ইনজুরিতে পড়ার পর যে সহায়তা পাবার প্রয়োজন ছিল তার পুরোটাই পেয়েছিলেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। ভারতের মতো দেশে একজন ফুটবলার হিসেবে হাসপাতালে যে সহায়তা বাংলাদেশের ক্লাব আবাহনী অধিনায়ক পেয়েছিলেন তার নেপথ্যে ছিলেন প্রীতম কোটাল। গত বছর চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন জীবন।
করোনাকালীন সময়ে যখন সবকিছু থমকে দাড়িয়েছিল তখনই প্রীতম সহায়থার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে জীবন-প্রীতমের বন্ধুত্ব। যা দিনে দিনে গাঢ় হচ্ছে। ইনজুরি কাটিয়ে খেলায় ফিরেছেন জীবন, গোলও করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলে। আজ তেমনি এক ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। দুই দলের অধিনায়ক আবার এই দুই বন্ধু।
যদিও আজ নাবীব নেওয়াজ জীবন-প্রীতম কোটাল বন্ধু নয় মাঠে লড়বেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। দুই দলই আবার এক হোটেলে অবস্থান করেছে। ভারতের চিকিৎসা করার সময় জীবনের কাছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের একটি জার্সি চেয়েছিলেন প্রীতমের হবু স্ত্রী সোনেলা পাল। বাংলাদেশি খেলোয়াড় এই ফুটবলপ্রিয় মানুষটিকে হতাশ করেননি।
কলকাতায় এসে প্রথমদিনই তার হাতে জার্সিটা তুলে দেওয়া হয়েছে। টিম হোটেলে সেই জার্সি প্রদানের ছবিটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়িয়েছে। এরপর ম্যাচের দু’দিন আগে প্রীতমের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার কথা ছিল জীবনের। কিন্তু ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের বাড়িতে যাবারা মতো ঝুকি নিতে চাননি তিনি। কলকাতার বাড়িতে যাওয়া হয়নি মূলত ম্যাচের কারণেই।
বন্ধুত্বে এখন আড়ি পেতেছে এএফসি কাপের প্রাক বাছাইয়ের খেলায়। বসন্ধুরা কিংসকে টপকে গত আসরে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া মোহনবাগানকে আজ বাচাঁ মরার লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। হারলে বাদ আর জিতলে চুড়ান্তপর্বে যেতে পারবে এমন সমীকরন অবশ্য দু’দলের সামনেই। যদিও শক্তির বিচারে আবাহণী থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে ভারতের ক্লাবটি। তবে ঢাকার ক্লাবটি বর্তশানে যে ফর্মে রয়েছে সেটিকে আজই কাজে লআগাতে চাইছে।
সেখানে ত্রাতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে চান জীবন। যেমন করে ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরে প্রথম গোলের ভিডিও পাঠিয়েছিলেন বন্ধু প্রীতমকে। ঠিক তেমনি আজকের ম্যাচে গোল করে আলোটা নিজের করে নিতে চান জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার।
যারা একটু আধটু ফুটবলের খবর রাখেন তারা জানেন, জীবন-প্রীতমের সম্পর্কে ব্যক্তি থেকে এখণ পরিবারের মধ্যে মিশে গেছে। সম্পর্কটা যত দিন যাচ্ছে ততই গভীর হচ্ছে। গত বছর কলকাতায় অস্ত্রোপাচার করানোর সময়ই প্রীতমের সঙ্গে জীবনের পরিচয় হয়। বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশি স্ট্রাইকারকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি বেশ যতেœর সঙ্গেই করেছিলেন প্রীতম।
আর হাসপাতালে এ বাংলাদেশির দিনগুলোতে আত্বীয়ের মতোই যত্ন নিয়েছিলেন প্রীতমের স্ত্রী সোনেলা। তাই তাদের দুজনের কাছেই এই সম্পর্কটা দাদা-ভাইয়ের। একবছরের কম সময়ে হওয়া সম্পর্কটা এখন যত দিন যাচ্ছে ততই গভীর থেকে আরও গভীর হচ্ছে। তাইতো আবাহনী-মোহনবাগানের ম্যাচ ছাপিয়ে বন্ধুত্বটা সামনে চলে এসেছে। পাশাপাশি যতই বন্ধুত্ব থাকুক না কেন, দুইজন যেহেতু দুই দলের অধিনায়ক, তাই কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবেনা এটাই স্বাভাবিক।
কলকাতার ম্যাচটি স্মরণীয় গোলের আশায় রয়েছেন আবাহনী অধিনায়ক। প্রীতম কোটালের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে কলকাতায় নাবীব নেওয়াজ জীবন যেন একটু বেশি আদর-যত্ন পাচ্ছেন। সেখানে আবাহনী অধিনায়কের অন্যরকম পরিচিতিও গড়ে উঠেছে! তবে মাঠের লড়াইয়ে ভালোবাসার জবাবটা অন্যভাবে দিতে চাইছেন আকাশি-নীল জার্সিধারী এই স্ট্রাইকার, ‘আজকের ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প নেই। প্রতিপক্ষ দলে আমার বন্ধু থাকতে পারে। এটাকে ধরে খেলার কোন সুযোগ নেই। প্রীতম আমার ভাল বন্ধু, কিন্তু মাঠে এর কোন প্রভাব থাকবে বলে মনে হয়না। আমি চাইছি আজকের ম্যাচে গোল করে স্বরনীয় হয়ে থাকবে, আর দলকে এএফসি কাপের চুড়ান্তপর্বে নিয়ে যেতে।’
এএফসি কাপে তিন বছর আগে জীবন-সোহেল রানা-মামুনুলরা আবাহনীকে প্রথমবারের মতো নিয়ে গিয়েছিলেন নকআউট পর্বে। এবার আবাহনী আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশি সংগ্রহও এবার বেশ ভালো। নতুন করে চ্যালেঞ্জ নিতেই পারে দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
অন্যদিকে প্রীতম কোটালও বন্ধুত্বকে মনে রাখতে চাইছেন না। মাঠে নামার আগে মোহনবাগানের অধিনায়ক আবাহনীকে অবশ্য সমীহই করছেন। একই সঙ্গে জয়ের প্রত্যাশার কথাটাও জানিয়ে রাখলেন। প্রীতম এর আগে প্রথম দফায় ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোহনবাগানে খেলেছেন। মাঝে অন্য ক্লাব ঘুরে ২০২০ থেকে আবারও সবুজ-মেরুনের ডেরাতে ফেরেন।
গেল দুই বছরে খেলেছেন ৪৪ ম্যাচ। রাইট ব্যাক পজিশনে খেলে তার পা থেকে গোলও এসেছে দুটি। ম্যাচের আগে প্রীতম প্রতিপক্ষ আবাহনীকে সমীহ করে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আবাহনী যে ফুটবল খেলছে তাতে আমি মনে করি, তারা খুবই ভালো দল। তাদেরকে সম্মান করে বলছি, তারা তাদের খেলা খেলবে, আমরা আমাদের খেলা খেলবো। আমরা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব।’