ছয় ফুট সাত ইঞ্চির একেবারে হ্যাঙলঅ পাতলা একটি ছেলে। দূর থেকে দেখলে যে কেউ বলে দিবে এই ছেলের জন্মই হয়েছে পেস বোলার হবার জন্য। তবে মার্কো জেনসেন তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে। তবে নিয়তির লেখা বদলাবে কে? আজ সেই পেস বোলার হিসেবেই জেনসেন ধ্বসিয়ে দিচ্ছেন বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন আপ।
মার্কো জেনসনের বয়স তখন ১৭ বছর বয়স। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছে ভারত। ভারতের ব্যাটসম্যানদের নেটে বোলিং করার জন্য ডাকা হলো এই পেসারকে। নেটে বোলিং করে বিরাট কোহলির তুমুল প্রশংসা পেলেন। সেই প্রথম জেনসেনকে লোকে টুকটাক চিনতে শুরু করলো। নিজের নিয়ন্ত্রণ ও পেস দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটেরও নজরে আসলেন।
ভারতের সাথে জেনসেনের সম্পর্ক এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। সেই ঘটনার দুই বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ভারত সফরে গেলেন তিনি। সেবছরও নিজের পেস দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর গতবছর আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সও তাঁকে দলে নেয়। ফলে ভারতের সাথে জেনসেনের একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল সেই ছোট বয়স থেকে। ছিল কেন বলছি তাঁর উত্তর একটু বাদেই দিচ্ছি।
মার্কো জেনসেনের জন্ম ২০০০ সালের পহেলা মে। মার্কো ও ডুয়ান জেনসন দুই জমজ ভাই। দুজনই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন একসাথে। তাঁদের প্রথম কোচ ছিলেন তাঁদের বাবা। দুই ভাই তখন স্বপ্ন দেখেন ব্যাটসম্যান হবার। পরে দুজনই বোলিংটাও করতে শুরু করেন। তবে আস্তে আস্তে মার্কো জেনসেন বল হাতে হয়ে উঠেন অপ্রতিরোদ্ধ। আরেক ভাই ডুয়ানও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছেন অলরাউন্ডার হিসেবে।
মার্কো জেনসেন দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট দলে প্রথম ডাক পান গতবছর, পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে সেই সিরিজে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। এবার সেই প্রথম প্রেম ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামলেন। যেই ছোট ছেলেটাকে কোহলি প্রশংসা করেছিলেন সেই কোহলির দলের বিপক্ষেই জেনসেনের টেস্ট অভিষেক। একবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নামলেন।
তবে ভারতের সাথে ভালোবাসার সেই সম্পর্ক আর মাঠে দেখা গেল না। মাঠে যেনো ভারতের হন্তারক হয়ে উঠলেন। সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে নিলেন মোট ৫ উইকেট। এরপর জোহানসবার্গে নিলেন ৭ উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে কেপ টাউনে প্রথম ইনিংসে আবারো তিন উইকেট।
আর দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে জয়ের ভীত গড়ে দিলেন। একাই নিলেন ৪ উইকেট। সবমিলিয়ে এই তিন টেস্টে তাঁর ঝুলিতে জমা হলো ১৯ টি উইকেট। বিরাট কোহলিদের ব্যাটিং লাইন আপকে এই সিরিজে একাই ধ্বসিয়ে দিলেন ২১ বছর বয়সী এই পেসার।
তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে রীতিমত রেকর্ড করে ফেলেছেন। এর আগে ক্রিকেট দুনিয়ায় মাত্র চার জন বোলার তাঁর অভিষেক সিরিজেই ১৯ টির বেশি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া ১৯৯২ সালে ক্রিকেটে ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকার আর কোন বোলার এক সিরিজে নিতে পারেননি ১৯ টি উইকেট। এর আগে বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজও অভিষেক সিরিজেই নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট।
সবিমিলিয়ে সেই ১৭ বছর বয়স থেকেই ভারতের সাথে বেশ ভালো ভাবে জড়িয়ে আছে জেনসেনের ক্যারিয়ার। সেই বয়সে বিরাট কোহলির প্রশংসায় অনুপ্রেরণা তো পেয়েছিলেনই, পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটেরও নজরে এসেছিলেন। আজ সেই ভারতের সাথেই ভালোবাসার সম্পর্ক ছিন্ন করে মার্কোস জেনসেন হয়ে উঠলেন কোহলিদের দু:স্বপ্ন।