বাংলাদেশ দল বদ্ধপরিকর। আফিফ হোসেনকে নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার নতুন করে ভাবার যেন কোন সুযোগই নেই। অথচ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার আফিফ হোসেন ধ্রুব। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই তিনি রান পাচ্ছেন, নিজের ইনিংস বড় করছেন। দলকে একটা ভাল সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এইতো চট্টগ্রামে হয়ে যাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাবার কথা নয়।
দলের কঠিন বিপর্যয়ে হাল ধরলেন। ম্যাচ নিশ্চিত করেই তবে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বৈরি কন্ডিশনে যেখানে দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা খাবি খেয়েছেন সে কন্ডিশনে তিনি প্রতিকূলতা সামলে টিকে থেকেছেন, রান করেছেন। দলকে একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। আফিফের মধ্যে একটা ইনিংসের ভীত গড়ার দক্ষতা রয়েছে।
যখনই তিনি সময় পেয়েছেন, তখনই তিনি ইনিংসের ভীত আরও শক্তপোক্ত করেছেন। নিয়মিত রানও আসে আর তাঁর ব্যাট থেকে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই হয়ত প্রত্যাশা করেছিল তিনি ব্যাটিং অর্ডারের প্রমোশন পাবেন। লোয়ার অর্ডার থেকে অন্তত মিডল অর্ডারের চার কিংবা পাঁচে। অথবা ছয়ে। কিন্তু না আফিফকে উপরে খেলতে দেওয়ার কোন পরিকল্পনাই যেন নেই দলের।
এ কথা হয়ত মেনে নিতে কারো দ্বিধা নেই যে আফিফ হোসেন বাংলাদেশের পরবর্তী কাণ্ডারিদের একজন। ইতোমধ্যেই তিনি তাঁর জাত চিনিয়েছেন। এখন অবধি ১২টি ওয়ানডে খেলে তাঁর ব্যাটিং গড় ছাড়িয়েছে ৪০ এর ঘর। আফিফকে ব্যাটিং অর্ডারের আরেকটু উপরে দিকে খেলানো হবে কি না কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছিলেন যে আফিফ ছয়-সাতেই ঠিক আছেন।
সেই উত্তরেরই পুনঃরাবৃত্তি ঘটালেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে তামিম বলেন, ‘আফিফ সাত নম্বরে নেমে সত্যিই বেশ দূর্দান্ত খেলছে। এখন যদি আমরা তাঁকে ছয় নম্বরে খেলাই তাহলে আমাদেরকে সাতে খেলার মত আরেকজনকে খুঁজতে হবে। তখন প্রশ্ন উঠবে সাতে আমরা কাকে খেলাব।’ গত প্রায় বছর খানেক ধরেই নাকি বাংলাদেশ দল ছয় ও সাত নম্বরে ব্যাট করার মতো খেলোয়াড় খুঁজছে।
এ নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমরা প্রায় বছরখানেক ধরেই ছয় ও সাত নম্বরে ব্যাট করার মতো যোগ্য ব্যাটার খুঁজছি। যারা কিনা লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে পারবে এবং ম্যাচ শেষ করে আসতে পারবে। আমি মনে করি আফিফ সাতে খেলার জন্য যথাযথ এক পছন্দ এবং সে পজিশনে সে ভাল ব্যাটিংও করছে। সে হয়ত দুই এক ম্যাচে ব্যর্থ হবে। তবে সে যে মানের ব্যাটার যেদিন সে রান করবে আমরা সেদিন ভাল পজিশনের থাকবো।’
আফিফের ব্যাটে রান এলে যে বাংলাদেশ একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে থাকে অধিনায়কের সে কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। তবে প্রশ্ন হল আমাদের তো এগিয়ে যেতে হবেই। একদিন আমাদের এই আফিফদের কাঁধেই। তবে কেন এখন থেকেই আমরা তাঁদেরকে আরেকটু চ্যালেঞ্জ নিতে সহয়তা করবো না? আর রইলো বাকি ছয়ে খেলানোর কথা। বাংলাদেশ দলে এখন ছয় নম্বরে ব্যাট করছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করে দেওয়া মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক। কিন্তু তবুও ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩৪ এর খানিক বেশি। আর নিকট অতীতে তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা পূরণ করার মতো কোন পারফর্মেন্সের দেখাও মিলছে বলে ঠাওর করা যায় না। তাঁর পরিবর্তে দল নিশ্চয়ই আফিফের মতো একজন তরুণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের উপর আস্থা রাখতেই পারে।
আবার অন্যদিকে আমাদের চিন্তা সাতে একটা ফাঁকা স্থান তৈরি হওয়ার। অথচ মেহেদী হাসান মিরাজ একজন পুরদস্তুর অলরাউন্ডার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনি একজন অলরাউন্ডার হয়েই পারফর্ম করেছিলেন। আর সম্প্রতি তো তিনি তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণও রাখছেন। তিনি যে ব্যাটটা করতে জানেন বারেবারে প্রমাণ দিচ্ছেন। তাঁকে দিয়ে অনায়াসে সাতের সেই শূন্যস্থান পূরণ সম্ভব।
এমন পরিস্থিতিতে আমরা আট নম্বরে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের সন্ধান করতে পারি। বিদেশের মাটিতে বাড়তি একটা সুবিধা আদায় করে নেওয়া যাবে। তাছাড়া দেশের স্পিন সহায়ক উইকেটের জন্যে একজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারও বিবেচিত হতে পারেন।
সেক্ষেত্রে মেহেদী হাসান কিংবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত হতে পারেন বিকল্প। মেহেদীর পিঞ্চ হিটটা ইনিংসের শেষ দিকে বেশ কার্য্যকর প্রমাণিত হতে পারে। মোদ্দাকথা দলে অন্যতম পারফর্মারকে একটা জায়গায় থিতু করে ফেলাটা প্রচণ্ড নেতিবাচক এক মানসিকতার পরিচয়।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের এখন অবধি খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে সাকিব আল হাসান সেরাদের সেরা। তিনি তাঁর ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়ার সুফলতা আমরা দেখেছি ২০১৯ এর বিশ্বকাপে। এখন সিধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের। তবুও আফিফ কি সত্যিই আরেকটু উপরে সুযোগ পাবেন না?