যে জেতে, সেই-ই সিকান্দার

‘Survival of the fittest’ - ডারউইনের তত্ত্ব বোঝাবুঝির কচকচিতে না ঢুকে বরং এই মন্তব্যটা প্রত্যেক ঘরে যেন বাস করে। সবাইকে কোয়ান্টাম টানেলিং বুঝতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সবাই যে ফটোইলেকট্রিক এফেক্ট বুঝবে, তাও অনভিপ্রেত। ঈশ্বর-টিশ্বর অন্যরা বলুক, দিনের শেষে অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে ঐ লোকটা স্টকহোমে যখন নোবেল নিতে উঠছে, সে কিন্তু স্টুডেন্ট লাইফে ফিজিক্সে ফেল করা একজন ছাত্র। লড়াই, জেদ সব ফিরিয়ে দেয়। রেয়াত কাউকে করে না, ঈশ্বরকেও না। যে জেতে, সেই-ই সিকান্দার!

বেশিদিন নয়, এই বছরখানেক আগের কথা। একদল স্যুট-বুট পরিহিত ভদ্রলোকদের সমাবেশ ঠিক করল, তারা নিজেদের ফুটবল লিগ বানাবে। বেশ, ভাল কথা। কিন্তু ভাল কথা নয়। কেন? এমন কী শর্ত রয়েছে যে ভাল নয় সে প্রস্তাব? খুব সহজ।

ফুটবলের পরিভাষায় ‘জায়ান্ট টিম’ বলতে যাদের বোঝায়, অর্থাৎ পকেট যাদের বড্ড ভারি – অর্থনৈতিক দিক থেকে মারাত্মক সক্ষম সেই সমস্ত টিমই খেলবে সে লিগে। এই যেমন রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-টিটি এরা আর কী। ছোট টিমদের প্রবেশ নিষেধ। যেন অদৃশ্য দেওয়াল গোটা ফুটবল দুনিয়া জুড়ে।

অন্ধকার, বদ্ধ ঘরে পড়ে ধুঁকতে থাকা ছোট ছেলেমেয়েদের দল ঘুলঘুলি দিয়ে উঁকি মেরে দেখবে যে বড় দাদা-দিদিরা বাইকে করে সারা পৃথিবী ঘুরছে, তোফায় আছে… পুঁজিবাদীদের শাসনে যা ইচ্ছে তাই। আত্মদম্ভের সে ঘরে ফজল মিঞারা স্ট্রিকলি প্রহিবিটেড। সুতরাং ফুটবলকে যারা জীবনের প্রতিভূ বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, তারা প্রতিবাদ করল। ঘোরতর প্রতিবাদ। ‘আমাদের শক্তি মেরে, তোরাও বাঁচবিনে রে…’

‘Survival of the fittest’ – ডারউইনের তত্ত্ব বোঝাবুঝির কচকচিতে না ঢুকে বরং এই মন্তব্যটা প্রত্যেক ঘরে যেন বাস করে। সবাইকে কোয়ান্টাম টানেলিং বুঝতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সবাই যে ফটোইলেকট্রিক এফেক্ট বুঝবে, তাও অনভিপ্রেত। ঈশ্বর-টিশ্বর অন্যরা বলুক, দিনের শেষে অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে ঐ লোকটা স্টকহোমে যখন নোবেল নিতে উঠছে, সে কিন্তু স্টুডেন্ট লাইফে ফিজিক্সে ফেল করা একজন ছাত্র। লড়াই, জেদ সব ফিরিয়ে দেয়। রেয়াত কাউকে করে না, ঈশ্বরকেও না। যে জেতে, সেই-ই সিকান্দার!

এই সিজনে অপ্রতিরোধ্য অ্যায়াক্স, যারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে ছ’টা ম্যাচের ছটাই জিতে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে এসেছিল, তাদের হারিয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় করল আদতে নামে-ওজনে ছোট দল বেনফিকা। সেই বেনফিকা, যার বদৌলতে একদা তারকা পর্তুগিজ ফুটবলার ইউসেবিওকে পেয়েছিল বিশ্ব। ঘরের মাঠে ২-২ ড্রয়ের পর জোহান ক্রুয়েফ এরিনায় অ্যাজাক্সের স্বপ্নভঙ্গ করে বেনফিকা আরও একবার প্রমাণ করল আমাদের সবার শোনা, জানা সেই অমোঘ বানী – ইচ্ছে থাকলে, সব হয়। সওওওব হয়।

বেনফিকা কতদূর যাবে আর এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, জানা নেই। হয়তো জার্নি শেষ হয়ে যাবে এই কোয়ার্টারে এসেই। ঠিক যেমন জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে ৩-০ তে হারিয়ে একই বানী প্রচার করে গেল লা লিগার ছোট অথচ তেজি টিম ভিলারিয়াল।

এইসব টিম, যাদের না আছে ১৭০-১৮০ মিলিয়ন দিয়ে প্লেয়ার কেনার দম্ভ, ক্ষমতা, না আছে তাদের ক্লাবে সুপারস্টার কোনও প্লেয়ারের বাস। আছে শুধু সাহস, জেদ আর লড়াই করার প্রয়াস। নিরন্তর চেষ্টাই সাফল্যের মূলমন্ত্র, এই রত্নের সন্ধান ভিলারিয়াল-বেনফিকা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বের কোণে কোণে।

উঠে আসুক এরা। উঠে আসুক। নবারুণ থাকলে নিজেই ভোররাতে জোরে জোরে পড়তেন -‘বুঝবি যখন আসবে তেড়ে, ন্যাংটো মজুর সাবানকলের… ’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...