কাগজে কলমে একটু হিসাব এখনও বাকী আছে।
টানা তিন দূরন্ত জয় পাওয়া ইংলিশরা অবশ্য কাগুজে হিসেবের অপেক্ষা করছে না। গতকাল জশ বাটলারের দাপুটে সেঞ্চুরিতে লঙ্কানদের উঁড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে পা প্রায় দিয়েই ফেলেছে তারা। ইংল্যান্ড শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ২৬ রানে।
১৬৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই রান আউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন পাথুম নিসাঙ্কা। এরপর আসালাঙ্কা ব্যাট হাতে ছোট্ট ঝড় তুললেও আদিল রশিদের কাছে পরাজিত হয়ে ফিরেন তিনিও। ১৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান করেন আসালাঙ্কা। এরপর সম্ভাবনা দেখিয়েও ব্যক্তিগত ১৩ রানে ক্রিস জর্ডানের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে আউট হন আভিস্কা ফার্নান্দো। ৫৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে তখন শ্রীলঙ্কা।
১০ ওভার শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৬৬ রান! শেষ ১০ ওভারে দরকার ৯৮ রান। এই সমীকরণ সামনে রেখে এগারোতম ওভারে চার-ছয় মারলেও ক্রিস ওকসের শিকার হন ভানুকা রাজাপাকশে। ধীরে ধীরে লঙ্কানদের জয়ের আশাও ক্ষীন হয়ে যায়।
কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে হাসারঙ্গা ও দাসুন শানাকার ব্যাটে আবারো ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। গড়েন ৫০ রানের জুটিও! মাঝে টাইমাল মিলসের হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যায় বিপাকে পড়ে ইংলিশরা। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিলো ৪১ রানের। লিভিংস্টোনের করা ১৭ তম ওভারে ২১ বলে ৩৪ রান করে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে একদম সীমানায় ধরা পড়েন হাসারঙ্গা। পরের ওভারেই রান আউটের শিকার হয়ে শানাকা ফিরলে লঙ্কানরা ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। শানাকা ফেরেন ২৫ বলে ২৬ রানে! ওই ওভারের শেষ বলে আউট হন চামিরাও!
শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিলো ৩০ রান, হাতে মাত্র ২ উইকেট। ১৯ তম ওভারে বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশদের জয় এনে দেন মঈন আলি। ২৬ রানের জয়ে ইংলিশরা পৌঁছে যায় সেমিতে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারায় ইংলিশরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ব্যক্তিগত ৯ রানে ফেরেন জেসন রয়। এরপর দ্রুতই ফেরেন ডেভিড মালানও। ব্যক্তিগত ৬ রানে দুশমন্ত চামিরার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি। দুই বলের ব্যবধানে গোল্ডেন ডাকে আউট হন জনি বেয়ারস্টো। একপ্রান্তে বাটলার থাকলেও টপ অর্ডারের বাকিরা মুখড়ে পড়ে লঙ্কান বোলারদের সামনে। ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে তখন ইংলিশরা।
সেখান থেকে জশ বাটলারের সাথে সঙ্গি হন অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে দু’জনে। দ্রুত উইকেট হারানোয় অনেকটাই কচ্ছপ গতিতে রান তুলতে থাকে ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটার। ১০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তিন উইকেটে ৪৮ রান!
এরপর কিছুটা হাত খুলে খেলতে থাকেন বাটলার! তবে বলের সাথে ঠিক পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারছিলেন না। ১২ ওভারে দলের রান তখন ৬১। সেখান থেকেই ম্যাচের চিত্র পালটে দেন বাটলার। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে শারজাহতে হটাৎ ব্যাট হাতে তুলে ঝড়। লঙ্কান পেসারদের উপর তান্ডব চালিয়ে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। ইনিংসের শেষ বলে দরকার ছিলো ৫ রান! চামিরার ফুলটসকে সীমানা ছাড়া করে বাটলার তুলে নেন টুর্নামেন্টে এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরি।
৩৮ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকা বাটলার ইনিংস শেষ করেন ৬ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৭ বলে ১০১ রানে! আরেকপ্রান্তে ৩৬ বলে ৪০ রানের দারুন এক ইনিংস খেলে বাটলারকে সাপোর্ট দেন মরগ্যান। শেষদিকে মরগ্যান ফিরলেও বাটলার তুলে নেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। চতুর্থ উইকেটে দুজনে মিলে গড়েন ১১২ রানের অনবদ্য জুটি। বাটলারের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৩ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। লঙ্কানদের পক্ষে ওয়ানিন্দু হাসারঙ্গা নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ইংল্যান্ড – ১৬৩/৪ (২০ ওভার); বাটলার ১০১*(৬৭), মরগ্যান ৪০(৩৬), বেয়ারস্টো ৯(৬); হাসারঙ্গা ৪-০-২১-৩, চামিরা ৪-০-৪৩-১, থিকশানা ৪-০-১৩-০।
শ্রীলঙ্কা – ১৩৭/১০ (১৯ ওভার); হাসারঙ্গা ৩৪(২১), শানাকা ২৬(২৫), রাজাপাকশে ২৬(১৮), আসালাঙ্কা ২১(১৬); রশিদ ৪-০-১৯-২, জর্ডান ৪-০-২৪-২, ক্রিস ওকস ২.৩-০-২৫-১।
ফলাফলঃ ইংল্যান্ড ২৬ রানে জয়ী।