হতাশ করা একটা বছর কাটলো ইংল্যান্ডের। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক নয় টেস্টে হারার রেকর্ডটা ছুঁয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। তবে মুদ্রার একেবারে উল্টো পিঠে ছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। টেস্ট দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিজের আপন এক ছন্দে রয়েছেন এই পুরো বছরটা জুড়ে। অধিনায়কের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বলতে যা বোঝায় ঠিক সেই কাজটাই করছেন তিনি। তবে দলের অন্য সদস্যদের থেকে খুব সাহায্যটুকু পেলেন না রুট।
এই বছরে এখন পর্যন্ত টেস্টে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকদের তালিকার সবার উপরে রয়েছেন জো রুট। দ্বিতীয়তে রয়েছেন ভারতীয় রোহিত শর্মা। ভারতের একটি টেস্ট চলমান। তবুও রুটকে ছাড়িয়ে যাওয়াটা তাঁর জন্যে প্রায় অসম্ভব। প্রথমত রোহিত ইনজুরি আক্রন্ত হয়ে খেলছেন না, দ্বিতীয়ত দুই জনের রানের ফাঁরাক প্রায় আটশ রানের।
একটাবার ভাবুন! প্রায় আটশ রানে ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন জো রুট। কি পরিমাণ দূর্দান্ত এক বছর কেটেছে তাঁর ব্যাট হাতে। কিন্তু তাঁর সতীর্থরা তাঁকে করেছেন প্রচণ্ড হতাশ। এই যে বর্ষপঞ্জিকায় সর্বাধিক হারের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা ছাড়াও, রুটের সতীর্থ ইংল্যান্ড দলের স্বীকৃত ব্যাটাররা ছিলেন পুরোপুরি ফ্লপ।
রুট বাদে বাকি ব্যাটারদের এই বছর রানের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। রুটের পর যিনি রয়েছেন রান সংগ্রাহকদে তালিকায় তিনি ররি বার্ন্স। রুট যেখানে রয়েছেন শীর্ষে সেখানে ররি বার্ন্সের অবস্থান ১৬তম পজিশনে। ব্যবধানটা তো এখান থেকেই স্পষ্ট।
অবশ্য রুটের থেকে পাঁচটি টেস্ট কম ম্যাচ খেলেছেন বার্ন্স। তবুও এই দুইজনের রানের গড়েও রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাৎ। রুটের গড় সেখানে ষাটের ঘরে সেখানে বার্ন্সের গড় ত্রিশ থেকে খানিক দূরে। বার্ন্স আর রুটের রানের দূরত্ব ছাড়িয়েছে হাজার। বার্ন্সের এই বছরে সাদা পোষাকে রান ৫৩০।
এরপর দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটার জনি বেয়ারস্টোও ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। তাঁর গড়টা তাঁর মত ব্যাটারদের পাশে বড্ড বেমানান। মাত্র ২৪ পাড় করা গড়ে তিনি এই বছর নয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ইংলিশদের হয়ে। নয় ম্যাচের ১৮টি ইনিংসে ব্যাট করে কেবলমাত্র ৩৯১। চারটি অর্ধশতক করেছেন তিনি। অবশ্য রুটেরও অর্ধশতকের সংখ্যাও একই। কিন্তু রুট তাঁর অধিকাংশ অর্ধশতকেই বড় রানে পরিণত করেছেন এবং শতকের সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়েছেন। ছয়টি শতকের দেখা পেয়েছেন রুট এই বছর।
বাকি ব্যাটারদের মধ্যে অলি পোপ এবং ডম সিবলি এদের পরিসংখ্যানটাও খুব বেশি হতাশাজনক। দুইজনই এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডে হয়ে সমান ২২টি করে টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। তবে এই বছরে খেলা টেস্টের সংখ্যার দিক বিবেচনায় এক ম্যাচ বেশি খেলেছেন ডম সিবলি।
তবে রানের দিক থেকে এগিয়ে আছেন পোপ। তবে পার্থক্য শ্রেফ ১২ রানের। পোপ করেছেন ৩৬৮ রান অন্যদিকে সিবলির রানের সংখ্যা ৩৫৮। যেখানে এই দুইজনের ক্যারিয়ার গড় ২৯ এর কাছাকাছি ছিলো। কিন্তু এই বছর তাঁদের দুইজনের গড় ঘোরাফেরা করছে বিশের আশেপাশে।
সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় এই যে চার জন টপ অর্ডার ব্যাটারদের রান গুলোর সম্মিলিত যোগফল রুটের রানকে পাড় করতে পারেনি। রুটের মোট রান ১৭০৮ রান। বার্নস, বেয়ারস্টো, পোপ ও সিবলিদের মোট রান ১৬৪৫। রুট একাই এই চারজন ব্যাটেরদের ছাড়িয়ে গিয়েছেন ২০২১ সালে ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাটে। রুট বাদেও বাকি ব্যাটারদের এমন অফফর্ম ইংল্যান্ডকে একটি নেতিবাচক রেকর্ডের সাক্ষী করে রাখলো। নতুন বছরে পুরো ইংলিশ দলটাই নিশ্চয়ই চাইবে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে এই নেতিবাচকতার অবসান ঘটাতে।