রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে বোলিং অ্যাকশনের শ্যাডো করা ছোট্ট ছেলেটাও হয়ত একদিন দেশের জার্সিটি পড়ে বিশ্ব মাতাতে চায়। যেখানে সেখানে এই শ্যাডোই বুঝিয়ে দেয় একজন কিশোর ঠিক কতটা মত্ত ক্রিকেটে। এমনই একজন কিশোর ইংল্যান্ডের রেহান আহমেদ।
১৭ বছর বয়সী এই কিশোর বর্তমানে খেলছেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। শুধু খেলছেন বললে ভুল হয়। তিনি বাঁচিয়ে রাখছেন বিশ্বকাপ জয়ে আশা। তিনি মুগ্ধ করছেন সকলকে। রেহান নিজেকে একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে দাবী করলেও তিনি নজড় কেড়েছেন একজন লেগ ব্রেক বোলার হিসেবে।
কিশোর রেহানের ঘরোয়া ক্রিকেটে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন আরো আগেই। গেলো বছর ১৬ বছর বয়সেই তাঁর ‘লিস্ট এ’ অভিষেক হয়ে যায়। লেস্টারশায়ারের হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন রেহান পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন এখন অবধি। সে এক অন্য হিসেব। কিন্তু এই যে তরুণ রেহান তাঁর ঘূর্ণি জাদুতে সম্ভাবনার আলো ছড়িয়েছেন ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ থেকে পুরো বিশ্বে।
তবে যুব বিশ্বকাপের শুরুতেই তাঁকে একটা ছোট ধাক্কা সামলে নিতে হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে পৌঁছানোর পর কোভিড টেস্টে পজিটিভ হন তিনি। অগ্যতা স্বপ্ন হয়ত বিষন্নতায় পরিণত হয়ত হয়ে যেতো। কিন্তু রেহান দৃঢ় প্রত্যয়ী। তিনি হার মেনে নিবেন কি করে। ক্রিকেটই যার ধ্যানজ্ঞান তিনি এত বড় সুযোগ কি আর হাতছাড়া করবেন নাকি? তিনি নিজেকে প্রস্তুত করলেন। ক্রিকেটে মত্ত রেহান হয়ত সহস্রবার করেছেন ব্যাটিং শ্যাডো কিংবা বোলিং একা বদ্ধ রুমে। তারই ফলাফল যেন পেলেন।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তাঁর দল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে হারিয়ে দিলো বেশ অনায়াসে। সেই ম্যাচটা টেলিভিশনে দেখে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন রেহান। মাঠে নেমেই কিছু একটা তো তাঁর করে দেখাতে হবে। গ্রুপ পর্বের দুটো ম্যাচ খেলতে পারলেন না তিনি। ফিরলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এসেই যেন প্রমাণ করে দিলেন তিনি ছিলেন সদা প্রস্তুত।
দুই দিকেই স্পিন করানো সক্ষমতা রয়েছে রেহানের। আর তাতেই কাবু হলেন আরব আমিরাতের ১৯ না পেরোনো ব্যাটাররা। অসুস্থতা থেকে ফিরেই রেহান করেছেন পূর্ণ ১০ ওভার। মাত্র ৩০ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন চারটি মূল্যবান উইকেট। ব্যাস গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেরা আটে ইংল্যান্ড। রেহানের মধ্যে থাকা উইকেটের ক্ষুধা যেন স্পষ্ট। ব্যাট হাতে যদিও এখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি।
রেহানে মধ্যে রান আটকে রাখার প্রবণতা খুব একটা বেশি চোখে পড়ে না। তিনি যেন সর্বদাই ছোটেন উইকেট শিকারে। সহজাত টার্ন এবং ফ্লাইটের সাথে গুগলির মিশ্রণে রেহান যেন দুর্বোধ্য। কোয়াটার ফাইনালে নিজের কার্যকরী সব অস্ত্র দিয়ে তুলে নেন আবারো চারটি উইকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকার যুবাদের মাত্র ২০৯ রানে আটকে ফেলতে দলকে সহয়তা করেন রেহান। রান দিয়েছিলেন ৪,.৮০ ইকোনমি রেটে। সবগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে তিনি হয়ত এখন টুর্নামেন্টের সেরা উইকেট শিকারিদের তালিকায় সবার উপরে থাকতে পারতেন। তবে সময় যে শেষ হয়ে গিয়েছে তা কিন্তু নয়।
নিশ্চিতরুপেই বলা যায় সঠিক পরিচর্যা পেলে তিনি হয়ে উঠতে পারেন আগামী দিনের সেরাদের সেরা। ১৩ বছর বয়সে নেট প্র্যাকটিসে তাঁরই স্বদেশি তারকা ক্রিকেটার বেন স্টোকসকে আউট করার পরই হয়ত বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ছোট্ট রেহান আহমেদ।