উঁকি দেয়া সূর্য, নতুন দিনের আলো

সকালে শুরুটা ভালো হয়নি, প্রথম সেশন পেসারদের লেন্থ খুজে পেতেই চলে গেলো। মনে হচ্ছিল আকাশে একটা কালো মেঘ এসে জমা হচ্ছে। তবে সকালের কালো মেঘ কেটেছে দ্রুতই। লুকিয়ে থাকা সূর্য উঁকি দিয়েছে, পেসাররা লাইন খুজে পেয়েছেন। তাল মিলিয়ে মিরাজও ছড়ি ঘুরিয়েছেন, এবাদত স্যালুট দিতে ভুলেননি। সবমিলিয়ে প্রথম দিনের খেলা শেষে সুদিনের আভাষ জারি থেকেছে।

ডারবানে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে বোলিং নিলেন মুমিনুল হকরা। উদ্দেশ্য ছিল সকাল সকাল কয়েকটা উইকেট তুলে নেয়া। তবে মাঠে নেমে দেখা গেল উলটো চিত্র। প্রথম সেশনে বল হাতে কোন উইকেটই এনে দিতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। বরং দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার স্বাচ্ছন্দ্যে রান করে গিয়েছেন। কোন উইকেট না দিয়ে ওভার প্রতি চারের উপর রান করেছেন দুই ওপেনার।

ভুলটা ছিল তাসকিন-এবাদতদেরই। প্রথম সেশনে সঠিক লেন্থটা ধরতে পারছিলেন না। এবাদত হোসেন স্ট্যাম্পের বাইরে বল করে যাচ্ছিলেন। ফলে উইকেট পাওয়ার কোন সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। তাসকিন আবার বল করেছেন অনেক উপরে। ফলে বল সহজেই ব্যাটে গিয়েছে।

প্রথম সেশনের এই ভুল দ্রুতই ধরতে পেরেছেন পেসাররা। প্রথম পথটা দেখিয়েছেন শরিফুলের জায়গায় মাঠে নামা খালেদ আহমেদ। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই তুলে নিয়েছেন ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা ডিন এলগারের উইকেট। উইকেট থেকে বাড়তি একটা বাউন্স আদায় করে নিতে পেরেছিলেন তিনি। এতেই পরাস্ত হন প্রোটিয়া অধিনায়ক।

সেই যে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরলো এরপর সারাদিনই ম্যাচের লাগাম ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যত সময় গিয়েছে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণও তত বেড়েছে। পেসাররা দারুণ ভাবে ফিরে আসায় প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান রেট কমতে থাকে, চাপ বাড়তে থাকে।

তবে কাজের কাজটা করে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দেশের মাটিতে তাঁর পারফর্মেন্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টেও শুরুতে উইকেট এনে দিয়েছিলেন। আজও দায়িত্বটা তিনিই কাধে তুলে নিলেন। মাত্র চার রানের ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকা আরেকটি উইকেট হারালো, বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরলো।

তবে মিরাজের চমক দেখানো আরো একটু বাকি ছিল। নিজে বল না করলেও এরপরের উইকেটটার কৃতিত্ব শুধুই তাঁর। তাসকিনের আহমেদের বলটাকে আলতো করে ছুঁয়ে রান নেয়ার জন্য দৌড় দেন টেম্বা বাভুমা। সেই সমউ মিরাজ যে এমন একটা ম্যাজিক দেখাবেন তা ভাবতে পারেননি কেগান পিটারসেন।

ছুটে যাওয়া বলটাকে ড্রাইভ দিয়ে আটকালেন। দারূণ ফিল্ডিং। তবে বিস্ময়ের শুরু হয় এরপর থেকে। মুহূর্তের মধ্যে বলটা নিয়ে উঠে বলসেন। তখনো ঠিক মত শরীরে ভারসাম্য পাননি। তবুও স্ট্যাম্পের যেটুকু দেখা যাচ্ছিল সেটা বরাবর থ্রো করলেন। একেবারে মাপা, নিখুঁত নিশানা। বিশ্বমানের ফিল্ডিং ডিসপ্লে। মিরাজের এই কান্ডে এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরা গেল।

শুধু উইকেটই না, মিরাজের এমন কীর্তি পুরো দলেরই শরীরি ভাষা বদলে দেয়, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আজকের দিনে বাকি ছিল শুধু এবাদত হোসেনের একটা স্যালুট। সেটাও দেখা গেল রায়ান রিকলটনের উইকেট নেয়ার পর। যদিও আজ সেরাদিন বোলিংটা খুব ভালো হয়নি তাঁর। তবে ভুল শুধরে নেয়ার পতিশ্রুতি শুনিয়েছেন।

যদিও দ্বিতীয় সেশনে ভালোভাবেই ফিরে আসা তাসকিনের খাতায় কোন উইকেট জমা হয়নি। এছাড়া প্রথম সেশনে অমন বোলিং না করলে প্রোটিয়াদের আরো খানিকটা চেপে ধরা যেত। সেই আক্ষেপ থেকেই গেল। তবুও সকালের কালো মেঘ কেটে গেছে, সূর্য উঁকি দিতে শুরু করেছে, আগামীকাল সেটাকে মাঝ গগনে নিয়ে আসা চাই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link