রোলার-কোস্টার রাইড ও ফাইটার রাব্বি

২০০৫ সালে কার্ডিফে আশরাফুলের সেই নক, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের পেস আক্রমণের সামনে ড্যাশিং তামিম ইকবাল কিংবা সেই বিশ্বকাপেই দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিখ্যাত কিছু জয় এবং সেসব জয়ের নায়কেরা। তবে এখন বাংলাদেশ জেতে আসে কয়েকজন পারফর্মারের হাত ধরে।

এখন আর বাংলাদেশকে শুধু সাকিব, তামিমদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়না। যেমন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে জয় এনে দিয়েছিলেন এবাদত হোসেন, মাহমুদুল হাসান জয়রা। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই জয়ে তো পুরো দলই যেন নায়ক। সাকিব, রাব্বি, শরিফুল, তাসকিন, মিরাজ সবাই নিজেদের কাজটা করেছেন।

তবুও একজন একটু বাড়তি নজর কাড়েন, যার প্রতি বাড়তি ভালো লাগা কাজ করে। গতকাল বাংলাদেশের সেই নায়ক ছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। তামিম-লিটন বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল শুরু এনে দিলেও রাব্বি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। রান রেট ছিল চার এর কাছাকাছি। তামিম, লিটন, মুশফিকের উইকেট হারিয়ে তখন বাংলাদেশ বেশ চাপেই।

সবাই তখন তাকিয়ে ছিল সাকিব আল হাসানের দিকে। তবে শুধু বিপর্যয় কাটিয়ে উঠানা, রান রেট বাড়িয়ে নেয়ার চাপও ছিল তখন। আর সেটা করতে হলে দুই প্রান্ত থেকেই রান আসা জরুরি ছিল। আর সেই কঠিন সময়েই সাকিবের যোগ্য সঙ্গী হয়ে কাজটা করলেন ইয়াসির রাব্বি।

বাইশ গজে নেমে সাকিবের সাথে কথা বলেছেন। উইকেট বোঝার চেষ্টা করেছেন। তারপর দুজনে মিলে সেঞ্চুরিয়নে প্রোটিয়া বোলারদের রীতিমত শাসন করেছেন। তবে শুরুর কয়েকটা বল একটু দেখে খেলেছিলেন ইয়াসির। সেটাও নাকি সাকিবের পরামর্শেই।

সাকিবের সাথে কী কথা হচ্ছিল তখন সেটা নিয়ে রাব্বি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাকিব ভাইকে যখন উইকেট নিয়ে জিগ্যেস করলাম, তিনি আমাকে সরাসরি বললেন এটা বেশ ভালো উইকেট। তিনি বললেন  পাঁচ বল খেললেই উইকেট বুঝে যাবে। তারপর বড় শর্ট খেলতে পারবে।’

রাব্বি সত্যিই পেরেছেন। একবার উইকেট বুঝে উঠার পর প্রোটিয়া পেসারদের দারুণ ভাবে সামলেছেন। তাঁর ৫০ রানেই ইনিংসেই বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের পথে হেটেছে। যদিও এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে নামলেও ব্যর্থ হয়েছিলেন।

যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে তাঁর অনেক কিছুই প্রমাণ করার ছিল। প্রায় তিনবছর দলের সাথে থেকেও একাদশে সুযোগ পাননি। এখন সুযোগটা কাজে লাগাতেই হতো রাব্বিকে।

আর সবচেয়ে কঠিন সময়েই রাব্বি তার সেরাটা বের করে আনলেন। অবশ্য এটিই তো রাব্বির পুরনো অভ্যাস। জীবনে বারবার লড়াই করে এসেছেন এই ক্রিকেটার। চট্টগ্রামে বাবার হাত ধরে ক্রিকেট খেলতে যাওয়া ছোট্ট ইয়াসির একসময় তাঁর শরীরের গড়নের কারণে কটূক্তির স্বীকার হয়েছেন। তবুও রাব্বি তাঁর লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন।

এরপর জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পরেও খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। মাঝে কতজনে অভিষেক হলো কিন্তু রাব্বি খেলতে পারেননা। সেই আক্ষেপও ছিল। টেস্টে সুযোগ পেলেন তাও সাকিবের জায়গায়। সাকিব ফিরে এলেই তাঁর জায়গা নিয়ে টান পড়ে। এরমধ্যেই একবার এক্সিডেন্ট করে চার মাস বিছানায় পড়ে ছিলেন। সেখান থেকেও লড়াই করে ফিরে এসেছেন।

এবার ওয়ানডে ফরম্যাটেও কঠিনতম কন্ডিশনে নিজেকে প্রমাণ করলেন। এই ম্যাচের আগে টাইগারদের টিম হোটেলে এবি ডি ভিলিয়ার্স এসেছিলেন। ডি ভিলিয়ার্সের কথাও নাকি অনেকটা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে রাব্বিদের। তিনি বলেন,’ ‘এবি ডি ভিলিয়ার্সও আগের দিন আমাদের হোটেলে এসেছিলেন। তিনি কিছু কথা বলেছিলেন যেটা আমার খুবই কাজে লেগেছে। আফগানিস্তান সিরিজে আমি ভালো করতে পারিনি। আজকের পারফরম্যান্স আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে।’

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link