প্রোটিয়াদের সেঞ্চুরি কোথায় গেল!

৮২ রানের ইনিংস খেলে দলকে মোটামুটি জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েই শার্দুল ঠাকুরের বলে আউট হয়ে ফিরলেন কেগান পিটারসন। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতার উল্লাস হয়তো প্রোটিয়ারে করতে পারে। তবে পিটারসন একটা আক্ষেপ রেখে গেলেন। গত বছর থেকে যেই আক্ষেপ নিয়ে ঘুরছে প্রোটিয়া। ৮২ রানের এই ইনিংস সেই আক্ষেপ আরো যেনো বাড়িয়েই দিল।

গত বছর জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কুইন্টন ডি কক ১৪১ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেছিলেন। সেটাই টেস্ট ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার কোন ব্যাটসম্যানের শেষ সেঞ্চুরি। এরপর দেশটির আর কোন ব্যাটসম্যান টেস্ট ক্রিকেটে পৌছাতে পারেননি তিন অঙ্কের এই ম্যাজিক ফিগারে। সেই ডি কক এখন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন, তবে এখনো প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা সেই হারিয়ে যাওয়া সেঞ্চুরির খোঁজে।

কুইন্টন ডি কককে সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে গণনা করলে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের অবস্থা আরো করুণ। বর্তমান যেই ব্যাটসম্যানরা আছেন তাঁদের মধ্যে শেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এইডেন মার্করাম। রাওয়াল পিন্ডিতে গতবছর ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর থেকে আর এই দলটার কোন ব্যাটসম্যান আর সেঞ্চুরির দেখা পাননি।

এমনকি তাঁদের ঘরের মাটিতে ভারতের ব্যাটসম্যানরা ঠিকই সেঞ্চুরি আদায় করে নিচ্ছেন। গতকাল ঋষাভ পান্ত ভারতের হয়ে অবিস্মরণীয় এক সেঞ্চুরি করে ফেললেন। তৃতীয় ইনিংসে ভারতের হয়ে একাই লড়াই করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের বিপক্ষে। অথচ নিজেদের মাটি কিংবা দেশের বাইরে কোথাওই এই সময়টায় কোন সেঞ্চুরির দেখা পেল না প্রোটিয়া কোন ব্যাটসম্যান। প্রশ্ন হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরি গুলো গেলো কোথায়?

এই সময়টায় ভারত মোট নয়টা সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে। যদিও বিরাট কোহলির দল এর মধ্যে ১৪ টি টেস্ট খেলে ফেলেছে। উল্টোদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে ছয়টি টেস্ট। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সমান ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। তাঁরা এই ছয় টেস্টে মোট ৭ টি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ে এই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে কম টেস্ট খেলেও তুলে নিয়েছে একাধিক সেঞ্চুরি।

এবার কিগান পিটারসেনকে নিয়ে সেই আক্ষেপ মেটানোর স্বপ্ন হয়তো দেখছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পিটারসেন ৮২ রান করে দলকে জয়ের একদম কাছাকাছিও এনে দিলেন। তবে শেষ কাজটা করে আসতে পারলেন না। কেননা আজ সেঞ্চুরি পেলে এটা শুধু তাঁর অর্জনই হতো না বরং পুরো প্রোটিয়া দল একটা বৃত্ত থেকে বের হবার সুযোগ পেতো।

তবে শার্দুল ঠাকুরের বলে আউট হয়ে ফিরায় সেই আশা পূরণ হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার অপেক্ষাও তাই ফুরোয়নি। কুইন্টন ডি ককের সেই সেঞ্চুরির পর এমন আরো কিছু ইনিংস প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এসেছে। তবে তাঁদের কেউই সেটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি। এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ৬ টি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে।

প্রোটিয়াদের এই বড় ইনিংস খেলতে না পারার জন্য তাঁরা কন্ডিশনকে দায়ি করতে পারবেনা। কেননা শেষ ছয় ম্যাচের তিনটিই তাঁরা খেলেছেন নিজেদের দেশের মাটিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করছেনা সেটা ঠিক। এছাড়া ভারতের পেস বোলিং অ্যাটাকও দারুণ শক্তিশালী। তবে যত যাই হোক, নিজেদের দেশের কন্ডিশন তো। এমনকি ভারত থেকে এসে লোকেশ রাহুল সেঞ্চুরি করলেন। ঋষাভ পান্ত সেঞ্চুরি করলেন।

প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা সেসব মাঠ থেকে দেখলেন। এবার তাদেরও দ্রুত কাজটা করে দেখানোর সময়। জয়ের সাথে সাথে সেঞ্চুরিও তো চাই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link