টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গেল আসরে হতাশাজনক পারফরম্যান্সে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে ভারতকে। স্লগ ওভারে একজন ফিনিশারের অভাবটা বেশ ভুগিয়েছে রোহিত-বিরাটদের। অবশ্য লম্বা সময় ধরে এই দায়িত্বে থাকা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া যে দলে জায়গা পাননি! ইনজুরি আর ফর্মহীনতার কারণে গেল বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ঠাঁই মেলেনি এই অলরাউন্ডারের। রবীন্দ্র জাদেজা থাকলেও হার্দিকের অভাবটা ঠিক টের পেয়েছে দল।
অবশ্য ইনজুরির কারণে বোলিং বাদ দিয়ে স্রেফ ব্যাটার হিসেবেই খেলছিলেন তিনি। ব্যাটেও আগের সেই আগ্রাসী রূপটার দেখা যাচ্ছিলো না। হার্দিক ফুরিয়ে গেলেন? – ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আবার চিরচেনা রূপে ফিরবেন। শুধু ভক্ত-সমর্থকরাই নয়, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটাররাও প্রত্যাশা করছিলেন হার্দিকের প্রত্যাবর্তনের।
চলতি বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারের আসরে আগের মত কোনো ভুল করতে চাইবে না এশিয়ার পরাশক্তি ভারত। তবে হার্দিক পান্ডিয়াকে দলে সুযোগ পেতে হলে দেখাতে হবে দাপুটে পারফরম্যান্স। আর তার জন্য সেরা মঞ্চটা নিঃসন্দেহে আইপিএল।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরটা তাই হার্দিকের জন্য ছিল প্রত্যাবর্তনের বড় এক মঞ্চ। নির্বাচক থেকে শুরু করে সমর্থকদের বিশেষ নজরটাও এই অলরাউন্ডারের উপর।
অধিনায়ক হিসেবে এবার নতুন এক দায়িত্ব। তাই প্রত্যাবর্তনের জন্য পরীক্ষা দেওয়ার মঞ্চে হার্দিকের জন্য এবার চাপটা একটু বেশি। নতুন দল, নতুন অধিনায়ক। হার্দিক কেমন করবেন? নিজের সেরাটা দিতে পারবেন কিনা সে নিয়েও ছিল অনেক প্রশ্ন। তবে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম পাঁচ ম্যাচে সব প্রশ্নের জবাব যেন দিয়ে ফেলেছেন এই অলরাউন্ডার। ইঙ্গিতটাও দিয়েছেন তিনি ফিরছেন আবারও বিধ্বংসী রূপে!
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে গেল রাতে ব্যাট হাতে বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেছেন হার্দিক। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে হার্দিকের ৫২ বলে ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৮৭ রানের তাণ্ডবময় ইনিংসে গুজরাট জয় পায় ৩৭ রানের। মাত্র ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে গুজরাট। এরপর অভিনব মনোহরের সাথে ৮৬ রানের জুটির পথে তাণ্ডব চালান হার্দিক। ১৬৭ স্ট্রাইক রেটে খেলেন ৮৭ রানের হার না মানা বিধ্বংসী এক ইনিংস।
শুধু ব্যাটিংয়ে নেই বল হাতে এক উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দুর্দান্ত এক রান আউট করেছেন রাজস্থানের অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসনকে।
এর আগের ম্যাচেই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে ত্রাণকর্তা হিসেবে আসেন তিনি। টানা উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে থাকা দলকে ৪২ বলে ৫০ রানের অপরাজিত ইনিংসে শক্ত ভিত গড়ে দেন হার্দিক। খেলেন অধিনায়কোচিত এক ইনিংস। যদিও ম্যাচটি হেরে যায় গুজরাট।
তবে হার্দিকের অধিনায়কত্বে টুর্নামেন্টে পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জয় নিয়ে পয়েন্টস টেবিলের শীর্ষে আছে গুজরাট টাইটান্স।
ইনজুরির কারণে লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বল হাতে দেখা মেলেনি হার্দিকের। স্রেফ ব্যাটার হিসেবেই খেলে গেছেন লম্বা সময়। এ নিয়েও অবশ্য আলোচনা-সমালোচনাও কম হয়নি। তবে এবারের আইপিএলে যেন দেখা মিললো পুরনো সেই হার্দিকের। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত বোলিং করছেন তিনি। ৫ ম্যাচে ১৮.৩ ওভার বল করে ৭.৫৭ ইকোনমিতে নিয়েছেন চার উইকেট।
বোলিংয়ে উন্নতিটাও চোখে পড়ার মত। ১৪০+ কি.মি. গতিতেও বল করতে দেখা গেছে এই অলরাউন্ডারকে। ব্যাট হাতেও এখন পর্যন্ত তিনি সেরাদের একজন। ৫ ম্যাচে ৭৬ গড় আর ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২২৮ রান। জশ বাটলারের পর টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।
ব্যাটে-বলের দাপটে অলরাউন্ডার হিসেবে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা পারফরমার তিনি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আসরে দেখাচ্ছেন নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স। ফিল্ডিংয়েও দেখা মিলছে চিরচেনা হার্দিককে।
আইপিএলের মঞ্চে কি তাহলে পুরনো সেই আগ্রাসী হার্দিকের দেখা মিললো আবারও? নাকি হার্দিকের এক নতুন সংস্করণের আবির্ভাব হল এবারের আসর দিয়ে? – ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং আর অধিনায়কত্ব – হার্দিক পান্ডিয়ার প্রত্যাবর্তনের রূপটা এর চেয়ে আর দাপুটে হতে পারে কি? প্রশ্নটা আর উত্তর দুটোই এখন হার্দিকের পারফরম্যান্সে!
অবশ্য টুর্নামেন্টে এখনও লম্বা পথ বাকি। হার্দিককেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে আবার হয়তো জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরবেন তিনি। আর প্রত্যাবর্তনের জন্য বিশ্বকাপের চেয়ে বড় মঞ্চ আর কি হতে পারে?