বাংলাদেশে তখনো সূর্য উঠেনি। তবুও ঘুম ঘুম চোখে অনেক গুলো চোখ টিভি পর্দায় সামনে বসে পড়লো। একটা কিছু হতে পারে আজ, সেটা গতকালই বোঝা যাচ্ছিল। বাংলার ক্রিকেটে এক নতুন সূর্য উঠতে পারে আজ। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের সাথে গত চারদিন যেভাবে লড়াই করেছে বাংলাদেশ, তাতে নতুন দিনে গান শোনা যাচ্ছিল।
তবে ক্রিকেটাররা বোধহয় একটু তাড়াতেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ ঠিক মত চোখ কুচলে টিভির সামনে বসতে বসতে নিউজিল্যান্ডকে খাঁদের কিনারায় নিয়ে গেল। এবার আমরা একটু নাড়াচাড়া দিয়ে বসলাম। নিশ্চয়তা পাওয়া গেল, আজ তবে ঘটনাটা ঘটছে। নিজেদের দুর্গে অপ্রতিরোদ্ধ হয়ে উঠা নিউজিল্যান্ডকে এবার ধরাশায়ী করা যাবে। ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মত দলগুলোও যেখানে গিয়ে হিমসিম খায় সেখানে টেস্ট খেলতে না পারা বাংলাদেশ গানটা গাইছে। মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল।
তবে এই জয়ের মাহাত্ম আরো বহুগুণ। প্রেক্ষাপটটা একেবারেই বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। হারতে থাকা এক দল এসে পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের কঠিনতম কন্ডিশনে। যেনো কোনভাবে সম্মান নিয়ে খেলে আসতে পারলেই হয়। তবু আমাদের নতুন দিনের সারথিরা এভাবে ভাবেননি। সাকিব, তামিমদের ছাড়াই যারা পাঁচটা দিন লড়াই করলো তাঁদের চলুন দেখে আসি।
- এবাদত হোসেন
আজ মাউন্ট মঙ্গানুইতে পুরো বাংলাদেশ দলই যেন এক তাড়াতে ছিল। বিশেষ করে আমাদের নয়া সেনানী এবাদত হোসেন। দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রস টেলরকে ফেরালেন। আরেকবার এবাদত হোসেনে বুলেট, আরেকবার সেলুট। এরপর বাকিদের ফেরাতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ গতকাল ম্যাচের ড্রাইভিং সিটে বসেছিল এই পেসারের কল্যানেই। কাল নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। আজ আরো ২ উইকেট নিয়ে নিশ্চিত করেছেন দলের জয়।
- মাহমুদুল হাসান জয়
সেভাবে কখনো এর আগে ওপেনই করেননি। তবে দলের প্রয়োজনে বছর বিশেকের এই ছেলেটাকে কিউই পেসারদের সামনে ঠেলে দেয়া হলো। জয় একবারো ভয়ে মুচড়ে যাননি। বরং বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা প্রথম ইনিংসে করে দিয়েছিলেন তিনিই। ২২৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে কঠিন সময়টা পার করেছেন। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদসের মাঝে বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
- নাজমুল হোসেন শান্ত
অনেক আগে থেকেই শান্তকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হয়। বিসিবিও এই ব্যটারকে লম্বা সময় ধরে নজরে রেখেছে, ধীরে ধীরে তৈরি করেছে। শেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন। আর এবার কিউইদের বিপক্ষে খেললেন ৬৪ রানের ইনিংস। জয়ের সাথে তাঁর এই জুটিতেই প্রথম লড়াইয়ের আভাষটা দিয়েছিল বাংলাদেশ।
- লিটন দাস
তাঁকে নিয়ে কত সমালোচনাই না হলো কিছুদিন আগেও। সাদা বলের ক্রিকেটে সময়টা একেবারেই ভালো কাটাচ্ছিলেন না। দল থেকেও বাদ পড়েছেন। তবে টেস্ট ক্রিকেটে লিটনের ধারাবাহিকতা আমরা ভুলে গেলাম। গত বছর উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড়ে ব্যাট করেছেন তিনি। প্রায় ৫০ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি করলেন। আর এই টেস্টে লিটনের ব্যাট থেকে আসলো ৮৬ রান।
- মুমিনুল হক
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। তাঁর কাঁধে শুধু নেতৃত্বর দায়িত্বই ছিল না। বাংলাদেশের একটা প্রজন্মের সাথে টেস্ট ক্রিকেটের পরিচয় করে দেয়ার দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে। সেই কাজটা বোধহয় করতে শুরু করেছেন মুমিনুল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়টা কেই বা এড়িয়ে যেতে পারে। আর ব্যাট হাতে বাংলাদেশের অন্যতম সফল তিনি। এই টেস্টেও প্রথম ইনিংসে করেছেন ৮৮ রান। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তো দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন।
- মেহেদী হাসান মিরাজ
বল হাতে টেস্টে মিরাজ বরাবরই পারফর্মার। তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তাঁর বোলিং কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। বল হাতে এই সইনার এতকিছু দিয়েছেন যে তাঁর ব্যাটিং স্কিলটাই আমরা ভুলে যাই। বাংলাদেশ সেভাবে কখনো তাঁর ব্যাটটা ব্যবহারও করেনি। তবুও ৮ নম্বরে নেমে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসেও রাব্বির সাথে জুটি গড়ে বাংলাদেশের লিড বাড়িয়ে দিলেন। শেষ সময়ে খেললেন ৪৭ রানের ইনিংস।
- তাসকিন আহমেদ
গত একবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার তাসকিন। গতি আর লাইন লেন্থে এই যেনো এক অন্য তাসকিন আহমেদ। নিয়মিত জোরে বল করে যাচ্ছেন। তিন ফরম্যাটেই একইরকম ভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। পারফর্ম করলেন কিউইদের বিপক্ষেও। নিউজিল্যন্ডের কন্ডিশনে যে বাংলাদেশের পেসাররা ঝড় তুলতে পারে এই বিশ্বাসটা তো দলে তিনিই ছড়িয়ে দিয়েছেন।