ক্যারিয়ারের শুরুটা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। যেখানে বাংলাদেশের পূর্ব পরিসংখ্যান মোটেও শুভকর নয়। হ্যামিল্টনের পেস, বাউন্সি কন্ডিশনে পেসারদের সামনে স্পিনাররা সেখানে নিরুপায়। নতুন কারো জন্য এমন অবস্থায় মানিয়ে নেওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য; তাও সেটা যদি হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে! এইতো বছরখানেক আগে এই মার্চ মাসেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় স্পিনার নাসুম আহমেদের।
বিরুদ্ধ কন্ডিশন, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের হতশ্রী পরিসংখ্যান – সব মিলিয়ে নাসুমের কাছ থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা ছিলো না কারোই। এমনকি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অভিষেক হওয়ায় অল্পতেই ক্যারিয়ার থমকে যেতে পারে এই স্পিনারের এমনটাও ছিলো আশংকা। করোনার প্রকোপের মাঝে দেখতে দেখতে কেঁটে গেলো এক বসন্ত! আর এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে উঠে এসেছেন নাসুম!
হুমকির মুখে থাকা সম্ভাবনাময়ী এক তরুন স্পিনার সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে দেখা পেয়েছেন সফলতার। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে মতো সেরা দশে উঠে এসেছেন নাসুম। ৬৩৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে দশে অবস্থান করছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার! এই সিরিজের আগে নাসুমের অবস্থান ছিলো ১২তে। আফগানদের বিপক্ষে বল হাতে দাপট দেখিয়ে প্রথমবারের মতো নাসুম এখন সেরা দশে!
বল হাতে স্পিন ভেলকি দেখিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ অসাধারণ অভিষেকই হয়েছিলো নাসুমের। অভিষেকে ৩০ রানে ২ উইকেট! নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত বোলিং। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি হতাশাজনক পারফরম্যান্স! হারারেতে ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে কোনো নিতে পারেননি নাসুম! সমালোচনার শুরুটাও এখানেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচে বেধরক মার খাওয়ায় প্রশ্ন উঠছিলো নাসুমের সামর্থ্য নিয়ে! জাতীয় দলে টিকে থাকা নিয়ে ছিলো সংশয়।
এরপরই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচে ৮ উইকেট! প্রথম টি-টোয়েন্টিতেই নেন ১৯ রানে ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে শিকার করেন ৪ উইকেট। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখালেও বল হাতে তিন ম্যাচেই উইকেটের দেখা পান নাসুম। দলের পারফরম্যান্স অনুযায়ী খুব বেশি খারাপও করেননি তিনি!
সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে নাসুমের টানা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে বাতলে দিয়েছে সফলতার পথ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই সাদামাটা পারফরম্যান্সের পর যেনো বদলে গেছে নাসুমের ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের স্পিন বিভাগের সাকিবের সাথে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখনও অনেকটাই নির্ভরযোগ্য নাসুম।
বিদেশের মাটিতে সেভাবে পরীক্ষার মুখোমুখি না হওয়ায় এখনো নাসুমের সামর্থ্যের সাথে একটি কিন্তু আছে! তবে দেশের মতো দেশের বাইরেও এভাবে সেরাটা দিতে পারলে সব সংশয়, সমালোচনা আর কিন্তুর অবসান ঘটিয়ে নাসুম নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন সাফল্যের সুউচ্চ আসনে।
তবে নাসুমের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে অগ্নি পরীক্ষা। আসছে মাস কয়েক বাদেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পাড়ি জমাবে বাংলাদেশ দল। নাসুমের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স জানান দিচ্ছে নিঃসন্দেহে তিনি থাকবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সফল এই স্পিনারের আসল পরীক্ষাটা হয়তো হবে তাসমান পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়াতে! সে পরীক্ষায় উতরে গেলেই আর প্রশ্ন উঠবে না নাসুমের সামর্থ্য নিয়ে। তবে আপাতত ক্রিকেট মাঠের সবুজ গালিচায় টি-টোয়েন্টির সেরা স্পিনারদের একজন হিসেবেই থাকছেন তিনি!