২০১৯ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দল যখন ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে আয়ারল্যান্ডে গেলো, তখনও এই দুনিয়া করোনা ভাইরাসের নাম শোনেনি।
এরপর গত দুই বছরে পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা; সবকিছু আক্ষরিক অর্থে বদলে গেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা এক কেন্দ্র থেকে আরেক ভরকেন্দ্রে চলা শুরু করেছে। অর্থনীতি প্রবল এক ধাক্কা হজম করে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। নানারকম নতুন আইন কানুনের মধ্যে শুরু হয়েছে খেলাধুলা। কয়েক লাখ মানুষ এই সময় করোনা ভাইরাসের কারণে প্রাণ হারিয়েছে।
বলা যায়, পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু একটা জিনিস বদলায়নি-এখনও রিজার্ভ বেঞ্চেই বসে আছেন ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি।
রাব্বি একটা বিশ্বরেকর্ড করে ফেললেন কি না, কে জানে। অভিষেকের অপেক্ষায় সবচেয়ে বেশি সময় জাতীয় দলের সাথে থাকার রেকর্ড কী তাঁর?
হলেও হতে পারে।
গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভলিবলটা খুব জমে উঠেছিলো। একটা স্ম্যাশ সামলাতে শরীর শূন্যে ছুড়ে দিলেন রাব্বি। তখন তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই এক দারুণ অপেক্ষার ক্ষত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
অবশ্য রাব্বির সঙ্গে দু একবার এ নিয়ে যা কথা হয়েছে, তাতে রাব্বি কখনোই আফসোস করেননি। তিনি বরং অপেক্ষায় আছেন যেদিন সুযোগ পাবেন, সেদিন যেনো সেরাটা দিতে পারেন।
ওয়ানডে দলে সবার আগে ডাক পেয়েছেন। এরপর টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ক্লোজ ইন ফিল্ডার হিসেবে মাঠেও নেমেছেন কখনো কখনো। কিন্তু ম্যাচটাই যা খেলা হয়নি। একটু তথ্য ঘুটলে আমরা দেখতে পাবো, রাব্বি প্রথম দলে ডাক পাওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে ৩ জন টেস্ট খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়ে গেছে। এ ছাড়া ৬ জন ওয়ানডে ও ১০ জন টি-টোয়েন্টি অভিষিক্ত হয়েছেন এই সময়ে। কিন্তু রাব্বির কপালটা খোলেনি।
তবে রাব্বি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতে একটা ক্ষতি অবশ্য হচ্ছে। রাব্বির কোনো ধরণের খেলাই হচ্ছে না। জাতীয় দলের সাথে সাথে ঘুরতে গিয়ে জাতীয় লিগ সহ বিভিন্ন ঘরোয়া ক্রিকেট মিস করছেন। আবার জাতীয় দলেও ম্যাচ পাচ্ছেন না। ফলে বসে থাকতে থাকতে এই মারকুটে ব্যাটসম্যানের জং ধরে যাওয়ার একটা ভয় তো থাকেই।
তবে রাব্বি এবার একটা আশার আলো দেখতে পারেন।
এই চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টে একজন ক্রিকেটারের অভিষেক হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেই এই টেস্টে। ফলে একজন নতুন কেউ সুযোগ পাবেন। সেটা রাব্বিই হতে পারেন। কারণ তিনি লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে পারেন। আর তেমনটা হলে দুই বছরের একটা প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।
এতোদিন অপেক্ষা করার পর চট্টগ্রামে নিজের দর্শকের সামনে অভিষেক হয়ে গেলে, তার চেয়ে বড় আনন্দের আর কী আছে!
অন্তত প্রতীক্ষাটার তো শেষ হবে!