ভারতীয় ক্রিকেট একটা ক্রান্তিকালের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এর শুরুটা হয় গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে থেকেই। বিরাট কোহলি জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপ শেষেই টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়বেন তিনি।
তখন, হয়তো বিরাট নিজেও জানতেন না যে – আর মাত্র ক’টা মাস বাদেই ক্রিকেটের সব ফরম্যাটের মসনদই ছেড়ে দিতে হবে তাঁকে।
বিশ্বকাপের পর বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) বিরাটকে সরিয়ে রোহিত শর্মাকে ওয়ানডে দলের নেতা বানায়। তখন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় গণমাধ্যম কোহলি-রোহিত দ্বন্দ্বের গন্ধও পেয়েছিল। এমনকি বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির সাথেও যে বিরাট কোহলির সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছে না – সেটা ভারতীয় ক্রিকেটে এখন ওপেন সিক্রেট।
এবার জটিলতাটা আরো বাড়লো, যখন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারের পর কোহলি টেস্ট অধিনায়কত্বওটাও ছেড়েই দিলেন। বিসিসিআই আপাতত টেস্টের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চায়নি বলেই দাবি করছিল, তবে, এখন কোহলি সরে যাওয়ায় নতুন করে অধিনায়ক খোঁজার মিশনে নেমেছে ভারত।
আর সেই লড়াইয়ে যথারীতি স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে আছেন রোহিত শর্মা। কারণ, বাকি দুই ফরম্যাটের নেতাও তিনি। তবে, এখানে আরো কয়েকটা নামও আসছে বেশ জোরেসোরেই। তালিকায় আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ঋষাভ পান্ত, লোকেশ রাহুল এমনকি জাসপ্রিত বুমরাহও!
কেমন অধিনায়ক চাই ভারতের? এই প্রশ্নে নানা গুণী দিচ্ছেন নানা মত। ভারতীয় সাবেকরাও এই প্রসঙ্গে মুখ খুলছেন প্রতিনিয়তই। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় গ্রেট সুনীল গাভাস্কার মত দিলেন ঋষাভ পান্তের পক্ষে। কারণ, তিনি মনে করেন এতে করে ব্যাটসম্যান ঋষাভ আরও পরিণত হবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করলে, আমি বলবো ঋষাভ পান্তের ভারতের অধিনায়ক হওয়া উচিৎ। দেখুন এখানে আমি উদাহরণ হিসেবে রোহিত শর্মার কথা বলবো। যখন, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে রিকি পন্টিং সরে দাঁড়ালো, তখন দায়িত্ব নিয়ে দলের সাথে সাথে নিজেকেও বদলে ফেলে রোহিত শর্মা। ওর ইনিংস গুলো আগে যেখানে ৩০, ৪০ বা ৫০-এ গিয়ে থামতো সেগুলোই পরে ১০০, ১৫০ কিংবা ২০০ হত। আমি মনে করি এই দায়িত্ববোধটা ঋষাভ পান্তের মধ্যে আসলে ও পাল্টে যাবে।’
এখানে আরেকট যোগ করেন যুবরাজ সিং। ভারতের ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী এই নায়ক বলেন, ‘উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা ঋষাভের চেয়ে ভাল আর কেউ পড়তে পারবে না।’
গাভাস্কারের সাথে সুর মিলিয়ে সন্দীপ সিং বলেন, ‘ঋষাভ পান্তকে অধিনায়ক করার এটাই আদর্শ সময়। ওর বয়স এখন ২৪। আর এখনই অধিনায়ক হলে ওর জন্য নিজেকে বিকশিত করাটা সহজ হবে। নেতৃত্ব ওকে আরো বিকশিত করবে।’
তবে, সিংহভাগ সাবেক এখনও রোহিত শর্মার পক্ষে। এই তালিকায় বেশ সরব সঞ্জয় মাঞ্জেরেকর। সাবেক এই ভারতীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটটাকে এখনও সমীহের দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। আমার মনে হয় না, এখনই ঋষাভ পান্ত বা লোকেশ রাহুলকে অধিনায়ক করাটা ঠিক হবে। আপাতত এটা রোহিতই পাবে, বাকিরা অপেক্ষমান থাকবে।’
দিলীপ ভেঙসরকারও সিনিয়র কাউকেই অধিনায়ক করার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এখন স্টপগ্যাপ অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মা বা রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেই দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ, ওদের সাথে ভবিষ্যতের অধিনায়ককে সহ-অধিনায়ক করে সামনের দিনের জন্য প্রস্তুত করা হোক। অশ্বিন বা রোহিত নিজেদেরকে টেস্টের জন্য প্রমাণ করেছে। ঋষাভ পান্ত, লোকেশ রাহুল কিংবা শ্রেয়াস আইয়ারদের আরো কয়েকটা বছর সময় দিতে হবে।’
যদিও, এখন অবধি যা বোঝা যাচ্ছে – তাতে রোহিতের পাল্লাটাই ভারি। ক’দিন আগেই এক বিসিসিআই কর্মকর্তাও তেমনই আভাস দিয়েছেন। যদিও, কার মাথায় উঠবে টেস্ট সেনাপতির মুকুট – সেটা জানার জন্য সময়ের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।