ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করা যাক। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড খেলেছে দুই ম্যাচ। দুই ম্যাচেই জিতেছে বরং স্বাচ্ছন্দ্যেই জিতেছি বলা চলা। তবে এই জয়ে ইংল্যান্ড দলের মঈন আলীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। তিনি রীতিমত দলের স্ট্রাইক বোলার বনে গেছেন। গত দুই ম্যাচেই তিনি প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই তুলে নিয়েছেন দু’টি করে মোট চারটি উইকেট।
যেকোন খেলায় শুরুর দিকে কয়েকটি উইকেট তুলে নেওয়া গেলে প্রতিপক্ষের উপর বেশ একটা চাপ প্রয়োগ করা যায়। সেই চাপের ফলে লক্ষ্যমাত্রা ক্ষুদ্র হওয়ার পাশাপাশি বাকি উইকেট গুলোও দ্রুত তুলে নেওয়া যায়। তবে এই যে মঈন আলী কিন্তু ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন না। যে ক’টি ম্যাচ তিনি খেলার সুযোগ পেয়েছেন তাঁর অধিকাংশতেই তিনি একজন ব্যাটার হিসেবেই গণ্য হয়েছেন।
তবে এখন পর্যন্ত ব্যাটিং এ বিশ্বকাপে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ ঠিক পেয়ে ওঠেননি মঈন আলী। তবে জাতীয় দলে তাঁর অলরাউন্ডার গুণটি খুব একটা ব্যবহৃত হয়নি জাতীয় দলের জার্সিতে। কিন্তু তাঁর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে এবং তাঁর প্রতি দলের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। এই বদলের পেছনের অনেক বড় এক নিয়ামক ধরা যেতে পারে ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে (আইপিএল)।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া আইপিএল এর চ্যাম্পিয়ন টিম চেন্নাই সুপার কিংসের একজন নিয়মিত সদস্য ছিলেন মঈন আলী। সাত কোটি রুপির এক বিশাল অঙ্কের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই। তাঁর এই অন্তর্ভুক্তি যতটানা আশ্চর্যান্বিত ছিল তাঁর থেকেও বেশি বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল তাঁকে দলে ভেড়ানোর পেছনে চেন্নাইয়ে এত অর্থ ব্যয়। কেননা তিনি তখন পর্যন্তও ইংল্যান্ড জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তিনি ছিলেন না।
তাঁর এই হাঁকডাক জাগানিয়া দলবদলেও জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দরজা অবরুদ্ধ থাকার মতোই ছিল। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে জায়গা হয়নি মঈন আলীর। তবে চেন্নাই ও তার অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ভরসা করলেন মঈনের উপর।
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ধোনি তাঁকে ব্যবহার করলেন একজন ফ্রন্টলাইন স্পিনার হিসেবে। তিনি পাওয়ারপ্লের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময় বল তুলে দেন মঈনের হাতে। তাছাড়া তাঁকে যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতাও দেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনি। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন মেলে ইংলিশ অলরাউন্ডারের।
মঈন আলী নিরাশ করেননি চেন্নাই টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে অধিনায়ক ধোনিকে। নিজের অলরাউন্ড পারফর্মেন্স দিয়ে অবদান রাখেন দলের সব গুরুত্বপূর্ণ জয়ে। সম্প্রতি শেষ হয়ে যাওয়া আইপিএলের চতুর্দশ সংস্করণে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে মঈন আলী খেলেছেন ১৫ ম্যাচ।
প্রায় ২৬ গড়ে রান করেছেন ৩৫৭ রান প্রায় ১৩৮ ছুই ছুই স্ট্রাইকরেটে। অপরদিকে বোলিং হাতেও দলের প্রয়োজন মাফিক বল করেছেন তিনি। ৬.৩৫ ইকোনমি রেটে তিনি ছয়টি উইকেট পুরেছেন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে।
তবে এই বোলিং ফিগার দিয়ে বদলে যাওয়া মঈন আলীকে খুব একটা বোঝা সম্ভব নয়। পাওয়ারপ্লেতে তিনি বল করেছেন মাথা খাটিয়ে এবং ছিলেন তুলনামূলক কম খরুচে। এছাড়াও ব্যাটারদেরকে হাত খোলার সুযোগ না দিয়ে ম্যাচের লাগাম শুরুতেই দলের পক্ষে টেনে নিতে সক্ষম ছিলেন তিনি।
তাছাড়া তাঁর এই ম্যাচ জেতানো বা মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা তাঁকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড দলে জায়গা করে দেয়। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়োন মরগান ঠিক ধোনির দেখানো পথ ধরেই মঈন আলীর অলরাউন্ডার পারফর্মেন্সের যথাযথ ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে এখন পর্যন্ত সফল।
আইপিএলের থেকে মঈন পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস এবং তিনি যে ম্যাচ জেতানো মতো ক্ষমতা রাখেন সেই সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের এক মাধ্যম হয়েছে আইপিএল। এ বিষয়ে মঈন আলী বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বস ফিরে পেয়েছি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে এবারের আইপিএল খেলে। তাছাড়া তাঁরা আমার উপর যথেষ্ট পরিমাণ ভরসা করেছে সেই নিলাম পরবর্তী সময় থেকেই। একজন খেলোয়াড় হিসেবে দলের কাছ থেকে এমন মানসিক সমর্থন মাঝেমাঝেই আশা করে থাকি আমরা। তাদের এই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে আমি খুশি।’
আইপিএলের পারফরম্যান্সের পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে মঈন আলীর ভূমিকায় এসেছে পরিবর্তন। তিনি বলেন, ‘আমি ইংল্যান্ডের হয়ে বোলিং করার তেমন সুযোগ পেতাম না সচারচর। আর ব্যাটিং পেতাম অনেক পরে। আমি আশা করি চেন্নাইয়ে হয়ে খেলে আমি যে পরিমাণ আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি তা দিয়ে ইংল্যান্ডের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারবো। আমি প্রত্যাশা করি ইংল্যান্ড দলও আমার উপর আস্থা রাখবে এবং আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো তাঁদের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার।’
তাঁর উপর ইংল্যান্ড দল আস্থা রেখেছেন তিনি সেই আস্থার প্রতিদনও দিয়েছেন যথাযথভাবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে মঈন নিজের লাইন লেইন্থের সাথে কন্ডিশনের সমন্বয়ে দলের হয়ে কার্যকারী ভূমিকা রেখেছেন ইনিংসের শুরুতেই বল হাতে। আশা করা যায় তিনি তাঁর ব্যাটেও আস্থার প্রতিদান দেবেন। অন্তত ইংল্যান্ড এমনটাই প্রত্যাশা করছে তাঁর থেকে।