চলতি বছরের প্রথম ভাগে ভারতীয় দলে আবির্ভূত হয়েছিলো বেশ কিছু নতুন মুখ। তরুণ ঋষাভ পান্তের সাথে দেখা গিয়েছিলো ওয়াশিংটন সুন্দর, মোহাম্মদ সিরাজ, ঈশান কিষাণদের। যারা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্স। এই তরুণ তারকারা উঠে এসেছিলেন ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (এনসিএ) থেকে। লম্বা সময় ধরেই জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়।
এতোদিন পেছনে কাজ করলেও এখন তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন জাতীয় দলের কোচের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভরাডুবির পরই দায়িত্ব নিয়েছেন দ্রাবিড়। কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রাবিড় বলেছিলেন, ‘কোচ হিসেবে আমি মনে করি আমি যেমন কোচ ছিলাম তেমনি ভাবে তাঁদেরকে কোচিং করাতে পারবো না। আমাকে আমার কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাকে আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে সিরাজের শেষ উইকেট শিকারে ভারতের জয় পাওয়ার পর ভারতের বর্তমান বোলিং কোচ পরশ মামব্রে বলেছিলেন, ‘এটা সত্যি দারুণ যে আমরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে সঠিক পথেই এগোচ্ছি। আমরা চেয়েছিলাম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আগে তাদেরকে গড়ে তুলতে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আনতে।
‘ক্রিকেটারদের মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্রিকেটারদের শক্তিমত্তা ও দূর্বলতা গুলো নিয়ে কাজ করতে চান বর্তমান কোচিং প্যানেল। নজরে রাখা হবে ক্রিকেটারদের সবকিছুই।
বর্তমান এই বোলিং কোচ বলেন, ‘আমরা এনসিএ তে যেটা করেছি অনূর্ধ্ব ১৯ ও ভারত ‘এ’ দলের জন্য সেটায় আমরা ক্রিকেটারদের শক্তিমত্তা বাড়িয়ে আরো পরিপক্ক করার চেষ্টা করেছি। বর্তমান প্রধান কোচ দ্রাবিড় সব ক্রিকেটারদের সাথেই তাদের পরিসংখ্যান, শক্তিমত্তা ও দূর্বলতার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে সেগুলোর দিকে নজর দিবেন। অনুশীলনে কত বল খেললো একজন ব্যাটার, কত বল করলো একজন ব্যাটার এগুলোরও তালিকা করা হবে। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বিশ্বাস জয় করা। তাই আমরা এই বিষয়গুলোতে নজর দেবো। শুধু যে ক্রিকেটেই আমরা ফোকাস করবো তা নয়, কিছুটা তাদের পরিবার এবং আনুষঙ্গিক ব্যাপারেও দেখবো। পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুযায়ী তাদের মন বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে তারা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো তার উপর কোন জিনিসটা কাজ করবে। তাঁদেরকে আমরা অপশন দিবো, তারা তাদের মতো সঠিকটা বেছে নিবে।’
প্রধান কোচ হবার পর থেকেই খেলোয়াড়দের সাথে নিবিড়ভাবে মেশার চেষ্টা করছেন দ্রাবিড়। খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য তিনি খেলোয়াড়দের ফোন করেছেন, কথা বলেছেন, নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। এরপরই জয়পুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে খেলোয়াড়দের নিয়ে নেমেছেন অনুশীলনে।
- পেসারদের নিয়ে পরিকল্পনা
সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে খেলার মাধ্যমে তরুণরা যাতে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে সেটিই ভাবছে বর্তমান কোচিং প্যানেল।
মহামব্রে বলেন, ‘এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটা ভাবনা সে ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ শামির মতো সিনিয়ররা কতদিন সার্ভিস দিতে পারবে। তরুণ ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে কতটা সময় লাগবে। সিরাজ এবং শার্দুল অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে। নতুনদের মধ্যে আভেশ, সাইনি, দীপক চাহার আছে। আমাদেরকে প্রতি সিরিজেই টিম কম্বিনেশনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে সিনিয়রদের সাথে একজন জুনিয়র অন্তত চান্স পায় এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।’
- অলরাউন্ডারদের বিশ্বাস অর্জন
কপিল দেবের পর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে পেস বোলিং অলরাউন্ডার সংকটটা ছিলো। হার্দিক পান্ডিয়া সম্ভাবনা দেখালেও ইনজুরি আর অধারাবাহিকতায় তার এখন দলে থাকাই দায়। মামব্রে বলেন, ‘এটা সবসময়ই খুঁজে আসছি আমরা। দলকে ব্যালেন্স করতে একজন অলরাউন্ডার সত্যি দরকার। ইনজুরি সমস্যায় অনেকেই দুটোর একটা বেছে নেয়। হয় বোলিং নয়তো ব্যাটিং। তবে আপনাকে তাদের সেই বিশ্বাসটা অর্জন করতে হবে। এবং ফার্স্ট বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে উঠতে পরিপূর্ন সহযোগিতাটাও করতে হবে।’
জেনুইন পেস অলরাউন্ডার হিসেবে কাউকে গড়ে তুলতে রাহুল দ্রাবিড় এবং বাকি কোচিং প্যানেল সেরাটা দিবেন বলে মনে করেন মামব্রে।