গল্পটা জোসে ডিনিস অ্যাভেইরো’র। জন্মটা গরীব ঘরেই। বড় হয়ে ঠিক করলেন সেনাবাহিনীতে ঢুকবেন। ঢুকলেন, আফ্রিকায় এক অখ্যাত যুদ্ধেও শরিক হলেন। কিন্তু, সেই যুদ্ধ তার জীবনে সবচেয়ে খারাপ সময়টাই বয়ে আনলো। যুদ্ধে পরাজয়ের পাশাপাশি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখলেন নিজ চোখে। পাশের সহযোদ্ধাদের মৃত্যু, খাবারহীন জীবন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত সবই দেখে পরাজয় মাথায় নিয়ে ফিরে আসলেন নিজ দেশ পর্তুগালে।
যুদ্ধে পর্তুগাল থেকে বিপুল পরিমানে অর্থ খরচ হওয়ায় দেশের অর্থনীতিও অবস্থাও খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। যার জন্য যুদ্ধ থেকে ফিরেই কোনো প্রকার কাজ না পেয়ে বেকার জীবনযাপন যেনো তার জীবনকে আরো বেশি বিষে পরিপূর্ণ করছিলো।
শোনা যায়, কাজের অভাবে খেতে না পেরে মদ খেতেন। সেখান থেকেই মদের অভ্যাসটা চড়ে উঠে তার মাথায়। মদের টাকা কোথায় পেতেন? সাবেক সেনা হওয়ায় অনেকে তার সম্মানে এমনিতেই মদ দিতেন এবং তার থেকে ভালো অবস্থানে থাকা বন্ধুবান্ধবরাও তাকে মদ খাওয়াতেন।
আর হ্যাঁ, অ্যাভেইরোর পরিবারের সম্পর্কে বলাই হয়নি। চার সন্তান ছিল তাঁর। যুদ্ধের থেকে ফিরে আসার পর পরিবারের সদস্যদের মুখে দুই বেলা খাবারই তুলে দিতে পারতেন না। যার কারনে তার স্ত্রী মারিয়া ডোলারেস তাদের এক সন্তানকে এবোরশন করে ফেলার চিন্তা করেছিলেন। আর সেই সন্তানটি কে জানেন? ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো!
একসময়ে লোকাল এক ফুটবল ক্লাবে কিট ম্যানের চাকরি পেয়ে যান এভেইরো। কারন, সেই ক্লাবে রোনালদো খেলতো। তার বাবার কাজ ছিলো সকল খেলোয়াড়দের কিট পরিষ্কারের। এত নিম্ন মানের চাকরি করায় সতীর্থরা তাকে নিয়ে মজাও করতো। ঠাট্টা বিদ্রুপ থেকেই সেরাদের সেরা হবার তীব্র নেশা চাপে রোনালদোর মাথায়।
২০০৫ সাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেয়ার কেবল ২ বছর হয়েছে রোনালদোর। এমন এক সময়ে খবর এলো তার বাবা মারা গিয়েছেন। অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার জন্য লিভারের সমস্যাজনিত কারনে মারা যান। এই মৃত্যুই হয়তো রোনালদোকে আরো বেশি সাহসী, উদ্যমী করেছে।
বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময়ে নিজের বাবাকে নিয়ে মুখ খুলেছেন রোনালদো। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে শতভাগ জানতাম না। আমরা কখনো অন্যদের মতো সাধারনভাবে কথা বলিনি। তিনি একজন মাতাল লোক ছিলেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তিনি কিছুই দেখে যেতে পারেননি। আমার পুরষ্কার জয় কিংবা আমি এখন কোথায় আছি, তা কিছুই তিনি দেখে যাননি।’
রোনালদোর বাবা’র মৃত্যুর পর রোনালদো মদ খাওয়া থেকে দূরে আছেন এখনো। কারণ, এই মদই তার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে তার জীবন থেকে। একজন বাবার স্বপ্ন থাকে তার ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা, সেটা দেখার সুযোগই কেড়ে নিয়েছে এই মদ।
তরুন বয়সে রোনালদো একবার তার বাবাকে বলেছিলেন, ‘বাবা, আমরা একসময়ে খুব বড়লোক হবো এবং আমাদের বড় একটা বাড়ি থাকবে!’ সেটা শুনে তার বাবা’র উত্তর ছিলো, ‘এটা অসম্ভব, বাবা!’
অসম্ভবকে সম্ভব অনেক আগেই করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো। কিন্তু বাবা কোথায়? একসময়ে অনাহারে থাকা সেই পরিবারের আজ রয়েছে কোটি কোটি টাকা। সবই নিজের পরিশ্রমে গড়া। কিন্তু যে বাবাকে এ বাস্তবতার কথা বহু আগে বলেছিলেন রোনালদো, তিনিই কিনা এসব দেখে যেতে পারলেন না। এজন্যে হয়তো এতো যশ, খ্যাতির মাঝেও কিছুটা আক্ষেপ কুড়ে কুড়ে খায় রোনালদোকে!
পৃথিবীর সকল বাবা’রাই ভালো এবং সুস্থ থাকুক। সন্তানদের সাথেই থাকুক।