এপিটাফে ফোঁটা কৃষ্ণচূড়া!

বাংলাদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ঠিক বাইশ মাস আগে। এরপর কখনো ইনজুরি কখনো ভিন্ন কোন কারণে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন এই ফরম্যাটটা থেকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তামিমের শেষও দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। ভাবা হচ্ছিল এই ফরম্যাটটা থেকে বিদায়ও নিয়ে নিবেন দ্রুতই। তবে আজ বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবাল তাঁর উপস্থিতিটা জানান দিলেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটেও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন আরো মাস ছয়েক আগে। এরপর ইনজুরিতে পড়েছেন, আবার ফিরেও এসেছেন। গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি খেলবেন কিনা তা নিয়েও একটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে নিজেই বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ান। জানান নতুনদের জায়গাটা ছেড়ে দিতে চান।

ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন শীঘ্রই একটা ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়াবেন তামিম। ধারণা করা হচ্ছিল সেই ফরম্যাটটা হবে টি-টোয়েন্টি। এই ভাবনা পিছনে তামিমের বয়স কিংবা ইনজুরি যতটা না বড় কারণ ছিল তারচেয়ে বেশি ছিল স্ট্রাইকরেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান করলেও মেজাজটা ঠিক ধরতে পারছিলেন না। স্ট্রাইকরেটে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন, ফলে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে ভালো শুরু পাচ্ছিল না।

সবমিলিয়ে দায়টা নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। এমন একটা অবস্থা থেকে বিপিএলের মত আসরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরলেন তামিম। প্রেক্ষাপট যে একেবারেই পক্ষে ছিল না তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে পুরো চিত্রটা নিজের করে নিলেন দেশসেরা এই ওপেনার। মিনিস্টার ঢাকার হয়ে আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তামিমের ব্যাট জানালো সেটা এখনো কথা বলতে জানে।

গত কয়েক বছর ধরে তামিম যেভাবে খেলছেন শুরুটা ঠিক তেমন ভাবেই। মিরপুরের মন্থর উইকেটের সাথে মানিয়ে নিতে খানিক সময় নিলেন। অন্য প্রান্তে অবশ্য আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ ঝড়ো ইনিংসই খেলছিলেন। দুজনে মিলে গড়েন ৬৯ রানের ওপেনিং জুটি। শাহজাদ ৪২ রানে ফিরে গেলেও আরেক প্রান্ত আগলে রাখেন তামিম।

আউট হয়ে ফেরার আগে খেলেন ৫০ রানের এক ইনিংস। সাত চারে সাজানো এই ইনিংসের স্ট্রাইকরেট ছিল ১১৯.০৪। বলে রাখা ভালো দুপুরের ম্যাচে এই মিরপুরেই ১২৫ রান করতে হিমসিম খেয়েছিল দুই দল। ফলে মিরপুরে ৪২ বলে ৫০ রানের এই ইনিংসকে মোটেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে আউট হবার আগে দলকে ১০৯ রানের শক্ত ভিত গড়ে দিয়ে যান।

সবমিলিয়ে তামিমের এই ইনিংসকে শুধু আরেকটা হাফ সেঞ্চুরি হিসেবে ভাবলে ঠিক হবেনা। গত দুই বছরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তামিমের ক্যারিয়ারের এপিটাফ লিখা হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাড়িয়েও তামিম আরেকবার তাঁর সহজাত কাজটাই করে দেখালেন। ব্যাট হাতে জবাব দিয়ে। জানালেন তামিমের শেষটা একমাত্র তামিমই লিখতে পারেন।

ক্যারিয়ার জুড়ে আরো অনেকবারই তামিম নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে এবারেরটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। এবার তামিম হয়তো করে দেখালেন শেষবারের মত। কফিনের শেষ পেরেকটা ঠোকার আগে তামিম সব তছনছ করে বেরিয়ে এলেন। তামিম আবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরবেন কিনা সেটা তাঁরই সিদ্ধ্বান্ত হয়তো। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তামিম আরেকবার জানান দিলেন তিনি এখনো দেশসেরা ওপেনার। তিনি এখনো আমাদের সেই ড্যাশিং ওপেনার।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link