আগ্রহের বৃত্তে কেন্দ্র ডি কক

টি-টোয়েন্টি  বিশ্বকাপ চলমান। নানান গল্পের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সব গল্প, সমালোচনা সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে একটি ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেট কিপার ব্যাটার কুইন্টন ডি কককে ঘিরে তৈরি হয় নতুন নিন্দার গল্প। সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়।

গত বছর থেকেই বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সোচ্চার পুরো বিশ্ব। সেই বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের এক প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে হাটু গেড়ে বসার দৃশ্য এখন খানিক পুরোনো রীতিতে পরিণত হয়েছে সময়ের সাথে। এই প্রতীকী প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় ডি কককে। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ড থেকে নির্দেশনা আসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচের পূর্বে হাটু গেড়ে বসে সংহতি জানাতে হবে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ এর স্বপক্ষে।

কিন্তু এই শারীরিক সংহতি জানাতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর বিপক্ষে ক্ষোভে ফেঁটে পড় দর্শক, সমর্থক থেকে শুর করে বোর্ড কর্তারাও। ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালার মতো ঘটনা ঘটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর খেলতে না নামার কিংবা একাদশে জায়গা না পাওয়ার ঘটনা। পরিশেষে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে ছাড়াই ম্যাচটি খেলতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাতে অবশ্য দলের আহামরী কোন ক্ষতি সাধিত হয়নি।

নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুবাইয়ের আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ১৪৪ রানেই আটকে দেয় উইন্ডিজদেরকে আটকে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররা। ডোয়েন পেট্রোরিয়াস, কেশভ মাহারাজ ও এনরিচ নরকের নিয়মিত বিরতিতে উইন্ডিজদের উইকেট তুলে নিয়ে আটকে ফেলেন। পরবর্তীতে এইডেন মার্করামের ঝোড়ো অর্ধশতকে ভর করে অনায়সে আট উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছারে প্রটিয়ারা।

অবশেষে সমালোচনার অবসান ঘটিয়েছেন ডি কক নিজেই। ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এবং বলেছেন সমর্থকদের কোন ভাবেই কষ্ট দিতে চাননি তিনি। এছাড়া তিনি আরো জানান তিনি  ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানাবেন। এতে করে পুনঃরায় দলে ডি ককের অন্তর্ভুক্তির এক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘যদি দল এবং অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা আমাকে দলে নিতে চায় তবে আমি আবার আমার সেরাটা দিতে চাই এই বিশ্বকাপে।

তবে প্রশংসা যদি করতেই হয় তবে তা প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা প্রাপ্য। কেননা তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথে এই কঠিন পরিস্থিতি সামলে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয়ে। তিনি হয়ত নতুন করে আবার প্রচেষ্টা চালাবেন দলকে গুছিয়ে নিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা অব্যাহত রাখতে। তাছাড়া তিনি হয়ত চাইবেন দলের সবাই বিতর্ক ভুলে আবার দল হিসেবে খেলবে পরবর্তী ম্যাচগুলো।

প্রথম ম্যাচে হেরে আত্মবিশ্বাসে খানিক আঘাত পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিতর্ক উপেক্ষা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় তুলে রয়েছে চাপমুক্ত। এছাড়াও প্রোটিয়াদের রয়েছে এইডেন মার্করাম, রেজা হেনড্রিক্স, রসি ভ্যান ডার ডুসেনদের মতো বিধ্বংসী, মারকুটে ব্যাটাররা। এছাড়াও ডেভিড মিলারের উপর যেকোন পরিস্থিতিতে আস্থা রাখতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরাই মূলত প্রোটিয়াদের আত্মবিশ্বাসের মূল চালিকা শক্তি। তাছড়া দলপতি টেম্বা বাভুমা নিশ্চয়ই চাইবেন ব্যাট হাতে নিজেকে স্বরুপে ফিরে পেতে।

তবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের চিন্তার কারণ হতে পারে লঙ্কান স্পিন জুঁটি ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মহেশ থিকসানা। তাঁরা দূর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন এবং আরব আমিরাতের উইকেটে এই জুঁটি প্রোটিয়া ব্যাটিং দূর্গে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সমানতালে পারদর্শী। অপরদিকে প্রোটিয়া বোলিং আক্রমণও গড়ে দিতে পারে পার্থক্য। উইন্ডিজদের বিপক্ষে তাঁদের ডানহাতি পেস বোলার ডোয়েন পেট্রোরিয়াস তিন উইকেট নিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়াও আফ্রিকার দলটিতে রয়েছে সেরা দুই ডেথ ওভার জুঁটি কাগিসো রাবাদা ও এনরিচ নরকে।

কিন্তু শ্রীলঙ্কান প্রতিভাবান ব্যাটারদের বিপক্ষে প্রোটিয়া স্পিনার কেশভ মাহারাজ ও তাবরাইজ সামসিকে জ্বলে উঠতেই হবে। লঙ্কান ব্যাটার চারিথ আসালাংকা রয়েছেন দারুণ ছন্দে। তিনি হতে পারেন প্রোটিয়া ম্যানেজমেন্টের চিন্তার বড় কারণ। তাঁর পাশাপাশি দলের অভিজ্ঞ উইকেট রক্ষক ব্যাটার কুশাল পেরেরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রানে ফিরেছেন। তিনিও হয়ে উঠতে পারেন বিধ্বংসী। শ্রীলঙ্কানদের চিন্তার কারণ হতে পারে তাঁদের ওপেনিং জুঁটির ধারাবাহিক ব্যর্থতা।

কিন্তু কেন জানি সব কিছু ছাপিয়ে ৩০ তারিখ, শনিবার শ্রীলঙ্কা-প্রোটিয়া ক্রিকেটীয় যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকান কুইন্টন ডি কক। তিনি দলে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে যেমন রয়েছে আগ্রহ। ঠিক তেমনি দলে জায়গা পেলে তিনি কেমন খেলেন তা নিয়েও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবেন সমর্থকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link