পুনর্বিবেচনায় পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা

খেলাধুলার জগৎতাই তো এমনই। ‘জয় পরাজয় নয়, অংশগ্রহণই মূল ব্যাপার’ – এই কথাটা অনেক ব্যবহৃত হলেও খুবই ক্লিশে। আর বাস্তবতা হল প্রতিযোগীতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা রেষারেষিই খেলাধুলার আসল সৌন্দর্য্য।

আধুনিক সব খেলাধুলাতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। টেনিসে রজার ফেদেরার প্রত্যেকের উপর দাপট দেখালেও আরেকপ্রান্তেই ছিলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল। ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এক ধাপ এগোলে, তার চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে যান লিওনেল মেসি।

ক্রিকেটেও ব্যাটার কিংবা বোলারদের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বীতা আছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বীতা অনেকটা উপরেই! ক্রিকেটের মাঠের খেলা দু’জনই ছেড়ে গেলেও সেই রোমাঞ্চ যেন আজো টিকে আছে।

শচীনের অভিষেকের ৭ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন রিকি পন্টিং। কেউ কখনো চিন্তাও করেনি শচীনের রেকর্ডের সাথে প্রতিযোগিতা হবে পন্টিংয়ের! পুরো ক্যারিয়ারে ২৭ হাজার রানের মালিক পন্টিং!

অপরদিকে, শচীনের রান ৩৪০০০! দু’জনের মাঝে রানের ব্যবধানটাও খুব বেশি নয়। আর একটা সময় পন্টিং বেশ পাল্লাই দিয়েছেন শচীনের সাথে।

১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েছিলেন শচীন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে থিতু হতেও সময় নিয়েছিলেন বছর তিনেক। ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে শচীনের অসাধারণ সেই সেঞ্চুরিটা যেনো রেকর্ডগড়া ক্যারিয়ারের ইঙ্গিত দিয়েছিলো।

তবে, ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি সেরা ফর্মে ছিলেন না। অপরদিকে, রিকি পন্টিংয়ের ক্যারিয়ারের শুরু অভিষেকেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস দিয়ে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই পন্টিংকে ভাবা হতো ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবে। আর স্টিভ ওয়াহর অবসরের পর পেয়ে যান সেই দায়িত্বটাও!

শচীন ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করেছে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ মৌসুমে। অপরদিকে, ২০০১ থেকে ২০০৭/০৮ অবধি উড়ন্ত ফর্মে ছিলেন পন্টিং। রিকি পন্টিং যখন ফর্মের তুঙ্গে, কেউই তাঁকে থামাতে পারেনি!

ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে তাঁর টেস্ট গড় ছিলো প্রায় ৬০! অধিনায়কত্বও ছিলো দুর্দান্ত। যদিও তাঁর সময়ে অজিরা ছিলো চ্যাম্পিয়ন দল। স্টিভ ওয়াহর অধীনে গড়া সেই দলটাই পরে টেনে নিয়েছিলেন পন্টিং।

শচীনের ওয়ানডে রেকর্ড ছিলো ধরা ছোয়ার বাইরে। নব্বইয়ের দশকে রঙিন জার্সিতে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। তবে টেস্টে তখনো তিনি সবে একজন শিক্ষানবিশ!

পরিসংখ্যান বিবেচনায় পন্টিং যখন ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছিলেন তখন তিনি শচীনের সেরা সময়ের পারফরম বিবেচনায় চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন! ২০০৮-০৯ মৌসুমে দু’জনেই ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে! ওই মৌসুমে দু’জনের ব্যবধান ছিলো ২ সেঞ্চুরি আর ১৫০০ রানের!

২০০৯-১১ তে শচীনের সময়টা ছিলো খারাপ-ভালো মিলিয়েই। তবে পন্টিংয়ের ফর্ম তখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি সহ পুরো সিরিজেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন শচীন।

উল্টোদিকে তিনটি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেও শচীনের চেয়ে বেশ পিছিয়েই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট পন্টিং। এরপরই রেকর্ড বিবেচনায় এই রাইভালিটি শচীন-ক্যালিসে রুপান্তর হয়।

দুই কিংবদন্তি তারকাই একে অপরের দলের বিপক্ষে খেলেছেন দুর্দান্ত সব ইনিংস। অবশ্য ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে শারজাহতে পন্টিংয়ের সেই ১৪০ রানের ইনিংস পুড়িয়েছে ভারতীয় সমর্থকদের।

এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার শেষটাও হয় ২২ গজেই। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ৪ লাখ ডলারে কিনে নেয় রিকি পন্টিংয়ে।

আর সেই মুম্বাইয়েই খেলতেন শচীন। দুই কিংবদন্তি তখন খেলেছিলেন এক দলের হয়ে! ঠিক যেমনটা হতো রাফায়েল নাদাল-রজার ফেদেরার একসাথে ডাবলস খেলেছেন কিংবা মেসি-রোনালদো একই দলের হয়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেললে!

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স পন্টিংকে দলে নেওয়ার মাধ্যমে যেন ইতি টেনেছিল ক্রিকেট মাঠের সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীতার! মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কারণেই প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে সতীর্থ হয়েছিলেন শচীন-পন্টিং। সেখান থেকে আবার তাঁরা এখন প্রতিদ্বন্দ্বীই। কারণ, শচীন মুম্বাইয়ে থাকলেও পন্টিংয়ের ঠিকানা এখন দিল্লী ক্যাপিটালসের ডাগআউট।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেও এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার নজীর আর কোথায় মিলবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link