যেমনই হোক প্রত্যাবর্তনই তো

পুরো ক্রিকেট দুনিয়া তো ধরেই নিয়েছিল রঙিন পোশাকে তাঁর ক্যারিয়ারটা শেষ। ২০১৭ সালের পর আর ভারতের হয়ে ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সর্বকালের সেরাদের একজনে পরিণত হয়েছেন। স্পিন বোলিং এর এক মাস্টারে পরিণত হয়েছেন। সবাই আশা ছেড়ে দিলেও রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিশ্চয়ই শপথ করে রেখেছিলেন। আবার ওই নীল জার্সিটা গাঁয়ে চড়াবেন।

ভারতের হয়ে আজ পাঁচ বছর পর ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামলেন। শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই ম্যাচেও তাঁর ঝুলিতে ছিল তিন উইকেট। তবে এরপর আর কোন ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে নিজের ১১২ তম ম্যাচটা খেলতে মাঠে নেমেছেন এই স্পিনার। এই ম্যাচটার জন্য অশ্বিন অপেক্ষা করেছেন পাঁচটা বছর।

টেস্টে নিজেকে কিংবদন্তিদের কাতারে নিয়ে গিয়েছেন। লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের স্পিন বোলিং আক্রমণের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। ৮৪ ম্যাচে ২৪.৩৮ গড়ে নিয়েছেন ৪৩০ উইকেট। টেস্টে ৭ বার দশ উইকেট ও ৩০ বার পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে। অথচ ভারত এই স্পিনারকে মাঝের পাঁচটা বছর রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে ব্যবহার করেনি।

২০১৭ সালে যখন বাদ পড়লেন তখন যে অফ ফর্মে ছিলেন তা নয়। বাদ পড়েছিলেন মূলত নতুনদের জায়গা করে দিতে। ভারত তাঁর বোলিং আক্রমণকে আরো বেশি বৈচিত্রময় করে তুলতে চেয়েছিল। সেই সময় যুজবেন্দ্র চাহাল কিংবা কুলদীপ যাদবদের মত স্পিনারদের জায়গা দিতেই অশ্বিনকে বাদ দিয়েছিল ভারত।

এখন অশ্বিনের বয়স পেরিয়েছে ৩৫ বছর। এই বয়সে অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার কথা ভাবেন। অথচ অশ্বিন লিখলেন ফিরে আসার কাব্য। ফিরে এসেছিলেন মূলত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। প্রায় পাঁচ বছর পর বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে ফেরাটা চ্যালেঞ্জিং ছিল নিশ্চয়ই। তাঁর স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া নিয়েও অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

সবাই যখন অশ্বিনের জায়গা পাওয়ার আলোচনায় ব্যস্ত তখন তিনি শুধু তাঁর ফিরে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। বিশ্বকাপে যেই সুযোগ পেলেন আরেকবার নতুন করে প্রমাণ করলেন কেন তিনি শুধু ভারত নয় পুরো দুনিয়ারই অন্যতম সেরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনটা হলো। সেই ম্যাচে নিলেন দুই উইকেট। তার চেয়ে বড় কথা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর ইকোনমি রেট ছিল মাত্র ৩.৫০।

এরপর নামিবিয়ার সাথে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। চার ওভার বোলিং করে খরচ করেছিলেন মাত্র ২০ রান। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেও তাঁর ইকোনমি রেট যথাক্রমে ৫.৭৫ ও ৪.৭৫। ওই দুই ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন আরো তিনটি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর বলে রান নেয়া যেন হয়ে উঠেছিল কঠিনতম এক ব্যাপার।

চার ছয়ের এই ফরম্যাটেও কী করে ব্যাটসম্যানদের আঁটকে রাখতে হয় সেটাই দেখালেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। সবাই যাকে বুড়োদের কাতারে ফেলে দিয়েছিল, সে বুড়ো বয়সে এসেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বোলিং টাকে নতুন করে পরিচয় করালেন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এমন প্রত্যাবর্তেন পর ওয়ানডে ক্রিকেটে অশ্বিনের ফেরাটা ছিল সময়ের ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরলেন। আবারো তিন ফরম্যাটেই অশ্বিনের রাজত্বটা শুরু হলো। ক্যাড়িয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত অশ্বিনের এই রাজত্বটা চলুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link