সাকিব আল হাসান, শব্দগুচ্ছের মধ্যে একটা আলগা পাওয়ার আছে, একটা অহমিকা মতো। যেখানে নানা পদের সুঘ্রান পাওয়া যায়।
সাকিব আল হাসান শব্দটা শুনলে আমার মনে পড়ে একটা ছেলে লেগুনায় চড়ে শ্যামলি থেকে মিরপুর স্টেডিয়ামে যাচ্ছে।
সাকিব আল হাসান শুনলে মনে হয় একটা মানুষ আমাকে আমার মাত্র দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণের আড্ডায় একটা বিশেষ জায়গা করে দিয়েছে।
জায়গার নাম মিকাডো, শিলংয়ের একটা পাব, সেখানে একটা গ্রুপের সাথে পার্টির মাঝেই মোবাইল স্ক্রিনে আমার আর সাকিবের একটা ছবি ওয়ালপেপারে ভেসে ওঠে! এরপর আর পায় কে, ওই পাব ছাড়িয়ে যেন চারিদিকে তোলপাড় সাকিবের বন্ধু এখানে। ওরা তো জানেনা সাকিবকে হয়তো ১০০ এসএমএস দিলে একটা রিপ্লাই দিবে ‘ওকে’ বা ‘দেখি’। এমন পরিস্থিতি হইছিলো বিল্লু সিনেমায় ইরফান খানের।
আমার ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার পেছনে সাকিব আল হাসানের দায় আছে। সেটা শুরু ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবরে, ডেনিয়েল ভেট্টোরির সাথে একটা ভদ্রস্থ যুদ্ধ চলতেছিল, বা হাতি স্পিন প্লাস ব্যাটিং এসব নিয়ে।
মিরপুরে আমার স্টেডিয়ামে বসে দেখা প্রথম ম্যাচে সাকিব ১০০+ রান করলো, সাথে তিন উইকেট!
সাকিব আর তার দল পাত্তাই দেয়নাই ভেট্টোরির দলকে। সেই যে শুরু সাকিবের আর কোনো ট্র্যাকব্যাক নেইা।
আমারও নাই, আমি কেবল একটা অনুপ্রেরণার গল্প বলে যেতে পারি। বস্তুত আমি সফলতার কোনো নির্দিষ্টতা পাইনা। কারণ আমার দপ্তরে অনেক নরমাল দিনেও নিজেকে সফল মনে হয় না। আবার রাস্তায় দাঁড়ায়ে ইট হাতে কোনো একটা ইস্পাতের খাম্বায় মারতে পারলেও সফল মনে হয়।
কিন্তু সাকিব আল হাসান কিন্তু এভাবে ভাবে না। সে আনপ্ল্যান্ড ওয়েতে কাজ করে গেছে। আমিও তাই।
সাকিব কোনোকিছুতেই স্পেশাল না, বোলিং সাদামাটা, ব্যাটিং অগোছালো।
সাকিব কেবল জানে সময় আর কাজের গুরুত্ব। এই জানাটাই সাকিব থেকে শিখতেছি জীবনে। সময়মতো কাজটা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।
এই শিখে যাওয়ার অন্ত নাই।
২০১২ সালে ঠিক আমার জন্মদিনের দিনই বিয়া করে সাকিব। কী যে আনন্দ পাইছিলাম। টিএসসিতে নিজেই একটা লাল শার্ট পরে ফুল কিনসিলাম গোলাপ। বন্ধুদের সাথে কেএফসিতে খাইতেও গেছিলাম।
আমার জীবনের চাওয়া পাওয়া অনেক বড় আবার অনেক ছোট। কোনো এক বেলা শাহরুখের সাথে একদিন দেখা হওয়া আমার জীবনের একটা পূর্ণতা বিন্দু এনে দিতে পারে।
যেই লোকটা আমার দেশের, যেই লোকটা আমার ভালোবাসার সে যখন শাহরুখের একটা স্বপ্ন পূরণ করে দিলো মান্নাতের ঘরে চাঁদের আলো ফোটালো আইপিএল শিরোপা দিয়ে।
সাকিব বলেই সম্ভব। সাকিব বলেই সম্ভব হয়েছে যে আইপিএলে ভারতেরই অনেকে মানে ধোনি আর কোহলি ছাড়া! একটা টিমে রেগুলার হয়নাই সেখানে সাকিব বাংলাদেশ থেকে গিয়ে এক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে দিনের পর দিন খেলে গেছেন! সাকিব বলেই সম্ভব।
চার থেকে পাঁচে, পাঁচ থেকে ছয়ে সাতে, আটেও নামসে সাকিব। ভক্তরা কী বলে প্যারা নাই। সাকিব এখানে টিমম্যান। টিম যেখানে নামায় সেখানেই সে নামবে এবং খেলবে। এবং জেতাবে। আপনি ওয়াসিম আকরামের মুখটা মনে করে দেখেন সেই আইপিএলের উইনিং শটের পরে। সাকিব বলেই সম্ভব।
খেলাটাই আসল। এমন দৃষ্টিকটু ব্যাট ধরা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই, টেস্ট ম্যাচে,তাও নিউজিল্যান্ডে! কেউ ২১৭ রান করার স্বপ্ন দেখসে? সাকিব বলেই সম্ভব।
একটা দলে দুইটা ম্যান অকার্যকর, সেরা বোলারের হাত থেকে ওভারপ্রতি ৮-৯ রান বের হচ্ছে। সেখানে ৬০০+ রান, ১০+ উইকেট নিয়ে একা সেমিতে তোলার একটা দুর্নিবার চেষ্ট! সাকিব বলেই সম্ভব!
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের সাথে টেস্ট জয়ের সময় উইকেট সেলিব্রেশনগুলো মনে করে দেখেন। সাকিব বলেই সম্ভব।
বাংলাদেশ যখন নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের শততম টেস্ট খেলছিল শ্রীলঙ্কার সাথে। একটা দিনের শেষভাগে সাকিব ব্যাট হাতে নেমে করলো ৬ বলে ১৮। মানে একটা ব্যাকল্যাশ গেছে ওদিন ওর ওপর! পরের দিন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যত বড় দলের সাথে টেস্ট জিতেছে সবগুলায় সাকিবের হাত। ইভেন মিরাজ যেবার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হলো ইংল্যান্ডের সাথে সেই দ্বিতীয় ইনিংসেও জো রুট, বেন স্টোকসের উইকেট সাকিবেরই নেয়া।
এরপর মানুষ জাস্ট এসে বলবে সাকিব আল হাসান বেয়াদব এবং রিয়াদ ভাইকে সেঞ্চুরি করতে দিতে চায়নাই সে। এরপরই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি জীবনে কারো সমালোচনা কানে নিবো না যতক্ষণ না আমার দ্বারা কারো ক্ষতি হয়।
বাংলাদেশের কোনো সেকেন্ড বেস্ট ক্রিকেটার নাই আমার চোখে। বাংলাদেশে যদি দশটা ভালো ক্রিকেটারের নাম লিখতে বলেন এক থেকে দশ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের নাম লিখে দিয়ে আসবো।