরই একটা স্বীকৃতি বলা যায়। কিন্তু সেই মালদ্বীপকে বাংলাদেশ কীভাবে আটকাবে, সেই প্রশ্ন এখন ফুটবলপ্রেমীদের। ডিফেন্সে নেই বিশ্বানথ ঘোষের মতো পরীক্ষিত সৈনিক। থাকছেন না রাকিব হোসেনও। এই দুজনের অভাবটা কিছুটা হলেও ভোগাবে দলকে। তবে বাংলাদেশের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মালদ্বীপের আক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ পরিকল্পনা নাকি নিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ। সেই বিশেষ পরিকল্পনা হলো, রক্ষণভাগ একেবারে আঁটসাঁট রাখা।

আলী আশফাকদের কোনো জায়গা দেওয়া হবে গোলে শট নিতে। তপু বর্মণ, তারিক কাজী, ইয়াসিন আরাফত, টুটুল হোসেন বাদশারা সদা সতর্ক থাকবেন। জমাট রক্ষণ বলতে যা বোঝায়, সেটাই আজকে মালদ্বীপের জন্য তৈরি করে রাখছে বাংলাদেশ। কোনোভাবেই পোস্টে শট নিতে দেওয়া হবে না প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারদের। মালদ্বীপের আক্রমণের মূল ভরসা আলী আশফাক জাতীয় দলের হয়ে ৮১ ম্যাচে ৫৩ গোল করেছেন।

আরেক স্ট্রাইকার আলী ফাসির করেছেন ৬০ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল। এছাড়া মূলত বদলি নামা স্ট্রাইকার আসাদুল্লাহ আবদুল্লাহ ৪০ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। অভিজ্ঞ এই খেলোয়াড়েরাই অনেক দিন ধরে মালদ্বীপকে বেশ ভালভাবেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে শুধু দুই মূল স্ট্রাইকার আলী আশফাক আর আলী ফাসিরই নন, দুই উইঙ্গারকেও বিপজ্জনক বলছেন বাংলাদেশ কোচ ব্রুজোন।

আজকের ম্যাচে স্ট্রাইকারদের গোল করা নিয়ে অধিনায়ক অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ’প্রথম দুই ম্যাচে আমাদের ষ্ট্রাইকাররা খুব একটা খারাপ খেলেনি। আশা করি মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচে ষ্ট্রাইকাররা জ্বলে ওঠতে পারবে। আমরা নিজেদের নিয়েই মূলত ভাবছি। ম্যাচটা জিতেই আমরা ফাইনালের পথে একধাপ এগোতে চাই।’ কিন্তু মালদ্বীপও মরিয়া হয়ে আছে। নেপালের কাছে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে স্বাগতিকদের।

৩৪ বছর বয়সী মালদ্বীপ অধিনায়ক আকরাম আবদুল ঘানি তাঁর দলের জয়ের পথে বড় বাধা মানেন বাংলাদেশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে, ‘বাংলাদেশের জন্য ব্রুজোন বাড়তি শক্তি জোগাবেন বাংলাদশকে। তবে আমাদের সামনে জয়ের বিকল্প নেই বলে অবশ্যই জিততে চাই।’

তাই মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করতে আশাবাদী ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া, ’মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফরোয়ার্ডরা গোল করবে, এটা স্বাভাবকিভাবে দেখলে ঠিক আছে। তারপরও আমি মনে করি, যখন ১১ জন খেলবে তখন যে কোনো খেলোয়াড়ই গোল করতে পারে। আমরা আশাবাদী আর সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনুশীলনেও ফিনিশিং নিয়েও অনেক কাজ হচ্ছে। ফরোয়ার্ডরা এই ম্যাচে গোল পাবে বলে আমি আশাবাদী।’

ফরোয়ার্ডরা গোলের দেখা পেলে বাংলাদেশের জয়টাও পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link