বিশ্বকাপের ফ্লপ একাদশ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রায় শেষের দিকে। সেমিফাইনাল শেষ। অপেক্ষার পালা এখন ১৪ নভেম্বরের ফাইনালের। সুপার টুয়েলভ পর্বে খেলেছে বারো দল। এই বারো দলের মধ্যে থেকে কেবল চারটি দলই সুযোগ পেয়েছে সেমিফাইনালে। বাকি বাদ পড়ে যাওয়া আট দলের মধ্যে যেমন রয়েছেন ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত থেকে শুরু করে নবাগত নামিবিয়া।

টানটান উত্তেজনা কিংবা ব্যর্থতার গল্পে ঠাসা। রেকর্ড গড়া কিংবা হতাশায় ডুবে যাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই ঘটেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের সুপার টুয়েলভ পর্যায়। সাফল্যের গুণকীর্তন পেছনে ফেলে আজকে তালিকায় থাকছে ব্যর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একাদশ। চলুন তবে দেখে আসি হতাশ করা খেলোয়াড়দের একাদশটা কি দাঁড়ায়।

  • ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

‘দ্য ইউনিভার্স বস’ খ্যাত ক্রিস গেইলের শেষ বিশ্বকাপটা ঠিক স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না এই তারকা ব্যাটার। টি-টোয়েন্টিতে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়া এই তারকার এবারের বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান বড্ড বেমানান তাঁর সাথে। তাঁর থেকেও বড় আক্ষেপের বিষয় সুপার টুয়েলভে তাঁর দল জিতেছে মোটে একটি ম্যাচ।

সুপার টুয়েলভে খেলা পাঁচ ম্যাচ শেষে গেইলের রান সংখ্যা মোটে ৪৫। ভাবা যায়! গড় নয়ের ঘরে, স্ট্রাইকরেট নব্বইয়ের ঘরে। এই পাঁচ ম্যাচে তিনি চার ও ছয় মেরেছেন সমান তিনটি করে। কিংবদন্তির বিদায় বেলায় কি এমন হতাশাজনক বৈপরীত্য়ে ইতি টানতে হলো। গেইলের এই হতাশাব্যঞ্জক পারফর্মেন্সের দরুণ তিনি জায়গা পাচ্ছেন ব্যর্থ একাদশের ওপেনিং এ।

  • কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা): অধিনায়ক

বর্ণবাদ বিরোধি আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানানো নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট কিপার ব্যাটার কুইন্টন ডি-কক। বিতর্ক যেন পুরোপুরি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল তাঁকে। বিতর্কের ইতি ঘটিয়ে দলে ফিরলেও তিনি তাঁর ফর্ম আর খুঁজে পাননি। তাঁর দলও বাদ হয়ে যায় সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকে। যদিও রানরেটের হিসেব নিকেশ তাঁদের বাদ পড়ার প্রধান নিয়ামক।

কুইন্টন ডি-ককের ব্যর্থতায় তিনি দায়িত্ব পাচ্ছেন ব্যর্থ একাদশের ইনিংস শুরু করবার। এই বিশ্বকাপে তিনি ম্যাচ খেলেছেন চারটি। ১৭.২৫ গড়ে রান করেছেন ৬৯টি। স্ট্রাইকরেটা রয়েছে একশ এর খানিক উপরে। আইপিএল এও ভাল পারফর্ম করা এই ব্যাটার হাঁকাতে পারেননি একটি ছক্কাও। পক্ষান্তরে তাঁর চারের সংখ্যা দশটি।

  • লিটন দাস (বাংলাদেশ): উইকেরক্ষক

প্রত্যাশার চাদরে মুড়ে আরব আমিরাত পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটার লিটন দাস। তবে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে তিনি নিজের সামর্থ্য প্রমাণে ব্যর্থ। বাছাই পর্বসহ লিটন দাস ম্যাচ খেলেছেন মোট আটটি। বাছাই পর্বে সহযোগী তিন দেশ স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির মত দল থাকা সত্ত্বেও নিজের ব্যাটিংটা ঠিক মেলে ধরতে পারেন নি।

লিটন সর্বোচ্চ রান করেছেন ৪৪ তাও মূল পর্বের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে তাঁর সেই মন্থর গতির চল্লিশ পার করা রান খুব একটা কাজে আসেনি দলের। আট ম্যাচ খেলে লিটনের গড় ১৬.৬২। ৯৪.৩২ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ১৩৩টি। চার ছয়ের সংখ্যা যথাক্রমে দশ ও এক। টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় ভরাডুবির কাতারে ফেলা যায় লিটনের এই পারফর্মেন্স। তাই ব্যর্থ একাদশের তৃতীয় ব্যাটার তিনি।

  • আভিস্কা ফার্নান্দো (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কান তরুণ ব্যাটার আভিস্কা ফার্নান্দোর উপর ছিল তাঁদের মিডেল অর্ডার সামলানোর দায়িত্ব। কিন্তু প্রচুর সুযোগ পাওয়া এই ব্যাটার হয়েছেন ব্যর্থ। করতে পারেননি সুযোগের সদব্যবহার। বাছাই পর্ব এবং সুপার টুয়েলভের ম্যাচ মিলিয়ে তিনি ম্যাচ খেলেছেন আটটি। বাছাই পর্বের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার টুয়েলভে পদার্পণ করা দলে ছিলো না আভিস্কার কোন অবদান।

আট ম্যাচের মধ্যে সাত ইনিংস ব্যাট করা আভিস্কার সংগ্রহ মোটে ৫২ রান। সর্বোচ্চ ৩০ রান করেছিলেন নামিবিয়ার বিপক্ষে। বাকি ছয় ম্যাচে পেড়োতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। দশের গড়ে স্ট্রাইক রেট প্রায় ৮৪। তিনি ব্যতীত ব্যর্থ একাদশের মিডেল অর্ডারের দায়িত্ব নেওয়ার মত খেলোয়াড়ের সংখ্যা অতীব নগণ্য।

  • রহমানুল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান) 

আরব আমিরাতের উইকেট বিবেচনায় আফগান ব্যাটারদের ভাল পারফর্মেন্সের প্রত্যাশা ছিল সমর্থক থেকে দর্শকদের। তবুও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে থেকে ব্যর্থ একাদশে জায়গা পাচ্ছেন মিডল অর্ডার ব্যাটার রহমানুল্লাহ গুরবাজ।

সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলা আফগানিস্তান দল জয় পেয়েছিল দুইটি। প্রতিপক্ষ যথাক্রমে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৪৬ রান ব্যতীত গুরবাজের বলার মত পারফর্মেন্স ছিলনা এই বিশ্বকাপে। তাঁর ব্যাটিং গড় মাত্র ১৭। ব্যাট চালিয়েছেন প্রায় ১২০ এর স্ট্রাইকরেটে।

  • আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

তারকায় ঠাসা উইন্ডিজ একাদশ যেন নুইয়ে পড়েছিল বয়সের ভারে। বয়স এবং ফিটনেসে কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। ব্যাটিং- বোলিং দুই সেক্টরেই নিষ্প্রভ ছিলেন এই দানবীয় ক্রিকেটার রাসেল। পাঁচ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন মাত্র ২৫ রান এবং উইকেট নিয়েছেন কেবল তিনটি। ব্যর্থ একাদশের প্রথম অলরাউন্ডার তিনিই।

  • আফিফ হোসেন (বাংলাদেশ)

ব্যর্থতার আঙ্গুল অনায়াসে তোলা যেতে পারে বাংলাদেশের ছয় নম্বর ব্যাটার আফিফের দিকে। শুধু যে ব্যাটিং নয় তিনি সমান তালে বোলিং টাও জানা আছে তরুণ এই ক্রিকেটারের। কিন্তু তিনি পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ব্যর্থ ছিলেন দুই সেক্টরেই।

আট ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ২১ রানে আফিফের মোট সংগ্রহ ৫৪। তাঁকে বোলিং করাতে কোন এক অজানা কারণে নিরুৎসাহিত ছিলেন অধিনায়ক। মাত্র দুই ইনিংস বল করে দেখেননি একটিও উইকেটের দেখা পাননি আফিফ হোসেন।

  • অ্যাডাম মিলনে (নিউজিল্যান্ড) 

নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণে রয়েছে টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ডের মতো পেস বোলারেরা। তবে দলের খানিক প্রত্যাশা ছিল অ্যাডাম মিলনে উপর। তাঁকে অবশ্যই ফেলা যায় এই  ব্যর্থ একাদশের পেস আক্রমণে। পাঁচ ম্যাচে মিনলে উইকেট নিয়েছেন সর্বমোট তিনটি। ৬.৯৫ ইকোনমি রেটে তিনি ছিলেন দলের দ্বিতীয় সেরা খরুচে বোলার।

  • দুশমন্থ চামিরা ( শ্রীলঙ্কা)

লাসিথ মালিঙ্গার অবসরের পর লঙ্কান পেস আক্রমণকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশার ভারে দুশমন্থ চামিরা ভুলে গিয়েছিলেন নিজের স্বভাবচারিত বোলিংটা ঠিক উপহার দিতে পারেননি দুশমন্থ চামিরা। ৮.৮২ ইকোনোমি রেটে রান দিয়েছেন ২৩৩টি। পক্ষান্তরে তাঁর উইকেট সংখ্যা সাতটি। আটটি ম্যাচে তাঁর হাতে দায়িত্বরুপে বল তুলে দিয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তিনি অধিনায়কের দেওয়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ব্যর্থদের একাদশের বোলিং আক্রমণে।

  • বরুণ চক্রবর্তী (ভারত)

কোলকাতা নাইট রাইডারের হয়ে ভাল একটি আসর পার করা বরুণ চক্রবর্তী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের আইপিএল পারফর্মেন্সের প্রতিফলন ঘটাতে। যার ফলস্বরুপ তিন ম্যাচে সুযোগ পাওয়া বরুণের উইকেট সংখ্যা শূন্য। রান দিয়েছেন ৭১টি। ব্যর্থ একাদশের স্পিনের দায়িত্ব পালন করবেন বরুণ চক্রবর্তী।

  • লাহিরু কুমারা ( শ্রীলঙ্কা) 

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে লিটন কুমার দাসের উইকেট নেওয়া বোলরটি ছিলেন লাহিরু কুমারা। তাঁর উপরে লঙ্কান পেস আক্রমণের গুরুদায়িত্ব থাকলেও তিনি প্রত্যশা মেটাতে হয়েছেন ব্যর্থ। ওই এক লিটন দাসের উইকেট ছাড়া সুপার টুয়েলভে নেই আর কোন উইকেট। সাত ম্যাচ খেলা লাহিরু কুমারা রান দিয়েছেন ১৯৪, ইকোনমি রেট সাতের ঘরে। মোট আট উইকেট নেওয়া লাহিরু কুমারাকে দিয়েই শেষ হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের ব্যর্থদের একাদশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link