তোমাদের হারিয়ে কি পেলাম!

৬৭২ এবং ৪৫০। দুইটি ভিন্ন সংখ্যা, জড়িয়ে আছে দুইটি ভিন্ন মানুষ, দুইটি ভিন্ন অধ্যায় এবং সর্বকালের সেরা দ্বৈরথের। যে দ্বৈরথের জ্বর ছড়িয়েছে বিশ্বের প্রতিটা কোণায়। যেই দ্বৈরথের কল্যাণে মানুষ নতুন করে ভালবাসতে শুরু করেছে ফুটবলকে, নতুন করে আদর্শের প্রতীক বানিয়েছে। ফুটবলের মহাকালের শ্রেষ্ঠ দ্বৈরথের শীর্ষের দিকে থাকা লড়াই। সংখ্যাগুলো যথাক্রমে লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর লা লিগায় করা গোলের পরিসংখ্যান।

এই দুইজনের লড়াই, এই দুইজনের ফুটবলীয় নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া যেতো ফুটবলের গভীর অতলে। কতশত স্মৃতি, কতশত মুহূর্ত এখনো মনে গহীন কোণ থেকে উঁকি দিয়ে বার্সেলোনা কিংবা রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের জানান দেয়, ‘হ্যাঁ, তুমিই এসব কিছুর সাক্ষী।’

দশ নম্বর জার্সি পরে রক্ষণ চেড়া সেইসব দৌড় কিংবা প্রায় মিটার খানেক উঁচুতে উঠে সাদা রঙ্গের জার্সির পেছনে সাত নম্বর নিয়ে শূন্যে ভাসা এক একটি হেড। ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ!

এসব কিছু এখন অতীত। দল ছেড়ে অন্য ঠিকানায় এখন দু’জন। রিয়াল তাঁদের অন্যতম সেরা তারকাকে হারিয়ে ধুকেছিলো সেই ২০১৮তে আর বার্সেলোনা এখন ধুকছে, নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। হিসেবের গড়মিল হচ্ছে, প্রত্যাশিত জয় ধারণ করছে অন্যরুপ।

চার মাস হতে চলেছে মেসি ২০ বছরের বন্ধন ছিঁড়ে পাড়ি জমিয়েছেন প্যারিসে। দারুণ বিপাকে তাঁর সাবেক ঘর, তাঁর শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা। স্প্যানিশ লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁদের দাপট যেন ফিকে হয়ে গেছে সন্ধ্যের আলোর মতো।

বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা চলে গেলে সৃষ্টি হয় এক সমুদ্র সমান শূন্যতার। যেমনটা দেখেছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। মেসিতে ঢাকা পড়ে যেতো বার্সার রক্ষণ দূর্বলতা, সেই সাথে আক্রমণের অপ্রতুলতা। এখন যখন মেসি নেই তখন কাতালান ক্লাবটির এসব দূর্বলতা যেন সামনে এসেছে ঘন মেঘ চিড়ে আসা আলোর মতো। এমন পরিস্থিতি যে লিগে বার্সেলোনার অবস্থান সপ্তম। মোট পয়েন্ট ২৩। সমস্যাটা হলো এই পয়েন্ট এসেছে ১৫ ম্যাচ থেকে। লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দী রিয়ালের থেকে পয়েন্টের ফাঁরাক ১৬ পয়েন্টের।

রোনালদো চলে যাবার পর রিয়ালও বিরুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। তবে সেই সময়ে রিয়ালের রক্ষণ ছিল বেশ জমাট আর মধ্যমাঠ ছিল চৌকস। উদীয়মান তারকাদের সাথে নিয়ে আক্রমণটা ঠিকঠাক সামলে নিচ্ছিলো করিম বেনজেমা। তাতে ১৫ ম্যাচ শেষে রিয়াল লিগে রিয়ালের পয়েন্ট ছিল ২৬, অবস্থান করছিলো চতুর্থস্থানে।

বার্সা বোর্ড কর্তৃপক্ষ আক্রমণে শূন্যতা পূরণে দলে ভিড়িয়েছিলেন মেমফিস ডিপাই ও সার্জিও আগুয়েরোর মতো খেলোয়াড়দের। তবে তাতে খুব একটা বেশি উপকার হয়েছে তা বলা দুষ্কর। ১৫ ম্যাচে মাত্র ২৫ বারে প্রতিপক্ষের জালের দেখা পেয়েছে বার্সেলোনার আক্রমণভাগ। পক্ষান্তরে ১৯ গোল হজম করছে কাতালান রক্ষণ।

তবে এই মৌসুম সবচেয়ে দুঃখজনক স্মৃতি হয়ে হয়ত রবে বার্সেলোনার। কেননা দীর্ঘ ২১ বছর পর বার্সেলোনা বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে। ঘটনাটা মেসির ক্লাবের সাথে যুক্ত হবার আগের। অন্যদিকে রোনালদো যখন রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যান সেই মৌসুমে রিয়াল অন্তত পার করেছিলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব। যদিও দ্বিতীয় রাউন্ডে সে মৌসুমের দারুণ ছন্দে থাকা ডাচ ক্লাব আয়াক্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিলো রিয়াল।

বার্সেলোনা তাঁদের লিগ কোন পজিশনে থেকে শেষ করবে তা বলা মুশকিল। কেননা লিগ যে এখনও বাকি অর্ধেকের বেশি। রোনালদো বিচ্ছেদের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ তৃতীয় অবস্থানে থেকে শেষ করেছিল তাঁদের লা লিগা মৌসুম। তবে বাদ পড়ে যায় কোপা দেল রে থেকে বার্সেলোর কাছেই সেমিফাইনালে হেরে।

কোচ জাভির কাছে এই একটি মাত্র দোর খোলা রয়েছে। সেখানটায় একটি শিরোপা জিতে অন্তত একটু মানসিক স্বস্তি নিয়ে নতুন করে নতুন মৌসুমের জন্যে পরিকল্পনা সাজাতে চাইবেন কাতালান ক্লাব কিংবদন্তি জাভি এর পাশাপাশি ইউরোপা লিগটাও নিশ্চয়ই জিততে চাইবেন তিনি। এখন বাকিটুকু সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link