মন্তব্য নয়, ময়নাতদন্ত হবে

ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় কথার ময়নাতদন্ত হচ্ছে। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল এসবই এখন চর্চার বিষয়। তবে এই কথা, বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার স্বপক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোন পক্ষেই কোন নতুন বক্তব্য দিতে রীতিমত অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিরেকট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সভাপতি ও সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি।

একটু জেনে নেওয়া দরকার কেন সরগরম ভারতের ক্রিকেট অঙ্গন, কি এমন ঘটলো? খুব গুরুতর কিছু নয় আবার বেশ সাংঘাতিক গুরুতর। বিষয়টা আপেক্ষিক। ঘটনার একটা যোগসাদৃশ্য আছে ভারতের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বের রদবদলের সাথে।

খুব একটা ভেঙে বলার বোধকরি আর কিছু বাকি নেই। তবুও বলি, ভারতের সদ্য সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বিরাট কোহলি বেশ আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ছেড়ে দেবেন দায়িত্ব। অবশ্যই প্রশংসনীয়। ফলাফল না আসলে পদ ছেড়ে দেওয়া মহৎকর্ম।

কিন্তু আসল সমস্যাটা বাঁধলো যখন বিরাট ওয়ানডে অধিনায়কের পদ ছাড়তে ইতস্তত বোধ করলেন। কেননা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সাদা বল ফরম্যাটে একজন অধিনায়াক রাখার পক্ষপাতি। সুতরাং বিরাটকে ছেড়ে দিতে হলো ওয়ানডে অধিনায়কত্ব। কিন্তু ভক্ত-সমর্থকরা খানিক রেগে গেলেন।

এ সময়ের অন্যতম সেরা তারকার এমন অপমান তাঁরা ঠিক ভাল চোখে দেখলেন না। সেই সমর্থকদের ঠান্ডা করতেই কিংবা বল নিজের কোর্ট ছাড়া করতে বোর্ড প্রসিডেন্ট সৌরভ মন্তব্য করলেন যে তিনি নাকি বিরাটকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে সড়ে না দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলেন। এ অবধি সব ঠিকঠাক।

সমস্যার আরেকটু মোড় নিতে শুরু করলো। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে ভারত। সেখানে প্রথমে টেস্ট সিরিজ, যার নেতৃত্ব দেবেন বিরাট কোহলি। স্বাভাবিক। তিনিই তো টেস্ট অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্যে অধিনায়কের সাথে সাংবাদিকদের এক ভার্চুয়াল আলাপনের পথ সৃষ্টি করে দেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, বিসিসিআই। সেখানে বিরাট মন্তব্য করে বসলেন যে তাঁকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছেড়ে না দেওয়ার জন্যে কোন প্রকার অনুরোধ করা হয়নি৷ লেগে গেলো গণ্ডগোল।

তাছাড়া বিরাট আরো খোলাসা করেছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ খেলতেও তিনি প্রস্তুত। বলে রাখা ভাল গুঞ্জন উঠেছিলো ব্যক্তি কারণ দেখিয়ে ওয়ানডে সিরিজ খেলবেন না বিরাট। তবে তিনি তা মানতে নারাজ। এতে মেলবন্ধনের সেতুতে কিছুটা ভাঙন আন্দাজ করা খুবই সোজা। যেহেতু ‘পোস্টার বয়’ বিরাট বোমা ফাটিয়ে গিয়েছেন। সুতরাং বোর্ড সভাপতিও এবার হয়ত ছুড়ে মারবেন পালটা বোমা। কিন্তু না তা হলো না।

বিসিসিআই সভাপতি বললেন, ‘কোন মন্তব্য নয়, কোন সংবাদ সম্মেলন নয়। আমরা আমাদের মতো করে বিষয়টা সামলে নেবো, এসব কিছু বিসিসিআই-এর উপর ছেড়ে দিন।’ এতে বোর্ড সভাপতি আর জল ঘোলা না করবার এক সিধান্ত স্পষ্ট৷ তাছাড়া আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরই অংশ। তাই বেফাস কোন মন্তব্য করতে নারাজ সৌরভ। এতে করে দলে মানসিকতায় প্রভাব পড়তে পারে তা বেশ ভাল করেই জানেন তিনি।

তবে তোরজোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ একজন ক্রিকেটার এমন বোর্ড বিরোধি মন্তব্য করতে পারেন না। সাধারণত এমনটাই হয়ে থাকে। এখন জনসম্মুখে ভেতরের কথা বাইরে না এনে কি করে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সলাপরামর্শ করেছেন বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা মারফত জানা গেল এ তথ্য।

সেই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে কি করে এমন সেনসিটিভ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়, কেননা এতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির সম্মানও জড়িয়ে আছে৷ বিসিসিআই জানে একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজ সন্নিকটে। এমতবস্থায় হুটহাট কোন সিধান্ত নিয়ে নেওয়া কিংবা মন্তব্য করা দলের মানসিকতার প্রভাব ফেলতে পারে।’

সুতরাং বোঝা যায় বিসিসিআই একটু ধীরেসুস্থে পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে। তাছাড়া বিরাট কোহলি এ সময়ের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা, ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয়। তাঁর বিরুদ্ধে যেকোন সিধান্তের ফলাফল ভিন্নখাতে প্রভাবিত হতে পারে। অতএব এর একমাত্র সমাধান হতে পারে মুখোমুখি আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসা। তা না হলে কলুষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link