বাউন্সি ও দ্রুতগতির উইকেটে অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ৩৭ কোটি রুপি খরচে ড্রপ-ইন পিচ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিসিবি। এই ড্রপ-ইন পিচটা আসলে কি?
ড্রপ-ইন পিচ বলতে আসলে বোঝায়, বাইরে থেকে পছন্দমতো চরিত্রের উইকেট বানিয়ে সেটা মাঠের মধ্যে পিচের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া। ড্রপ ইন পিচ মূলত ব্যবহার হয় সাধারনত একটা মাঠে যখন অনেক রকমের স্পোর্টস ইভেন্ট আয়োজন সেই ক্ষেত্রে। যেমন অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে অনেক গুলো মাঠেই ড্রপ ইন পিচ রয়েছে। এমসিজি, অ্যাডিলেড, পার্থের মতো স্টেডিয়াম এই ধরনের পিচে খেলা হয়। অফ সিজনে এই পিচ তুলে নেয়া হয়, তখন এমসিজিতে রাগবি, ফুটবল ম্যাচ আয়োজন হয়।
এটা মূলত ২৪ মিটার লম্বা হয়, ২০ সেমি পর্যন্ত গভীর থাকে। যেখানে কালো মাটির ওপরে গ্রিন লেয়ার দেয়া হয়। টিনের একটা স্টিলের ফ্রেমে বানানো হয় এই পিচ৷ অনেকটা বাসায় তৈরী কেক যেমন ফ্রেম থাকে তেমন। মাঠের যে কোনও অংশে নির্দিষ্ট গর্তে এটা বসানো যায়। আবার খেলা শেষে এটা তুলে এই জায়গায় টার্ফ বসিয়ে রাগবি কিংবা অন্য খেলা আয়োজন করা হয়।
এই পিচের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে পিচ তৈরি করে আনতে পারবেন। কিউরেটররা যেটা চাইলেই সব সময় ন্যাচারাল যেটা করতে পারেন না। তো এটা কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো দ্রুতগতির উইকেট পাওয়া সম্ভব। যেটা পাকিস্তান চাচ্ছে।
পিসিবির ক্রিকেট উন্নয়নের অংশ হিসেবে নেওয়া নানান পদক্ষেপের অন্যতম এই ড্রপ-ইন পিচ ব্যবহার।করাচি ও লাহোরে বসানো হবে দুইটি ড্রপ-ইন পিচ। যার জন্য খরচ হবে ৩৭ কোটি রুপি।
রমিজ রাজা বলেছেন, ‘এসব ড্রপ-ইন পিচ আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড়দের অনেক সাহায্য করবে। ঐতিহ্যগতভাবেই আমরা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বাড়তি বাউন্সে খাবি খাই। যে কারণে প্রতিভা থাকার পরেও অস্ট্রেলিয়ায় আমরা কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে পারিনা।’
টুইটারে পাকিস্তান কমিউনিটিতে এটা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। অনেকের মতে টাকার অপচয়৷ এই ড্রপ ইন পিচে অস্ট্রেলিয়ার খুব লাভ করতে পারছে এমন না। এটার ব্যাখ্যাও সঠিক। এই ধরনের পিচ গুলোর কিছু সমস্যা আছে। আপনি সাধারন টেস্ট গুলোয় দিনের যাওয়ার সাথে সাথে যে ক্র্যাক দেখতে পাওয়া যায়, এই ধরনের ড্রপ ইন পিচে সেটা হয় না। যেহেতু এটা একটা ফ্রেমের মধ্যে তৈরী হয় গোটা উইকেট। এটা অনেক বেশি টাইট থাকে, বেশি শক্ত হয়। তাই উইকেট বলতে গেলে ভাঙ্গেই না। দেখা যায় প্রথম দিনেও যেমন উইকেট, পঞ্চম দিনের উইকেটের আচারন তেমন থাকে।
২০১৭-১৮ অ্যাশেজে এমসিজিতে পাঁচ দিনে উইকেট পড়ে মাত্র ২৪ টা। আইসিসি থেকে উইকেটকে পুওর রেট করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার খেলা যার অনেক আগে থেকে ফলো করেন।তার শেষ ৫/৬ বছরে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটের আচারন দেখলেই বুঝবেন এটা সেই আগের মতো টিপিক্যাল উইকেট না। আগের সেই পেস বাউন্স কিছুটা হলেও লোপ পেয়েছে। এটার বড় কারণ হল – অনেকগুলো স্টেডিয়ামে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করাটা।
তারপরও পাকিস্তান যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমি মনে করি সিদ্ধান্তটা খারাপ না। এতে আর কিছু না হলেও ব্যাটাররা উইজটু হবে কিছুটা হলেও। বাইরে গেলে তাদের ব্যাটারদের যা দশা হয়। সামনে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) এমন উইকেটে কিছু খেলা হতে পারে। এতে করে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও ভালো হবে।
বাংলাদেশে বসে এগুলোর ভালো মন্দ আলাপের চেয়েও মন খারাপটা বেশি হচ্ছে। ভালো হোক আর খারাপ হোক পাকিস্তান বোর্ড ৩৭ কোটির একটা প্রোজেক্ট নিছে তাদের ভালো হবে ভাইবে। সেখানে ৯০০ কোটির মালিক আমাদের বোর্ড তো ৩৭ কোটি টাকা জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলো সংস্কার দূরে থাক, এত টাকা তো জেলা পর্যায়ের কাঠামো ঠিক করতেও ব্যবহার করে না। আমরা কোনও কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে নিছি শেষ ৫/৭ বছরে?
আর পিচ নিয়ে ভাবনা চিন্তা তো বাদই দিতে হয়। তারা উপায় খুঁজছে কিভাবে তাঁদের ব্যাটারদের ঐ কন্ডিশনের জন্য প্রস্তুত করে। আর আমরা চিন্তা করি কিভাবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলকে হারাইতে পারি মনের মতো পিচ বানায়ে। আমাদের দেশে ক্রিকেটে নিয়ে উন্নয়নমূলক কোন চিন্তা ভাবনাই নাই৷