‘ওভারকুকড’ বিরাট

ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা, সেখান থেকে একঘেয়েমি এক পরিস্থিতি। আর সে পরিস্থিতি বয়ে নিয়ে এসেছে অবসাদ। আর সেই অবসাদের বলি ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং, আগ্রাসী মনোভাব আর ধারাবাহিকতা এই তো ছিল বিরাটকে বর্ণনার সব বিশেষণ। তবে এখন আর বিরাট ধারাবাহিক নন, আগ্রাসী সে বিরাটের খোঁজ এখন আর মিলছে না। দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংটাই শুধু রয়ে গেছে।

ভারতের ক্রিকেটে বহু মহারথী ব্যাট হাতে হয়ে গেছেন ইতিহাস নন্দিত। চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় বিরাট তাদেরই একজন। হয়ত সময়টা খারাপ যাচ্ছে তাঁর। হয়ত সমীকরণে হচ্ছে গড়মিল। ব্যাটার বিরাটের ধারাবাহিকতার বড্ড অভাব। তবুও তো আর তাঁকে আড়াল করা যায় না। তিনি তো আড়াল হবার মত কেউ নন। তিনি তো উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। তিনি তো ধ্রুবতারা।

বয়সটা ৩৩ ছাড়িয়েছে। হয়ত আর বেশিদিন থাকছেন না ক্রিকেটে। তবে সমালোচক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিমত তিনি ভারতকে আরও বছর পাঁচ কিংবা ছয় সার্ভিস দিয়ে যেতে পারবেন। তবে সে জন্যে তাঁর একটা লম্বা বিরতির প্রয়োজন। একেবারে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা এ সময়ে এসে বড্ড বেশি প্রয়োজন। অন্তত ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী তাই মনে করেন।

রবি শাস্ত্রীর মতে বিরাট ‘ওভারকুকড’। তিনি হয়ত বলতে চেয়েছেন ক্রিকেটের প্রেশার কুকারে একটানা দীর্ঘ সময় চাপ সামলে যাচ্ছেন বিরাট। কথাটা মন্দ নয়। সেই ২০০৮ এরপর থেকে টানা খেলে গেছেন। স্মৃতির শ’খানেক পাতা ওলটালেও বিরাট লম্বা সময় দলের বাইরে কিংবা ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন এমন নজির মিলবে না। নিজের ফিটনেস নিয়ে বেশ সতর্ক বিরাট ইনজুরিতেও ভুগেছেন অল্পস্বল্প।

অন্তত মাস খানেকে সম্পূর্ণ বিরতিতে যাওয়া উচিৎ বিরাটের এমনটাই মনে করেন রবি শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিরাট কোহলি ওভারকুকড। এখন যদি কারো বিশ্রামের প্রয়োজন হয় তবে সেটা সবার আগে বিরাটের। দুই মাস কিংবা দেড় মাসের একটা বিরতি তাঁর প্রয়োজন। তাঁর মধ্যে এখনও ছয় সাত বছরের ক্রিকেট বাকি এবং কেউ হয়ত  সেটা হারাতে চাইবে না একটা অবসাদগ্রস্ত মস্তিষ্কের জন্যে।’

শচীন টেন্ডুলকারের ১০০টি সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙার জন্যের সবচেয়ে যোগ্য ভাবা হত বিরাট কোহলিকে। অথচ বিগত ১০০ ম্যাচ ধরে একটি সেঞ্চুরিও করতে পারেননি বিরাট। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৭০টি সেঞ্চুরিতে আটকে আছেন তিনি। এটা নিঃসন্দেহে তাঁকে ভীষণরকম মানসিক পীড়া দেয়। নিজেকে হারিয়ে ফেলার সে পীড়ায় হয়ত তিনি আর নিজেকে খুঁজেই পাচ্ছেন না। বিরাটের সেই ধারাবাহিক আগ্রাসনে পড়েছে ভাটা।

এর জন্যে বিরাটকে আবার শুরু করতে হবে একেবারে শুরু থেকে। একটা লম্বা বিরতিতে যাওয়াটা তাঁর জন্যে অত্যাবর্শক। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসন তাই মনে করেন। পিটারসন বলেন, ‘সে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু জটিলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। বিয়ে তারপর বাচ্চা, সে সাথে মিডিয়া ট্রায়াল, ব্যক্তিগত জীবনের নানা সমস্যা।’

বিরাটের এমন ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করে পিটারসন আরও বলেন, ‘সে ক্রিকেটে বিশাল বড় এক তারকা। বিরাট কোহলির উচিৎ তাঁর ক্রিকেট বুটকে ছয় মাসের জন্যে বিদায় বলে দেওয়া। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করা।’ কোহলিকে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি পিটারসন  ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড ফর ক্রিকেট কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়াকেও (বিসিসিআই) কেও উপদেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘তিনি ফিরে আসলে তাঁকে দলে আবার জায়গা করে দেওয়ার প্রতিস্রুতি দিতে হবে। যেন তিনি আরও তিন চার বছর খেলে যেতে পারেন। তাঁকে অভয় দিতে হবে তুমি আমাদের প্রধান অস্ত্র, আমরা জানি তুমি নিজের সেরাটা দিতে পারবে।’

মোদ্দাকথা বিরাটের একটা লম্বা বিরতি প্রয়োজন। তিনি সবধরণের চাপ থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন এবং করেছেন। সকল দলের অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়েছেন। এখন সময় ক্রিকেটকে সাময়িক সময়ের জন্যে বিরতি দেওয়ার। নিজের সেই হারানো ধারাহিকতা ফিরে পেতে এতটুকু নিশ্চয়ই করবেন বিরাট। একটি অস্থির মস্তিষ্ক নিয়ে তো আর শিল্প বাঁচানো যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link