ছেলেটির বয়স তখন ১৪। তখনই তার লক্ষ্য বিরাট কোহলি। সে বিরাট কোহলির মত ব্যাটসম্যান হতে চায়, বিরাট কোহলির মত নেতা হতে চায়।
তার এই চাওয়া পূরণ করতে কোচ ১৪ বছর বয়সে তাকে সিনিয়র দলের অধিনায়ক করে দিলেন। তার অধীনে দলে খেলছেন তিন-চার জন রঞ্জি খেলা খেলোয়াড়। এই কিশোর চমকে দিলো। সকলকে দারুন সামলে হয়ে উঠলো দলনেতা।
তার কোচ সেই সময়ই বলেছিলেন, ‘এই ছেলে একদিন কোহলিকে ছুঁয়ে দেখবে।’
বিরাট কোহলি এখনও দূরের ব্যাপার। তবে এরই মধ্যে ছেলেটি একটি বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছে দলনেতা হিসেবে। আর আজ অমর এক কীর্তি করে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেললো সেই ছেলেটি। ভারতের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন সেই ইয়াশ ধুল।
হ্যা, ইয়াশ ধুল বুঝিয়ে দিলেন তিনি থাকতে এসেছেন।
ভারতীয় ক্রিকেটের যুব দল ইদানিং পৃথিবীতে এক ও অনন্য হয়ে উঠেছে। যুব বিশ্বকাপ জেতাটা অভ্যেসে পরিণত করে ফেলেছে তারা। না জিতলেই বরং খবর হয়। ফলে ইয়াশ ধুল যখন বিশ্বকাপ জিতলেন, সেটা খুব বড় একটা চমক হয়নি। তবে ধুলের নিজের ব্যাপারটা একটু নজরকাড়াই ছিলো।
বিশ্বকাপের মধ্যে ধুল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেশ কয়েকটা ম্যাচ মিস করেছেন। এরপর আদৌ খেলতে পারবেন, এমন নিশ্চয়তা ছিলো না। কিন্তু ভারতীয় দলের অধিনায়ক সেমিফাইনালে ফিরে এলেন। লো স্কোরিং ম্যাচে ছোট্ট একটা ইনিংস খেললেন। তবে সেরাটা ফাইনালের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন।
ফাইনালে ধুল সেঞ্চুরি করে ইতিহাসে নাম লেখালেন। ট্রফি জেতার পাশাপাশি নিজেও সেরাদের কাতারে নাম লেখালেন।
ভারতীয় যুব দলের একটা ব্যাপার হলো, বয়স থাকলেও কোনো খেলোয়াড়কে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে পাঠানো হয় না। ফলে ট্রফি জেতার সাথে সাথে ধুলদের সবার হানিমুন শেষ হয়ে গেলো। সিনিয়র স্তরে ওঠার সংগ্রাম শুরু হলো।
কদিন আগেই হয়ে যাওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামে ধুল দলও পেয়ে গেলেন। তার জন্য সে লড়াই তোলা রইলো। এর আগেই রঞ্জি অভিষেক হয়ে গেলো তার। তামিল নাড়ুর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই দিল্লীর এই ওপেনার খেললেন ১৫০ বলে ১১৩ রানের এক ইনিংস। এটাই যথেষ্ঠ ছিলো নিজেকে চেনানোর জন্য। এরপর ম্যাচ ড্র করার পথে ধুল দ্বিতীয় ইনিংসে ২০২ বলে অপরাজিত ১১৩ রানের ইনিংস খেললেন।
এই দুই ১১৩ রান বলে দিলো যে, ধুল থাকতে এসেছেন।
রঞ্জি অভিষেকেই জোড়া সেঞ্চুরি করাটা কোনো নিশ্চয়তা দেয় না। এর আগে নরি কন্ট্রাক্টর গুজরাটের পক্ষে এবং বিরাগ আওয়াতে মহারাষ্ট্রের পক্ষে অভিষেকে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন। নরি কন্ট্রাক্টর কালক্রমে ভারতের অধিনায়ক হয়েছিলেন। ওদিকে বিরাট মাত্র সাতটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে হারিয়ে গেছেন।
ইয়াশ ধুলের সামনে তাই দুটো রাস্তাই খোলা। তিনি কোনদিকে যাবেন, সময় বলবে। তবে, আপাতত সময়টা তাঁরই পক্ষে।