জমজমাট এক নিলাম হয়ে গেলো ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মেগা অকশন হয়ে গেলো। আগামী তিন আসরের স্কোয়াড গুছিয়ে নিলো ফ্রাঞ্চাইজি গুলো। ভুড়িভুড়ি টাকার ছড়াছড়ি। দু’দিনের সব আলো যেন নিজের দিকে কেড়ে নিলেন তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটার ঈশান কিষাণ।
১৫ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে নিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি কোন দল। চলুন ঢু মেরে দেখে আসা যাক নিলাম ঘরে কে কত অর্থকড়ি খরচ করলেন।
- চেন্নাই সুপার কিংস
গেলো বারের চ্যাম্পিয়ন দল চেন্নাই সুপার কিংস। সবারই কমবেশি নজর ছিলো তাঁদের দিকে। নিজেদের গত বারের তারকা ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসিসকে দলে ফেরাতে পারেনি চেন্নাই। তবে তাঁদের বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেনানী দীপক চাহারের পেছনে এযাবৎকালের সর্বাধিক অর্থ ব্যয় করেছে ফ্রাঞ্চাইজিটি।
সর্বোচ্চ ১৪ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছে তাঁকে। চারজন খেলোয়াড় রিটেইন করে ৪৮ কোটি রুপি নিয়ে নিলামে এসেছিলো চেন্নাই সুপার কিংস। ২৫ জনের স্কোয়াড বানাতে নিলামে দুইদিন ফ্রাঞ্চাইজি খরচ করেছে ৪৫ কোটি পাঁচ লাখ রুপি খরচ করছেন তাঁরা। ২.৯৫ কোটি রুপি চেন্নাইয়ের পার্সে বাকি ছিলো নিলাম শেষে।
- কলকাতা নাইট রাইডার্স
২০২১ সালের রানার্স আপ দল কলকাতা নাইট রাইডার্সও বেশ হিসেব কষেই খেলোয়াড় ভিড়িয়েছেন দলে। তাঁরাও চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের মতো চারজন খেলোয়াড় রিটেইন করেছিলেন এবং ৪৮ কোটি রুপি পার্সে নিয়েই বসেছিলেন নিলামের টেবিলে।
তবে শুরুতেই তাঁদের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায় পছন্দের দুই খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে। প্যাট কামিন্সের জন্যে ফ্রাঞ্চাইজিটি খরচ করে ৭ কোটি ৭৫ লাখ রুপি। তবে তাঁদের সবচেয়ে চড়া দামে কেনা খেলোয়াড় ভারতীয় সম্ভাবনাময়ী তরুণ ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ার। তাঁকে দলে নিতে ১২.২৫ কোটি রুপি খরচ করেছে দলটি। দিনশেষে ৪৫ লাখ রুপি অবশিষ্ট ছিলো তাঁদের ঝুলিতে। অতএব তাঁরা নিলামে খরচ করেছেন ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ রুপি খরচ করেছেন নাইট রাইডার্স ফ্রাঞ্চাইজি।
- মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
বাকি দুই জনের সমান সংখ্যক অর্থকড়ি নিয়েই নিলামে বসেছিলো আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। শুরু থেকেই তাঁরা খানিকটা ধীরে-সুস্থে পর্যবেক্ষণ করে নিলাম। অনেকক্ষণ বাদে তাঁরা বিডের লড়াইয়ে নামেন ঈশান কিষাণের জন্যে।
রীতিমত এবারের নিলামের রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ করেই তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ১৫.২৫ কোটি রুপি। তারপর আবার নিস্তবদ্ধতা নেমে আসে মুম্বাইয়ের টেবিলে। দু’চার খানা বিডে অংশ নিলেও নিজেদের সব অর্থকড়ি বাঁচিয়ে রাখেন জোফরা আর্চারের জন্যে। আট কোটি রুপিতে ইংল্যান্ডের বোলারকে নিজদের শিবিরে নিয়ে আসার পর বাকি দল গোছানোয় মনোযোগ দেয় মুম্বাই। শেষমেশ ৪৭.৮৫ কোটি অর্থ ব্যয়ে আগামী মৌসুমের দল গঠন করে মুম্বাই।
- দিল্লী ক্যাপিটালস
এবারের নিলামে বেশ সরব ছিলো দিল্লি ক্যাপিটালস। প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড়দের জন্যে তাঁদের হাঁকডাক ছিলোই। তবে বড়সড় হাঁকের মাঝে বেশ কম দামে দারুণ কিছু খেলোয়াড়দেরও দলে নিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। ৪৭.৫০ কোটি রুপি নিয়ে নিলামে বসেছিলেন তাঁরা।
তাঁদের প্রধান টার্গেটই যেন ছিলো স্বল্প দামে ভাল কিছু খেলোয়াড়দের নিজেদের ডেরায় ভেড়ানো। সর্বোচ্চ ৬.২৫ কোটি রুপি খরচ করেছেন তাঁরা। এই মূল্যে তাঁরা দলে নিয়েছেন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা ডেভিড ওয়ার্নার ও মিশেল মার্শকে। তাছাড়া মাত্র দুই কোটি রুপিতে তাঁরা দলে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমানকে। নিজেদের কম অর্থের পূর্ণ ব্যবহারটাই করেছে দিল্লি। ৪৭কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের।
- রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু
৫৭ কোটি রুপি ছিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের পার্সে। তাঁরা নিলামের শুরুতেই বেশ চড়া দামে কিনেছেন দুই জন খেলোয়াড়কে। ১০.৭৫ কোটি টাকায় তাঁরা প্রথম দলে ভেড়ায় আগের সিজনে ‘পার্পেল ক্যাপ’ জেতা হার্শাল প্যাটেলকে। এরপর সেই একই দামে তাঁরা কিনে নেন শ্রীলঙ্কার উদীয়মান তারকা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে।
তবে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর প্রথম কেনা খেলোয়াড় ছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস। সাত কোটিতে তাঁকে দলে নিয়েছিলো ব্যাঙ্গালুরু ফ্রাঞ্চাইজি। দুই দিনের নিলাম শেষে তাঁরা মোট খরচ করেছেন ৫৫ কোটি ৪৫ লাখ রুপি। দিনশেষে ঝুলিতে ১ কোটি ৫৫ লাখ রুপি থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২২ জন খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু।
- রাজস্থান রয়্যালস
মাত্র তিনজন খেলোয়াড় রিটেইন করেছিলো রাজস্থান রয়্যালস। তাই নিলামে আগে বেশ মোটা অংকের অর্থ নিয়েই শুরু করেছিলো রাজস্থান। ৬২ কোটি রুপি ছিলো তাঁদের হাতে। ১০ কোটি রুপিতে তাঁরা প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাকে দলে ভেড়ান। ভারতের হয়ে সম্প্রতি অভিষেক হওয়া প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা বেশ সম্ভাবনাময়ী একজন বোলার।
তাঁকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা ছিলো বিধায় তাঁকে দলে নিতে বিশাল অর্থ খরচ। তবে রাজস্থান রয়েলস নিজেদের বাজেটের দিকে লক্ষ্য রেখে দল সাজানোর চেষ্টা করেছেন নিলামের দুই দিন। ৯৫ লাখ রুপি বাকি ছিলো ২৪ জন খেলোয়াড়ের টিম গঠন করার পরও। নিলামে তাঁদের মোট ব্যয় ৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
- সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ
৬৮ কোটি রুপি, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের নিলাম শুরুর আগের অর্থের অংক। এই অর্থে তাঁরা ২৩ জন খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছেন। এরপরও তাঁদের হাতে দিনশেষে ১০ লাখ রুপি অবশিষ্ট ছিলো। সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটার নিকোলাস পুরানের জন্যে।
পুরানকে বাকি সবার মাঝ থেকে নিজেদের দলে ছিনিয়ে আনতে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপি ব্যয় করে সানরাইজার্স। বাকিটা সময় তাঁরা স্কোয়াড সাজানোর জন্যে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়েছেন নিয়ম করে। ২০২২ আসরের দল গোছাতে সানরাইজার্সের মোট খরচ হয়েছে ৬৭ কোটি ৯০ লাখ রুপি।
- পাঞ্জাব কিংস
সব থেকে কম মাত্র দুইজন ক্রিকেটারকে রিটেইন করেছেন পাঞ্জাব কিংস। সেদিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ৭২ কোটি রুপি ছিলো পাঞ্জাবের হাতে। বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার পর বেশ রয়েসয়েই খেলোয়াড় কিনেছে পাঞ্জাব। তাঁদের কেনা খেলোয়াড়দের মধ্যে লিয়াম লিভিংস্টোনের দাম ছিলো সর্বাধিক।
১১ কোটি ৫০ লাখ রুপি খরচ করেছে পাঞ্জাব লিয়াম লিভিংস্টোনের পেছনে। এছাড়া ২৫ জনের পূর্ণ দল গড়তে পাঞ্জাবের মোট খরচ হয়েছে ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ রুপি। নিলামের জন্যে নির্ধারিত ৯০ কোটি রুপি থেকে তাঁদের বেঁচে যায় ৩.৪৫ কোটি রুপি।
- গুজরাট টাইটান্স
নতুন দুই ফ্রাঞ্চাইজির একটি গুজরাট টাইটান্স। নবাগত ফ্রাঞ্চাইজির তত্ত্ববধানে বেশ একটা ভারসম্যপূর্ণ দল গঠনের প্রচেষ্টা করেছে গুজরাট। তাঁরা তাঁদের দলে সর্বোচ্চ নয় কোটি রুপির বিনিময়ে ভিড়িয়েছে রাহুল তেওয়াতিয়াকে।
তাছাড়া এই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতীয় হার্ড হিটার ব্যাটার হার্দিক পান্ডিয়াকে। নবাগত ফ্রাঞ্চাইজি ২৩ সদস্যের দল গঠন করতে সমর্থ হয়েছে। নিলাম শেষে তাঁদের ঝুলিতে অবশিষ্ট থাকা অর্থের অংক ১৫ লাখ রুপি।
- লখনৌ সুপার জায়ান্ট
নবাগত ফ্রাঞ্চাইজি লখনৌ সুপার জায়ান্টের মূল লক্ষ্য টুর্নামেন্টে লড়াই করার মতো একটা দল গঠন করা। সেই দল গঠনের প্রচেষ্টার শুরুতেই তাঁরা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেন অভিজ্ঞ লোকেশ রাহুলের কাঁধে।
তাছাড়া নিলাম থেকে তাঁরা তাঁদের পছন্দ মতো খেলোয়াড় কেনার প্রচেষ্টা চালায়। নিজেদের পকেটে থাকা সব অর্থকড়ি খরচ করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট দল গঠন করত সমর্থ হয় লখনৌ সুপার জায়েন্ট। এর মধ্যে আবেশ খানকে নিতেই তাঁরা ব্যয় করেছেন ১০ কোটি রুপি।