প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে নাস্তানাবুদ করতে কিংবা রান আটকে দিতে বোলারদের জন্য সেরা এক অস্ত্র ইয়র্কার। পেসারদের জন্য মারাত্মক এক অস্ত্র ইয়র্কার। লাসিথ মালিঙ্গা থেকে শুরু করে মিশেল স্টার্ক, জাসপ্রিত বুমরাহ, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট, শাহিন আফ্রিদি, কাগিসো রাবাদারা এই ইয়র্কার দিয়েই প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। সাদা বলের ক্রিকেটে যেকোন বোলারের জন্যই ইয়র্কার বিধ্বংসী অস্ত্র। যুগ যুগ ধরেই ব্যাটারদের চাপে ফেলতে বোলাররা ইয়র্কার দিয়ে আসছেন।
তবে বর্তমান সময়ে ওয়াইড ইয়র্কার বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বিশেষকরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রতিপক্ষের রান আটকে দিতে প্রায়শই বোলারদের দেখা যায় অফ স্টাম্প থেকে বেশ বাইরে ওয়াইড লাইনের কাছাকাছি জায়গায় বল ফেলতে। এতে ব্যাটারও দ্বিধায় থাকেন। ওয়াইড ইয়র্কার দিয়ে বোলাররাও ইদানিং অনেকটা সহজেই ডট বল আদায় করে নিতে পারছেন।
ইয়র্কারের ক্ষেত্রে অবশ্য অনেকটা চিন্তাভাবনা করেই বল করতে হয় বোলারকে। কারণ ইয়র্কার দিতে গিয়ে প্রায়ই দেখা যায় লো ফুলটস কিংবা ফুলটস পড়ে যায়। যার কারণে ব্যাটার সেক্ষেত্রে সহজেই হিট করে বাউন্ডারি আদায় করতে পারে। সামান্যতম ভুল মানেই বোলারের জন্য উল্টো বিপদ। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে নিঁখুতভাবে ইয়র্কার ছোঁড়াটাও বড্ড কঠিন কাজ। তবে মালিঙ্গা, স্টার্ক, বুমরাহরা এই কাজটি অনায়াসেই করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
ব্যাটারের পায়ের কাছাকাছি জায়গায় ইয়র্কার দিয়ে বোল্ড কিংবা লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলাটা বেশ সহজ। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যাটার দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ইয়র্কারকে ব্লক করে দিচ্ছেন কিংবা ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছন দিয়ে বাউন্ডারিও হচ্ছে নিয়মিত।
আধুনিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন ইয়র্কারটা অনেকটাই কার্যকরী নয় বললেও চলে। ব্যাটার বাউন্ডারি হাঁকানোর জন্য উইকেট থেকে সরে এসে মারার চেষ্টা করেন, কেউ বা আবার একটু এগিয়ে এসে খেলতে যান। সেক্ষেত্রে বোলার প্রায়ই লাইন হারিয়ে ফুলটস দিয়ে বসেন। যার কারণে ইদানিং ইয়র্কার দিতে গিয়েও বিপাকে পড়ছেন বোলাররা।
সেদিক থেকে ওয়াইড ইয়র্কার থেকে বেশ সুবিধা আদায় করতে পারছে বোলাররা। বিশেষ করে ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষের রান আটকে দিতে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বোলারই এই কৌশল অবলম্বন করছেন। ওয়াইড ইয়র্কার থেকে খুব একটা উইকেট আদায় করতে না পারলেও ডট বল দিয়ে প্রতিপক্ষের রান আটকে দিতে এই ডেলিভারি নিঃসন্দেহে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কার্যকরী।
- মূলত ওয়াইড ইয়র্কার কি?
ওয়াইড ইয়র্কারের লেন্থটা প্রচলিত ইয়র্কারের মতই। ফুলার লেন্থেই বল করেন বোলাররা। তবে ওয়াইড ইয়র্কারের ক্ষেত্রে ওয়াইড লাইনের গা ঘেঁষে অফ স্টাম্প থেকে বেশ খানিকটা বাইরে বল ফেলতে হয়। আরেকটু সহজ ভাবে বললে পঞ্চম থেকে সপ্তম স্টাম্প বরাবর ফুলার লেন্থে বল করাকে ওয়াইড ইয়র্কার বলা হয়।
এক্ষেত্রে ব্যাটারকে খানিকটা আগেই বলের লাইন বুঝে তৈরি থাকতে হয়। নাহলে সচরাচর ওয়াইড ইয়র্কার থেকে ব্যাটারদের সফল হতে দেখা যায় না। আগে থেকে প্রস্তুত না থাকলে বলের লাইনে খেলাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই তা এজ হয়ে থার্ড ম্যান দিয়ে সোজা বাউন্ডারির বাইরে।
আবার বোলারদের জন্যও এই ডেলিভারিটি বেশ কঠিন। ওয়াইড ইয়র্কার করতে গিয়ে অনেক সময়ই দেখা যায় বলটি ওয়াইড হচ্ছে। অবশ্য এর জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলনের। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে বোলাররা এটি আয়ত্তে আনেন। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। আর অনেক বোলারকেই এখন নিয়মিতই টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে ওয়াইড ইয়র্কার করতে দেখা যায়।
এর জন্য অবশ্য কিছু কৌশলও অবলম্বন করেন বোলাররা। অনেক সময় স্টাম্পের সামনে বুট রেখে অনুশীলন করেন তাঁরা। বুটকে লক্ষ্য করে অনবরত বল ছুঁড়তে থাকেন বোলাররা। আবার অনেক বোলার ওয়াইড ইয়র্কার এরিয়ায় কয়েন রেখে অনুশীলন করেন।
ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসদের মত বোলাররা নিশ্চই একদিনে তৈরি হননি! ইয়র্কার, ইনস্যুইং, রিভার্সস্যুইংটা নিখুঁতভাবেই করতে পারতেন সাবেক এই তারকা পেসাররা। নিজের ইশারায় বলকে নাচাতে পারতেন। ইয়র্কার লেন্থে বল স্যুইং করানোর ক্ষমতাও ছিল ওয়াকার-ওয়াসিমদের।
আধুনিক ক্রিকেটে পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। বর্তমানে ব্যাটাররা সার্বিক দিক বিবেচনায় বোলারদের তুলনায় অনেকটা বেশি সুবিধা পাচ্ছে। তাই সফল হতে হলে বোলারদের অবশ্য কিছু নতুন কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। ওয়াইড ইয়র্কার, স্লোয়ার ইয়র্কার দিতে অনেক বোলারই নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এই ডেলিভারি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) লক্ষ্য করা যাচ্ছে ডেথ ওভারে ওয়াইড ইয়র্কার করার চেষ্টায় মত্ত পেসাররা। অবশ্য শুধু পেসাররা বললে ভুল হবে! পেসারদের সাথে সাথে স্পিনাররাও রপ্ত করছেন এই ডেলিভারি। কুলদ্বীপ যাদব, ক্রুনাল পান্ডিয়াদের নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে ওয়াইড ইয়র্কার দিতে।
বোলারদের জন্য ঝুঁকি আছে। একটু ভুল হলেই হয়ত হজম করতে হবে বাউন্ডারি। কিন্তু তবুও পরিশ্রম আর সাধনা দিয়ে অনেকেই এই ডেলিভারি রপ্ত করে তা নিয়মিত প্রয়োগ করছেন ম্যাচে। সফলও হচ্ছেন। ব্যাটারদের রাজত্বের সময়ে বোলার হিসেবে সেরা কিছু করতে গেলে খাটনিটাও বেশি করতে হবে সেটাই স্বাভাবিক।