গ্রেট খোঁজা বৃথা তাই…

ধরুন আমি যদি বলি ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার নির্ণয় করা যাবে না, বা যায় না তাহলে নিশ্চয়ই এক বিশাল আলোচনা সভাতেও এই তর্কের অবসান হবে না। ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্তত এই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন নামক কোন পাতা যুক্ত হয়নি। ভবিষ্যতেও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

দলগত খেলা ক্রিকেটে যে সেরাদের একজন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাবে না বিষয়টা এমন নয়। অবশ্যই একটু ইতিহাসের মহাসাগরে ডুব দিলে মণি-মুক্তার মত ক্রিকেটারদের খুঁজে পাওয়া যাবে। সেদিক থেকে হয়ত অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় তাঁর।

কোন বিশেষণে ঠিক তাঁকে বাঁধবেন? আজ অবধি তাঁকে বর্ণনা করার মত বিশেষণ হয়ত কোন ভাষাতেই সৃষ্টি হয়নি। এমন এক অভূতপূর্ব রেকর্ডের মালিক হওয়ার পরও সমালোচকরা তাঁকে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার মানতে নারাজ। এর পেছনে অবশ্য তাঁদের যথার্থ যুক্তিও রয়েছে। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান যে সময়ে খেলেছেন সে সময় তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল অনেকাংশেই ধ্রুব, ইংল্যান্ড।

হয় ব্র্যাডম্যান খেলেছেন নিজের দেশের মাটিতে না হয় ইংল্যান্ডের। তবে দু’টো কন্ডিশনই তো তাঁর বেশ চেনা। আঙুলের স্পর্শেই পুরোটা বুঝে উঠতে পারতেন। তাছাড়া চেনা প্রতিপক্ষ, চেনা বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট করতে খুব একটা কষ্ট হয়ত হয়নি তাঁর। এমন মতও দিয়েছেন বহু সমালোচক। আবার একথাও সত্য কোন রকম প্রতিরক্ষা ছাড়াই আগ্রাসী, ভংয়কর সব পেস বোলারদের সামলেছেন তিনি নির্ভয়ে।

এ সব কিছু বিচারে তাঁকে সেরাদের একজন হিসেবেই মেনে নিতে চান অধিকাংশ সমালোচকরা। তাছাড়া হয়ত তিনি হতে পারতেন সর্বকালের সেরা যদি না ক্রিকেট মাঠে খোদ ‘গড অব ক্রিকেট’ হয়ে শচীন টেন্ডুলকার হাজির হতেন। ব্র্যাডম্যান অনেক এমন রেকর্ড রয়েছে যা ভাঙ্গতে পারেননি শচীন। আবার বিপরীত চিত্রও চিত্রিত হয়েছে ক্রিকেটের ইতিহাসে।

শচীন টেন্ডুলকার বহু রেকর্ডের প্রথম মালিক। সেদিক থেকে আবার রয়েছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান পিছিয়ে। তাহলে হয়ত সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে শচীন হতে পারেন সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। না তিনিও হতে পারলেন না। এখানেও সমালোচকদের যুক্তি রয়েছে। শচীনের সব রেকর্ডে ভারতের জয় তো আর সুনিশ্চিত হয়নি কিংবা পরাজয়ও এড়াতে পারেনি ভারত। হ্যাঁ, একথা সত্য।

তবে একথাও সত্য এক সময় প্রতিপক্ষের নীতি ছিল শচীনকে ফেরাও আর ম্যাচ জেতো। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ঘটেছিলও তাই। তবুও ওই যে ম্যাচ জেতানোর অপারগতা তাঁকে বসাচ্ছে না সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের আসনে। এই দুইজন ছাড়াও আরও যাদের সম্ভাবনা ছিল সর্বকালের সেরা খেতাব পাওয়ার তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রিকি পন্টিং, ব্রায়ান লারা, জ্যাক ক্যালিস।

তবে এরাও মানুষ, এদেরও ছিল দূর্বলতা। সেই দূর্বলতা ক্রিকেটের মাঠেও ভেসে উঠেছে। রিকি পন্টিং নিঃসন্দেহে একজন ভাল অধিনায়কের পাশাপাশি একজন ভাল ব্যাটার ছিলেন। তাঁর দূর্বলতা তিনি নাকি চাপ সামলে নিতে হিমিশিম খেতেন। অন্যদিকে, ব্রায়ান লারা ছিলেন শুধুই একজন রান সংগ্রাহক। তিনি কখনোই একজন ‘টিমম্যান’ হয়ে উঠতে পারেননি। আর জ্যাক ক্যালিসের ক্যারিয়ারে ম্যাচ জেতানো ইনিংসের নাকি বড্ড অভাব। এসব কিছুই সময়ে সময়ে শোনা গিয়েছে সমালোচকদের মুখ থেকে।

যদি বোলারদের হিসেবটা টানি তাহলে কোন রকমের দ্বিধা ছাড়াই শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরণ সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার যোগ্য ক্যান্ডিডেট হতে পারেন। তাঁরা বল হাতে তাঁদের নিজ নিজ দলকে বহুবার জয় এনে দিয়েছেন। তাছাড়া রেকর্ডও গড়েছেন সমানতালে। তবুও ক্রিকেটে কেন জানি বোলাররা খুব অবহেলিত। তাঁরা রয়ে যান সেরা ক্রিকেটারের তালিকার বহুদূরে।

প্রতিটা মানুষই সমালোচক। আর একজন মানুষের মন তুষ্ট করা গেলেও, একদল মানুষের মন তুষ্ট করাটা বেজায় কষ্টসাধ্য। তাছাড়া সমালোচকদের মতে, সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হবেন তিনিই যিনি রান করবেন, উইকেট নেবেন এবং ম্যাচ জেতাবেন। সেই সাথে রেকর্ড বইয়ে বারবার নিজের নাম লেখাবেন।

দলগত খেলায় তো আর চাইলেই একা ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। চাইলেই তো আর এক জোড়া হাত পারে না প্রতিপক্ষের বাইশ জোড়া হাতের সাথে বাইশ গজের শক্ত মাটিতে জয়ের লড়াই চালিয়ে যেতে। এ তো চিরসত্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link