আইপিএলেই উত্থান, আইপিএলেই পতন

ইনজুরির কারণে ক্রিকেটটা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন অল্পতেই। তখনো ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ছিল না কোনো সম্ভাবনা। তবে ভাগ্য আর পরিশ্রমে উঠে আসেন জাতীয় দলে। ২০১৪ সালে আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সেই মোহিত শর্মা সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছেন খুব দ্রুতই।

রোল মডেল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইনকে মানলেও তাঁর বলে ছিল না স্টেইনের মত গতি কিংবা ভয়ংকর বাউন্স। স্লোয়ার আর ইয়োর্কারই ছিল মূল অস্ত্র। ২২ গজে ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করা মোহিত এখন নিজেই এক হতাশা আর আক্ষেপ।

জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ছিলেন সাদামাটা। আইপিএলে দুর্দান্ত হলেও সময়ের ব্যবধানে পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে। সেখান থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। আইপিএলের সেরা বোলার থেকে সময়ের ব্যবধানে মোহিত শর্মা এখন নেট বোলার!

হারিয়ানার ছোট্ট এক গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন। পরিবারের কারো সাথেই দূর দূর পর্যন্ত ক্রিকেটের কোনো সম্পর্ক নেই। গ্রামে টেনিস বল টুর্নামেন্ট খেলেই স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হবার। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক। এরপর সাবেক উইকেট রক্ষক বিজয় যাদবের কল্যাণে ফরিদাবাদ অ্যাকাডেমিতে খেলার সুযোগ হয় মোহিতের।

২০০৮ সালে মারাত্মক এক ব্যাক ইনজুরিতে প্রায় বছর খানেক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন মোহিত। সে সময় চেয়েছিলেন ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানাতে। তবে পারেননি! যাদব তখন মোহিতকে বললো আর একটা বছর তার সাথে সময় দিতে এবং অ্যাকাডেমির হোস্টেলে থাকতে। এরপর সেখান থেকেই ভিন্ন বাঁকে মোড় নেয় যাদবের ক্যারিয়ার।

বয়সভিত্তিক দলে বেশ ভাল পারফর্ম করতে লাগলেন। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক! কিন্তু অভিষেক মৌসুমে খেলেন মোটে তিন ম্যাচ। ২০১২-১৩ মৌসুমে নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন মোহিত।

সাত ম্যাচে সেবার ২৩ গড়ে শিকার করেন ৩৭ উইকেট। রঞ্জি ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর সুযোগ পেয়ে যান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ২০১৩ আসরে ১৫ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২০ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। পরের আসরে ২০১৪ সালে ২৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন মোহিত!

ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স মোহিতকে টেনে নেয় জাতীয় দলের দরজায়। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় মোহিতের। আর অভিষেকেই ১০ ওভারে ৩ মেইডেনসহ ২৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে অভিষেকেই ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন এই পেসার।

সন্দীপ পাতিলের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই কীর্তি গড়েন মোহিত। সেখান থেকে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সুযোগ পান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয় টি-টোয়েন্টি অভিষেক। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে ইশান্ত শর্মার ইনজুরি আশীর্বাদ হয়ে আসে মোহিতের জন্য।

ওই বিশ্বকাপে ভার‍তের হয়ে আট ম্যাচেই খেলেন তিনি। ২৪.১৫ গড়ে শিকার করেন ১৩ উইকেট। ওই বছর তিনি ১৫ ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ২৩ উইকেট শিকার করেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৭ ওভারে ৮৪ রান দেওয়ার পরই বাদ পড়েন দল থেকে। মোহিতের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ফুলস্টপটাও এখানেই! ২৬ ম্যাচে ৫.৪৬ ইকোনমিতে নিয়েছেন মোটে ৩১ উইকেট।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাও স্থায়ী হয়নি খুব বেশিদিন। ২০১৪ সালে অভিষেকের পর খেলেছেন মাত্র ৮ ম্যাচ। এই ৮ ম্যাচে ৮ এর বেশি ইকোনমিতে নিয়েছেন মাত্র ৬ উইকেট। এরপর আর সুযোগ পাননি টি-টোয়েন্টিতেও! আইপিএলে টানা ৬ আসরে নিয়মিত খেললেও শেষ ২ আসরে দল পেলেও খেলেছেন মোটে ১ ম্যাচে! তবে আইপিএলের ১৫তম আসরের মেগা অকশনে যে দলই পাননি এই পেসার! দল না পেলেও থাকবেন লখ-নৌ সুপার জায়েন্ট নেট বোলার হিসেবে!

প্রতিভা কিংবা সামর্থ্যের সাথে জাতীয় দলের জার্সিটা খাপ খাওয়াতে পারেননি মোহিত। অপরদিকে, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, ভূবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদবসহ বেশ কিছু উঠতি তরুণ সম্ভাবনাময়ী পেসারদের ভীড়ে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি এই পেসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link