বঞ্চনার প্রিমিয়ার লিগ

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা শেষ হলো এখনো একমাসও হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেই দলটা টি-টোয়েন্টি খেললো তাঁদের কী করে আমরা ভুলে গেলাম। এখনো তো হারের ক্ষতও শুকায়নি। জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ সিরিজেও যারা খেলেছেন সেই ক্রিকেটারদের কী করে ভুলে যায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এ কী অদ্ভুতুড়ে কান্ড!

বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন লেগ স্পিনারের খোঁজ চলছে বহুদিন ধরেই। মাঝে এক জুবায়ের হোসেন লিখনকে পাওয়া গিয়েছিল। একেবারে খারাপ করছিলেন তাও না। তবে তাঁকে আন্তর্জাতিক মানের বোলার হিসেবে গড়ে তোলা গেল না। লিখন আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলেন। এরপর আসলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। বিপ্লব এখনো জাতীয় দলের বিবেচনায় থাকেন।

এমনকি এবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রথমে বাংলাদেশ দলে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে ছিলেন। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তো ম্যাচও খেললেন। সেখানে নজরাকাড়া কিছু করতে পারেননি সত্যি। তবে এমন খারাপ কিছুও করেননি যে এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার বিপিএলে একটা দল পাবেন না। অথচ কিছুদিন আগেও বিসিবি সভাপতি ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের আরো বেশি ম্যাচ খেলানোর কথা বলছিলেন। অবশ্য অনেকদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা লিখন দল পেয়েছেন আজ।

শুধু লেগ স্পিনার কেন? বিপিএলে তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের দলে ভিড়াতেও ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোর অনীহা। বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্রুত রান তুলতে পারে এমন একজন ওপেনার খুঁজছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য এমন ওপেনার প্রস্তুত করতে তো বিপিএলেই সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তো আর কোন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও নেই।

এবছর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল)ওপেনিং পজিশনে নতুন কয়েকজন ভালো ব্যাটিং করেছেন। মুনিম শাহরিয়ার এই আসরে আবাহনীর হয়ে ১৪ টি ম্যাচ খেলেছিলেন। সেখানে প্রায় ৩০ গড়ে করেছেন ৩৫৫ রান। তারচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে ওই আসরে অন্তত ৩০০ রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট ছিল তাঁর। ব্যাটিং করেছেন ১৪৩.১৪ স্ট্রাইকরেটে।

তবুও আজ কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে দলে ভিড়ায়নি। এছাড়া আরেকজন ওপেনার ছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলটার ওপেনার ছিলেন। মূলত হার্ড হিটিং ব্যাটিং এর জন্যই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নজর কেড়েছিলেন। এরপর অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়েও ওপেনিং পজিশন সামলেছেন। এবারের ডিপিএলেও ১১ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে ৩২.৭৭ গড়ে ২৯৫ রান করেছেন। এছাড়া ৭৯ রানের অপরাজিত একটি ইনিংসও ছিল তাঁর।

এছাড়া আগেরবছর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি লিগে আনিসুর ইমন ভালো পারফর্ম করেছিলেন। সেখানে ৮ ম্যাচে করেছিলেন ১৯৯ রান।  এবছর ডিপিএলেও ১৩ ম্যাচে ৩০ গড়ে ৩৫৮ রান করেছেন। তবে এই ওপেনারও কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির নজর কাড়তে পারেননি।

ওদিকে বাংলাদেশের পেস বোলার আবু জায়েদ রাহিও কোন দল পাননি। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন না লম্বা সময় সেটা ঠিক। তবে বিপিএলে বরাবরই ভালো পারফর্মার তিনি। বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের একজনও তিনি। এই লিগে সবমিলিয়ে ৫৩ টি ম্যাচ খেলেছেন এই পেসার। সেখানে ২১.৮৫ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ৫৭ উইকেট। এছাড়া টেস্ট দলে তো নিয়মিত বাংলাদেশের হয়ে খেলছেনই।

সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আমেজটা ধরতে পারছেন না। বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতই ধরাবাঁধা চিন্তা করছেন। একটু ঝুকি নিয়ে হার্ড হিটার কিংবা লেগ স্পিনারদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন না। ফলে বিপিএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link