বঙ্গবন্ধু বিপিএল-২০২২ এর সদ্য শেষ হওয়া ড্রাফটে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ম্যানেজমেন্ট তারুণ্য নির্ভর দল গড়েছে, যা বেশ আলোচিত হয়েছে। তবে তাদের সাজানো দলে যে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে সকলের দৃষ্টি কেড়েছে তা হলো দলটির অনভিজ্ঞ ও আনকোড়া কিন্তু অসম্ভব সম্ভাবনাময় পেস বোলিং বিভাগ।
সেদিন ড্রাফটে চট্টগ্রাম ম্যানেজমেন্ট প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ডাক দেয় বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম এর জন্য। এতে অবাক হওয়ার অবশ্য বিষয় ছিল না। তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের বাইরে এ মুহূর্তে দেশের তৃতীয় সেরা পেসারের নাম আসলে বোধহয় যে কেউ শরিফুলের কথা বলবে। বছর দুয়েক আগে অনূর্ধ্ব ১৯ এর বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য শরিফুল ইতোমধ্যে জাতীয় দলের জার্সিতে তিন ফরম্যাটেই অভিষেক করে ফেলেছেন। করেছেন বেশ মানানসই পারফরম্যান্স। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ছোট সংস্করণে ১৭ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ২২ টি, ইকোনমি ৭ এর ঘরে।
তবে নিজেদের মাত্র চতুর্থ ডাকেই সবাইকে খানিকটা অবাক করে চট্টগ্রাম ডেকে নেয় মকিদুল ইসলাম মুগ্ধকে। এই বছর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট এর জন্য প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ ও রংপুরের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৩২ ম্যাচে ৩১ টি উইকেট শিকার করেছেন এই প্রতিভাবান পেসার।
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও রেজাউর রহমান রাজা-কে ড্রাফট থেকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে বাঁ-হাতি মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে উঠে আসলেও, ডান হাতি মিডিয়াম পেসার রেজাউর রহমান রাজা লিগের পরিচিত মুখ। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মাত্র কিছুদিন আগে তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন, যদিও অনেকের মতে তা অনাঙ্ক্ষিত ছিল।
সবশেষ ড্রাফটের বাইরে থেকে চট্টগ্রামের নতুন সংযুক্তি পেসার আকসার আহমেদ। সম্প্রতি দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটে বারিধারা ড্যাজলার্সের হয়ে বেশ তাক লাগিয়েছেন মূক ও বধির এই বোলার। শারীরিক ও মানসিক নানান বাঁধা পেরিয়ে আকসারের উঠে আসার রূপকথার গল্প মিডিয়াতেও প্রচারিত হয়েছে বেশ জোরালোভাবে৷ আকসারের সম্বল মাঠে অধিনায়কের ইশারা এবং নিজের ক্ষুরধার সুইং ও মুভমেন্ট। এমন এক খেলোয়াড়কে দলে অন্তর্ভুক্ত করে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স বরং তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে কাজ করার একাগ্র মানসিকতা আরো দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করলো।
পেস বোলিং বিভাগে একেবারেই চারজন প্রাণবন্ত তরুণ তুর্কি। স্পষ্ট হিসেবে গড় বয়স ২১ এর কম। যদিও ড্রাফট শেষে চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠান আখতার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিফাদুজ্জামান সোজাসাপ্টা জানালেন, তারা অভিজ্ঞ রুবেল হোসেনকেও নিজেদের পরিকল্পনায় রেখেছিলেন, কিন্তু লটারি নিয়তি তাঁদের সাথে দেয়নি।
তার আগেই ঢাকা রুবেলকে ভিড়িয়ে নেয়। কিন্তু যাদের পেয়েছেন, তাদের নিয়ে তারা খুশি। পাশাপাশি তাদের ভেড়ানো ইংলিশ অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েল এবং ক্যারিবিয়ান বোলার রায়াদ এমরিটও এই বিভাগের অংশ। স্পিন বিভাগে আছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ নাসুম আহমেদ।
অবশ্য সম্ভাবনাময়ী পেসারদের কেবল দলে ভিড়িয়ে থেমে থাকেনি চট্টগ্রাম। মাত্র একদিন পরেই, দলের বোলিং কোচ হিসেবে তরুণদের পরিচর্যার ভার তারা তুলে দিয়েছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান গতি দানব শন টেইট-কে। বিপিএল এর সূচনা নিশ্চিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের ম্যানেজমেন্ট এর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) থেকে লেভেল-২ এর কোচিং সনদপ্রাপ্ত সাবেক অজি পেস তারকার কোচিং ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় গন্তব্য।
এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের কোচিং স্টাফে সামিল ছিলেন তিনি৷ গুরুত্বপূর্ণ আসরটিতে বোলিং কোচ হিসেবে দীক্ষা দিয়েছেন নাভিন উল হক, গুলবাদিন নাইব, রশিদ খান, করিম জান্নাত, মুজিবদের। যদিও বিশ্বকাপের পরপরই আফগান বোলিং কোচ এর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তারপরেই যোগ দেন ভারতের মর্যাদাকর রঞ্জি ট্রফি ও বিজয় হাজারে ট্রফিতে অংশগ্রহণকারী পন্ডিচেরী প্রাদেশিক দলে। আপাতত সেখানেই তরুণদের নিয়ে কাজে মনোনিবেশ করেছেন। আগামী জানুয়ারিতে যথারীতি সময়ে যোগ দিবেন বঙ্গবন্ধু বিপিএল এর ফ্রাঞ্চাইজি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাবেক খেলোয়াড় শন টেইট-কে নিয়োগ দিয়ে নতুনদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার সুপরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সম্ভবপর হলে পাকিস্তান কিংবদন্তী পেসার শোয়েব আখতারকে দলের পরামর্শক হিসেবে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিটির। সুতরাং ড্রাফটে চার প্রতিভাবান পেসারকে ডাকার সিদ্ধান্ত সাহসী তো বটেই, বেশ অর্থবহ-ও হয়ে থাকলো।