ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০০৩, আফ্রিকার চতুর্থ দেশ হিসেবে আইসিসি ট্রফিতে রানার্স হয়ে সেবার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেছিল নামিবিয়া। সমস্ত ম্যাচে হেরে গেলেও রুডি ভ্যান ভুরেনের দুর্দান্ত বোলিং কিংবা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইয়ান বেরি বার্গারের ঝড়ো ৮৫ এখনও অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর কাছেই ওই স্মৃতি মরচে পড়েনি।
আঠারো বছর আগের সেসব স্মৃতি উস্কে দিয়ে বিশ্ব টি-টোয়েন্টির দরবারে আফ্রিকার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এবারে মরু দেশে হাজির নামিবিয়া। প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন তাঁদের এতদিনে সত্যি হতে চলেছে। দারুণ সব প্রতিভাবান খেলোয়াড়ে ঠাসা নামিবিয়া দল গোটা বিশ্বের কাছে এক অজানা চ্যালেঞ্জ।
কোনো বড় দলের সাথেই খেলার সুযোগ না পাওয়া নামিবিয়া অ্যাসোসিয়েট জগতে কিন্তু খারাপ পারফরমেন্স করেনি, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে দারুন খেলা জেরহার্ড এরসমাসের নামিবিয়া ব্রিগেড বর্তমানে টি-টোয়েন্টি বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১৯ নম্বরে অবস্থান করছে। নামিবিয়ার তরুণ তুর্কিরা এবারের বিশ্বকাপে কেমন চমক দেখায় সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে ক্রিকেটবিশ্বের।
- শক্তিমত্তা
বিশ্বকাপের ঠিক আগে নামিবিয়া দলের শক্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ও ফ্রাঞ্চাইজি দুনিয়ার যথেষ্ট পরিচিত মুখ অলরাউন্ডার ডেভিড উইসে। ডান হাতি পেসার ও হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যান উইসে আইপিএলেও খেলে গেছেন। তাঁর পিতার জন্মসূত্রে নামিবিয়ান হওয়ায় নামিবিয়ার জার্সি এবারে গায়ে চাপাতে কোনো অসুবিধা নেই উইসের।
দলের মিডল অর্ডার আরো শক্তিশালী করে তুলতে উইসের সঙ্গী হবেন অধিনায়ক এরসমাস। গত কোয়ালিফায়ারের সেরা খেলোয়াড় এরসমাস প্রধানত অ্যাট্যাকিং ব্যাটসম্যান হলেও, প্রয়োজনে অ্যাঙ্করের ভূমিকাও নিতে পারেন। ওপেনার স্টিফেন বার্ড শুরুতেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে সিদ্ধহস্ত।
এছাড়া অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ক্রেগ উইলিয়ামস ও দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনে ব্যাটিং করতে পারেন, স্লগ ওভারে উইলিয়ামস দলের বড় ভরসা, এছাড়া মিডল ওভারে বল হাতে নিয়মিত উইকেট তুলে আসছেন উইলিয়ামস বছরের পর বছর ধরে। বাঁহাতি পেসার অলরাউন্ডার জ্যান ফ্রাইলিংক কিন্তু নিজের দিনে ভয়ঙ্কর হতে পারেন। গত বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে চমৎকার বল করা ফ্রাইলিংক পেসের ভেরিয়েশনে বিপক্ষের রান চেপে রাখতে ভালোই পারেন।
ডেথ ওভারে ফ্রাইলিংক এর যোগ্য সঙ্গী হতে পারেন আরেক বাঁহাতি ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার জে জে স্মিট। স্লগ ওভারে ব্যাট হাতেও স্মিট খুব ভালো অপশন নামিবিয়ার জন্য। গত কোয়ালিফায়ারে ওমানের বিরুদ্ধে ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে রেকর্ড করেছিলেন স্মিট। স্পিনার হিসেবে বার্নার্ড স্কোল্টজ অনবদ্য বোলিং করেছিলেন গত কোয়ালিফায়ারে। এবারেও আমিরশাহীর উইকেটে স্কোল্টজ বড় ভূমিকা নিতে পারেন।
- দুর্বলতা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতো বড় মঞ্চে খেলার বড় কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা নবাগত নামিবিয়াকে ভীষণ ভাবে ভোগাতে পারে। বিশেষত গ্ৰুপে শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ডের মতো দুই পূর্ণ সদস্যের দেশ বা নেদারল্যান্ডস এর মতো অ্যাসোসিয়েট জগতের সেরা দল থাকায় নামিবিয়ার সামনে কাজটা যথেষ্টই কঠিন।
স্কোল্টজ ছাড়া ভালো কোনো স্পিনার না থাকাও ভোগাতে পারে নামিবিয়াকে, ফলত গত কোয়ালিফায়ারের মতো এবারেও মাঝের ওভারে হাত ঘোরাতে হবে ইরাসমাসকে। ইরাসমাসের ‘গোল্ডেন আর্ম’ যদিও অনেক ব্রেক থ্রু দিয়েছে নামিবিয়াকে। বোলিংয়ে ক্রিস ভিলজয়েন অবসর নেওয়ায় সেই শূন্যতা ঢাকাটা একটু কঠিন নামিবিয়ার জন্য। এছাড়া রান তাড়া করতে বরাবরই অসুবিধায় পড়া দলটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবারও বিপদে পড়তে পারে অভিজ্ঞতার অভাবে।
- নামিবিয়া দল ও তাঁদের সম্ভাবনা
জ্যান নিকোল লফটি ইটন, রুবেন ট্রাম্পলম্যান বা বেন শিকঙ্গোর মতো তরুণ নবাগতরা এবারের নামিবিয়া দলে চমক হতে পারে। ওপেনার নিকো ডেভিনের বাদ পড়ার কারণ যথেষ্টই রহস্যের। গত কোয়ালিফায়ারে স্টিফেন বার্ডের সাথে জুটি বেঁধে নিয়মিত ভালো শুরু করেছিলেন ডেভিন।
যাইহোক ডেভিনের অনুপস্থিতিতে কে ওপেন করেন সেটাই দেখার। মিডল অর্ডার যথেষ্টই শক্তিশালী হলেও স্কোল্টজ ছাড়া ভালো স্পিনার না থাকায় সমস্যায় পড়বে নামিবিয়া। তবে গ্ৰুপে শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস এর মতো সব দল থাকায় দুর্ধর্ষ কিছু পারফরমেন্স না দেখালে প্রথম পর্বের বাঁধা টপকানো যথেষ্টই কঠিন নামিবিয়ার জন্য।
- নামিবিয়া স্কোয়াড
জেরহার্ড ইরাসমাস (অধিনায়ক), স্টিফেন বার্ড, বেন শিকঙ্গো, কার্ল বারকেনস্টক, জেন গ্রিন, জ্যান নিকোল লফটি ইটন, রুবেন ট্রাম্পলম্যান, ডেভিড উইসে, ক্রেগ উইলিয়ামস, জে জে স্মিট, জ্যান ফ্রাইলিংক, বার্নার্ড স্কল্টজ, মিক ডু প্রিজ, মাইকেল ভ্যান লিঙ্গেন, পিকি ইয়া ফ্রান্স।