যখন, যেভাবে, যে ফরম্যাটে প্রয়োজন হচ্ছে সেখানেই নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। নিজেকে যেন পানির মত করে তৈরি করেছেন নাইম ইসলাম। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস তাঁকে বড় করে দেখতে চায়নি কখনোই। তবুও ব্যাট, বল, ফিল্ডিং দিয়ে সবধরনের ক্রিকেটে নাঈম নিজেকে তুলে ধরেছেন। আলোচনা হোক বা না হোক বাইশ গজে সবসময়ই কিছু একটা করে দেখিয়েছেন।
যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন তখনো তাঁকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। আর এখন তো সেই প্রশ্নই আসেনা। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা নাম প্রতি মৌসুমেই ঘুরে ফিরে আসে। সেটা হলো নাঈম ইসলাম। ভিন্ন ফরম্যাটে, ভিন্ন দায়িত্বে, ভিন্ন পরিস্থিতে অভিন্ন এক ক্রিকেটার। বলা ভালো ইউটিলিটি ক্রিকেটার, যারা যেকোন দলে পার্থক্যটা গড়ে দেন।
বাংলাদেশের হয়ে শেষ টেস্ট সিরিজেও তাঁর ব্যাট থেকে একটি সেঞ্চুরি এসেছিল। ২০০৮ সাল থেকে প্রায় পাঁচ বছরে বাংলাদশের হয়ে মাত্র ৮ টি টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। প্রথমদিকে ৭, ৮ এমনকি ৯ নম্বর পজিশনেও ব্যাটিং করেছেন। সেই সময় টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ৩০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন এমন ব্যাটসম্যান খুব বেশি ছিল না। তবে নাঈমের ব্যাটিং গড় ছিল ৩২.০০। তবুও ইনজুরি, টিম কম্বিনেশন নানা কারণে এরপর আর টেস্ট দলে ফিরতে পারেননি।
ওয়ানডে ফরম্যাটেও একইরকম চিত্র। বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট, বল দুই ডিপার্টমেন্টেই পারফর্ম করেছেন। বাংলাদেশ প্রথম যেবার নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করলো তাঁর অন্যতম কারিগর ছিলেন নাঈম ইসলাম। তবে সেসময় সাকিবের কারণে তাকে নিয়ে আলোচনাটা সেভাবে হতো না।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই ছক্কা নাঈম উপাধি ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশাল বিশাল সব ছয় মারতেন। তবে সেই ছক্কা নাঈমই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে স্লো স্ট্রাইকরেটের কারণে সমালোচিত হয়েছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ৬৬.১৯। সেসময় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারে খারাপ বলা যাবেনা। তবে নাঈমের সাথেও ব্যাপারটা যাচ্ছিল না।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা অবশ্য মাত্র ১০ ম্যাচেই থেমে গিয়েছিল। তবে এখন বিপিএলে তরুণদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করছেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে তাঁকে ফিনিশারের রোল দেয়া হলো। ব্যাটিং করতে পাঠানো হলো আট নম্বরে। সেখানে তাঁর থেকে দল যতটুকু আশা করে তাঁর থেকেও বেশিই দিয়েছেন।
ঢাকায় খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে নেমেছিলেন আট নম্বরে। হাতে বল ছিল না একদমই। তবে দ্রুত কিছু রান দরকার ছিল। নাঈমের ভাগ্যে জুটলো মাত্র ৫ টি বল। সেখান থেকেই ৩০০ স্ট্রাইকরেটে করলেন ১৫ রান। মেরেছিলেন দুটি ছয়। ঠিক যেন সেই এক যুগ আগের তরুণ নাঈম। কমেন্ট্রিবক্স থেকে আতাহার আলী খান সিক্সার নাঈম বলে আওয়াজ তুললেন আবার।
আজ চট্টগ্রামে আবারো খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষেই ম্যাচ। তবে এবার ভূমিকাটা একটু ভিন্ন ছিল। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় চাপে পড়েছিল দলটি। একসময় ১২০ রান করাটাই কঠিন মনে হচ্ছিল। সেই সময় নাঈম নেমে খানিকটা সময় নিয়ে ইনিংসটাকে টেনে নিলেন। এরপর শেষ দিকে ২ চার, ১ ছয়ে ১৯ বলে ২৫ রানের ফিনিশার সুলভ ইনিংস। তাঁর এই ইনিংসে পরে ১৪৩ রান বোর্ডে তুলে চট্টগ্রাম।
এছাড়া বল হাতেও ইকোনমিক্যাল। মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে ৭ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ফলে সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের টিম ব্যালেন্সে বড় ভূমিকা রাখছেন এই অলরাউন্ডার। যেন ফিনিশার হিসেবে নিজেকে নতুন করে তৈরি করছেন।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা বিপিএলে নাঈমের এমন পারফর্মেন্সে কী নির্বাচকদের ভাবনায় আসবে? নাঈম যদি পুরো বিপিএলেই এমন ভাবে ফিনিশারের রোল প্লে করে যান তাহলেও কি তিনি জাতীয় দলের আলোচনায় আসবেন? নাকি নাঈম ইসলামদের জন্মই হয় শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য।