বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন মূলত তাঁর হার্ড হিটিং অ্যাবিলিটির কারণে। তবে ডিফেন্সটাও দারুণ পোক্ত। তাঁর আবার ইনিংস বড় করার ক্ষমতাও আছে। ক্লাসি ব্যাটসম্যান বললেও ভুল হবেনা। সামনের পায়ে দারুণ শক্তিশালী ও দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন। তাঁকে আসলে নির্দিষ্ট কোন ছাঁচে ফালানো যায় না। ফাফ ডু প্লেসিস আসলে কাস্টমাইজ প্রোডাক্ট। তিনি নিজে ক্রিকেটের আলাদা একটা জোনরা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের যে দুই একটা ব্যাটসম্যানের উপর আপনি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন তাঁদের একজন ফাফ ডু প্লেসিস। দলের প্রয়োজনে কখনো প্রতিপক্ষব বোলারদের উপরে ঝড় তুলতে পারেন, আবার প্রয়োজন হলে ইনিংসের গভীরে গিয়ে দলকে আগলে রাখতে পারেন। যেকোন মুহূর্তে, যেকোন কন্ডিশনে ফাফের বিকল্প শুধুই ফাফ।
গতবছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরো বেশি নজর দিবেন বলে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা এরপর আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ডু প্লেসিসের প্রয়োজন বোধ করেনি। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও জায়গা হয়নি তাঁর। যদিও বিশ্বকাপের আগেই আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন।
তবুও ফাফ ডু প্লেসিস, ইমরান তাহির ও ক্রিস মরিসদের ছাড়াই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা ফাফের হাতে নেই। তবে ফাফের হাতে যে ব্যাটটা আছে সেটা নিয়ে এখনো তিনি জাদু দেখান। বলা ভালো নিয়ম করে জাদু দেখান। শেষ আইপিএলেও চেন্নাইয়ের ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভ ছিলেন।
এবার বাংলাদেশে এসেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বিপিএল মাতাবেন বলে। বিপিএলে তাঁর শুরুটা অবশ্য খুব একটা ভালো হয়নি। মিরপুরের দুই ম্যাচে যথাক্রমে করেছিলেন ৬ ও ২ রান। তবে চট্টগ্রামে আবার সেই চেনা ফাফ।
আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে মূল নজরটা ছিল দুই ওপেনারের দিকে। আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে দারুণ ব্যটিং করেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। আরেকদিকে এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মত মাঠে নামলেন লিটন দাস। জয় অবশ্য দ্রুতই ফিরে গিয়েছিলেন।
তবে লিটন আর ফাফ মিলে চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইন আপকে একেবারে দিশেহারা করে ফেললেন। লিটন দাসের ক্লাসিক, গুছানো ইনিংসের সাথে চিরচেনা ফাফ। লিটনকে আরেকপ্রান্ত থেকে শুধু সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন। দুজনে মিলে ৫৫ বলে করলেন ৮০ রানের জুটি। লিটন ৪৭ রান করে ফিরলেও ফাফ আরো গভীর অবধি গেলেন।
এরপর আবার জুটি গড়লেন ক্যামেরোন ডেলপোর্টের সাথে। এবার আবার ফাফকে দেখা গেল ভিন্ন রূপে। ফাফ ও ডেলপোর্ট দুজনেই ব্যাট চালালেন সপাটে। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রীতিমত একটা ঝড় উঠলো। দুজনে এবার ৪৯ বল থেকে করলেন ৯৭ রান।
আর ৫৫ বলে তাঁর ব্যাট থেকে আসলো ৮৩ রানের ইনিংস। ইনিংসটিতে ছিল ৮ টি চার ও ৩ টি ছয়। ব্যাটিং করেছেন ১৫০.৯০ স্ট্রাইকরেটে। সবমিলিয়ে কুমিল্লার পুরো ইনিংসটাকে নিজের মত করে সাজিয়েছেন ফাফা। লিটনের সাথে খেলেছেন ইনিংস বড় করার জন্য। আর শেষদিকে ডেলপোর্টের সাথে খেলেছেন প্রতিপক্ষের বোলারদের বাউন্ডারিতে আছরে ফেলবেন বলে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একজন দর্শক ঠিক যা দেখতে চান তাই দেখালেন, কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা ব্যাটসম্যান থেকে যা চান তাই করে দিলেন। ফাফ শুধু নিজের খেলাটাই খেললেন। নিজের জাদুটাই দেখালেন। ফাফের এই জাদুটা কী প্রোটিয়ারা মিস করছে?