বাংলাদেশ আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিকল্পনায় তাঁকে রাখতে চায় না, এমন আলোচনাও হয়েছে। বিশ্বকাপের পর তাই এই ফরম্যাট থেকে জায়গাও হারালেন। মোদ্দাকথা, তাঁর উপর আর কোন ভরসাই করা হচ্ছিল না। দেয়ালে একেবারে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল লিটন দাসের। আর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে এই সময়টাতেই ঘুরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ফিরলেন নায়ক হয়ে।
একটু পিছনে ফেরা যাক। গতবছর ইনজুরি থেকে ফিরে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা ভালো কাটেনি। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পুরো দলের মতই ব্যর্থ লিটন। এরপরই তাঁকে নিয়ে সমালোচনাটা চূড়ান্ত রূপ পেল। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে লিটনের এপিটাফ লিখে ফেলেছিলেন অনেকেই। লিটনের কাছে বাকি ছিল শুধ টেস্ট ক্রিকেট।
লিটন টেস্ট ক্রিকেট দিয়েই ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। এরপর থেকেই লিটন এক ভিন্ন চরিত্র, ভিন্ন ব্যাটসম্যান, ভিন্ন মানুষ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও দেখা গেল ব্যাট হাতে লিটন নামক এক শিল্পীর।
তবে সে যাইহোক, এগুলো তো সব টেস্ট ক্রিকেটের কথা। এতটা অবিশ্বাস্য ফর্মে না থাকলেও লিটন সবসময়ই টেস্টে টুকটাক রান করেছেন। ফলে টেস্টের ফর্ম দিয়ে তো আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিচার করা যায় না। লিটন অবশ্য সেই দাবিও করেননি।
লিটন মাঠেই জবাব দিতে চেয়েছেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পারফর্ম করেই ফিরে আসতে চেয়েছেন। তবুও নিউজিল্যান্ড থেকে এসে ছুটি নিয়েছিলেন। ফলে বিপিএলে ঢাকা পর্বে খেলা হয়নি তাঁর। লিটন ছুটি নেয়াতেও সমালোচনা কম হয়নি। বিশেষ করে যারা রঙিন পোশাকে লিটনের শেষ দেখে ফেলেছিলেন তাঁদের জন্য এটাও আলোচনার খোঁড়াক হয়েছে।
তবে লিটন আসলে ছুটি নিয়েছিলেন নিজেকে তৈরি করার জন্য, নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য। মানসিকভাবে নিজেকে চাঙা করার জন্য। স্রোত যখন তাঁর বিপরীতে তখন একাই সাতার কাটার সিদ্ধান্ত নিলেন। নিজের রাস্তাটার সাথে লিটন আগেও কখনো আপোষ করেননি, আজও করলেন না।
এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মত মাঠে নামলেন। স্রোতের বিপরীতে যাওয়া লিটনই যে ঠিক ছিলেন সেটা প্রমাণ করলেন। তিনি যে কোন ফরম্যাটেই ফুরিয়ে যাননি সেটা প্রমাণ করলেন। মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে আরেক প্রান্ত থেকে ওপেন করলেন। এরপর ফাফ ডু প্লেসিসের সাথে গড়লেন ৫৫ বলে ৮০ রানের জুটি। ৩৪ বলে তাঁর ব্যাট থেকে এলো ৪৭ রান। ৫ চার ও ১ ছয়ে ব্যাটিং করেছেন ১৩৮.২৩ স্ট্রাইকরেটে।
লিটনের কাঁধে চাপ ছিল আরো। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স প্রতিবারই শক্ত দল গড়ে। বিশেষ করে এবার তাঁদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল যেই ওপেনারকে ভবিষ্যৎ ভেবে পরিকল্পনা করছে, সেই পারভেজ হোসেন ইমনও এখন পর্যন্ত একাদশে সুযোগ পাননি। ডেলপোর্ট, জয়, ফাফ সবাই আছেন ফর্মে।
তবুও লিটনকে ওপেনিংয়ে সুযোগ করে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। লিটনও তাঁর প্রতিদান দিলেন। লিটন বোঝালেন এখন আসলে সময়টাই তাঁর। স্রোতের কোন দিকে এসব কিছুই আসলে তাঁর কাছে বড় ব্যাপার না। লিটন ব্যাট হাতে নামা মানেই রানের ফোয়ারা আর নতুন কোন শিল্পের জন্ম।
টেস্ট ক্রিকেটে এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানে পরিণত হয়েছেন। আর লিটনের মত ব্যাটসম্যানকে রঙিন পোশাকেও কতটা প্রয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিপিএলে যদি এভাবেই নিজেকে প্রমাণ করতে থাকেন তাহলে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। বিসিবি কী এই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটনকে পরিকল্পনায় রাখবে নাকি আগের সিদ্ধান্তেই অটুট থাকবে?