সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিসিবি একাডেমী মাঠে অনুশীলন করার কথা ছিল পাকিস্তান দলের। পাকিস্তান দলকে একটু কাছ থেকে দেখতে ১ নম্বর গেটের পাশে পথচারীদের জটলা, নিরাপত্তার বেড়াজাল, দল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের আনাগোনা কিংবা পাশাপাশি দেখা গেল স্টেডিয়ামে দর্শক ফেরানোর প্রস্তুতি। ফলে অনেকদিন পর সকাল সকাল মাঠে গিয়েই দেখা গেল সেই চেনা মিরপুর, চেনা হোম অব ক্রিকেট।
পাকিস্তান দলের অনুশীলন দেখার জন্য এই শীতের সকালে মোটামুটি কাক ডাকা ভোরেই বের হতে হলো। শীতের সকাল বলে একটু মন খারাপও হলো বটে। তবে সেটা আর বেশিক্ষণ রইলো না। স্টেডিয়ামের এক নাম্বার গেট দিয়ে মাঠে ঢুকতেই দেখা গেল বা পাশের একাডেমি মাঠে নিবিড় অনুশীলনে মগ্ন মোহম্মদ রিজওয়ান। পুরো পাকিস্তান দল তখনো অবশ্য স্টেডিয়ামের মূল মাঠে ফিল্ডিং অনুশীলনে ব্যস্ত।
ফিল্ডিং নিয়ে যেনো একটু বেশি মনোযোগী বাবর আজমের দলটা। হাসান আলো একাডেমী মাঠেও বেশ কিছুক্ষণ একাই হাই ক্যাচ ধরার চেষ্টা করলেন। এরপর পুরো দলই একাডেমী মাঠে ব্যাটিং, বোলিং অনুশীলন করা শুরু করলো। রাস্তার পাশটাতে আবার সাদা প্যান্ডেল করে দিয়েছে বিসিবি যেনো বাইরে থেকে দেখা না যায়।
তবুও রিজওয়ানদের ব্যাটিং দেখতে কেউ দেয়াল উপর দিয়েই উকি দিচ্ছেন। একটু পরপর পুলিশের লোকেরা আবার লাঠি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। তবুও যেনো পথচারীদের আগ্রহ কমে না। মোটামুটি বয়স্ক একজন তো প্রায় গ্রিলের উপরে উঠেই বসেছেন। দূর থেকে তাঁকে বললাম পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবেন যে! তিনি জানালেন বাবর আজমের ব্যাটিংটা একটু দেখতে চান। তাঁকে জানালাম বাবর আজম তো সকালেই ঢাকা এলেন। আজ অনুশীলনে আসেননি। তিনি খানিক মুখ গোমরা করে বললেন,’ তাহলে কাল আসবনে বাবা।‘
এই মানুষ গুলোর উন্মাদনায়ই তো মিরপুরের চিরচেনা রূপ। অনেক দিন পর সত্যিই আবার মিরপুরে মানুষ ফিরছে। এই সিরিজে হয়তো কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে দর্শকদের মাঠ থেকে খেলা দেখার সুযোগ করে দিবে বিসিবি। সেটার জন্যেও স্টেডিয়ামে চলছে জোর প্রস্তুতি। এছাড়া স্পন্সরদের বিশাল বিশাল ব্যানার তৈরির কাজও চলছে প্লাজায়।
ওদিকে সিরিজ শুরু হতে বাকি নেই আর দুইদিনও। তবুও দল ঘোষণা নিয়ে বাতাসে নানারকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। আগে থেকেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল মুশফিক থাকছেন না টি-টোয়েন্টি সিরিজে। এরমধ্যে সকাল থেকে একটা কথা মিরপুরের বাতাসে ঘুরঘুর করছিল। শোনা যাচ্ছিল অধিনায়ক রিয়াদকেও হয়তো না দেখা যেতে পারে এই সিরিজে।
সবমিলিয়ে মিরপুরের আকাশ আর দশটা শীতের সকালের মতই ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। আস্তে আস্তে আকাশ পরিষ্কার হয়ে সূর্য উঁকি দিতে শুরু করলো। মাঠে সাংবাদিকদের আনাগোনা বাড়লে। ঢেলে সাজানো টি-টোয়েন্টি দল কেমন হবে তা নিয়ে চলছিল ব্যাপক আলোচনা। একাডেমী মাঠ, প্লাজা, প্রেস বক্স, গ্যালারি সবখানেই এক চাপা উৎকণ্ঠা। সবার মনেই নানারকম প্রশ্ন।
এরমধ্যেই গ্যালারি থেকে চোখে পড়লো আরেকটি দৃশ্য। সব ক্যামেরা তাক করলো সেদিকে। প্রধান নির্বাচকদের সাথে খালেদ মাহমুদ সুজনকে দেখা গেলো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মগ্ন হতে। তখনই মাঝ মাঠ থেকে গ্যালারির দিকে ছুটে এসে সেই আলোচনায় যোগ দিলেন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। বুঝতে বাকি রইলো না দল নিয়ে শেষ মুহূর্তের আলোচনাটাই করছেন তাঁরা।
সবমিলিয়ে অনেকদিন পর একটা সরগরম হোম অব ক্রিকেট দেখা গেল। মাঝে বিশ্বকাপের সময়টায় কয়েক দফা স্টেডিয়াম যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় মাঠটা কেমন যেন একটা হাহাকার করতো। যেনো ঠিক প্রাণটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা মনে হতো। কোভিড ১৯ নামের অভিশাপ ছেয়ে গিয়েছিল মিরপুরের মাঠ কেও। অনেকদিন পর আবার সেই উত্তাপটা টের পাওয়া গেল, প্রাণটা খুঁজে পাওয়া গেল, বুকের মাঝ দিয়ে একটা হিমশীতল বাতাস বয়ে গেল।