সাদা পোশাকে সেদিন কালো দাগটা লেপ্টে গিয়েছিলো মাত্র দু’দিনের ব্যবধানেই। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে লজ্জার রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। এমন রেকর্ড গড়বেন সেটি কখনো কল্পনায়ও আনেননি পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। সেই টেস্টে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের নিয়ে একপ্রকার ছেলেখেলা করেছিলো অজি বোলাররা।
১২ অক্টোবর, ২০০২। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অন্ধকারছন্ন দিন। পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘ব্ল্যাক ডে’ বলা যায়। মাত্র দুই দিনেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শারজাহ টেস্টে হেরে বসে তাঁরা। আর এই দুই দিনে দুই ইনিংসে ৫৯ ও ৫৩ রানে অলআউট হয়ে লজ্জাজনক এক পরাজয় বরণ করে পাকিস্তান। অবশ্য সিরিজের আগেও কম নাটক হয়নি! তখন পাকিস্তানের মাটিতে নিয়মিতই সিরিজ হলেও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সেবার আরব আমিরাতে সিরিজ আয়োজন করতে বাধ্য করে অস্ট্রেলিয়া দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট জয়ে ১-০ তে এগিয়ে ছিলো অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সিরিজ সমতায় ফেরানোর লক্ষ্যে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। গ্লেন ম্যাগ্রা, ব্রেট লি, শেন ওয়ার্নদের ম্যাজিকেল বোলিংয়ে পাকিস্তানি ব্যাটাররা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে।
লাঞ্চ বিরতির আগেই ৫৮ রানে ৯ উইকেট নেই পাকিস্তানের! এরপর লাঞ্চ বিরতির পরপর প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫৯ রানেই অলআউট স্বাগতিকরা! আব্দুল রাজ্জাক ছাড়া কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা! আব্দুল রাজ্জাক সর্বোচ্চ ২১ ও অতিরিক্ত খাত থেকে আসে ১৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে শেন ওয়ার্ন সর্বোচ্চ ৪ টি ও ব্রেট লি, অ্যান্ডি বিকেল, গ্লেন ম্যাগ্রারা নেন প্রত্যেকে ২ টি করে উইকেট।
এর আগে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৮১ সালে পার্থে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। সেটিই ছিলো টেস্ট ইতিহাসে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। শারজাহতে ৫৯ রানে অলআউট হয়ে নতুন এক লজ্জার রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান!
এরপর জবাবে প্রথম দিনেই নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের রান সহজেই টপকে বড় লিডের দিকে এগোতে থাকে অজিরা। প্রথম দিন শেষে হেইডেনের ফিফটিতে ৪ উইকেটে ১৯১ রান সংগ্রহ করে অজিরা। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সেঞ্চুরি তুলে নেন হেইডেন। সাকলাইন মুশতাক, আব্দুল রাজ্জাকরা দুর্দান্ত বোলিং করলেও ম্যাথু হেইডেনের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ৩১০ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় অজিরা।
অবশ্য হেইডেন ছাড়া কেউই দেখা পাননি ফিফটির! হেইডেনের ব্যাটে প্রথম ইনিংসে অজিরা লিড নেয় ২৫১ রানের! পাকিস্তানের পক্ষে আব্দুল রাজ্জাক ৩ ও সাকলাইন মুশতাক নেন ৪ উইকেট।
২৫১ রানের বিশাল লিড মাথায় নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে আবারো ওয়ার্ন, বিকেলদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। আগের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা আব্দুল রাজ্জাক ইনজুরিতে পড়েন শুরুতেই। বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। অজি বোলারদের সামনে যেনো দাঁড়াতেই পারছিলেন না পাকিস্তানি ব্যাটাররা।
প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় ইনিংসেও মাত্র ৫৩ রানে গুড়িয়ে যায় স্বাগতিকরা। ইমরান নাজিরের ১৬ ও মিসবাহ উল হকের ১২ ছাড়া কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শেন ওয়ার্ন শিকার করেন চার উইকেট। অ্যান্ডি বিকেল নেন দুই উইকেট।
মাত্র দুই দিনেই শেষ শারজাহ টেস্ট! ইনিংস ও ১৯৮ রানে পাকিস্তানকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় পায় অজিরা। প্রথম ইনিংসে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ডের পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে আবারো নতুন লজ্জার রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের খেলা কোনো টেস্ট দুই দিনে শেষ হয়।
অবশ্য ওই ম্যাচে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ সাইদ আনোয়ার, ইনজামাম উল হক, শহিদ আফ্রিদিরা কেউই না থাকায় ব্যাটিংয়ের দিক থেকে দলটি ছিলো অনেকটাই খর্বশক্তির এবং আনকোড়া। এর উপর শারজাহর তীব্র গরমে অস্থির স্বাগতিকরা।
শারজাহর ওই তীব্র গরমেই ব্যাট হাতে বড় সংগ্রহ পায় অজিরা। অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ’র ১৫০ তম টেস্টে পাকিস্তানের গায়ে এক লজ্জার দাগ এঁটে বড় জয় তুলে নেয় অজিরা। টেস্ট ইতিহাসে দুই ইনিংস মিলিয়ে এর আগে এতো কম রান হয়েছিলো মাত্র তিন বার!