সব আছে, শুধু তিনি নেই!

আবাহনী মাঠ তখনও পুরোদস্তুর স্টেডিয়াম। নিয়মিত প্রথম শ্রেণি খেলা হয়। সেখানেই কী একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ চলছিলো।

আকাশে তখন ঘোরতর দূর্যোগের কবলে পড়েছে একটি হেলিকপ্টার। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এলোমেলো উড়ছে চপারটি। অবশেষে পাইলট কোনোক্রমে রক্ষা করে হেলিকপ্টারটিকে আবাহনী মাঠেই নামালেন। সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচল।

পাইলট তখনও নিশ্চয়ই ঘামছেন। মাত্রই মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখে এসেছেন। তিনি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তার আগেই দীর্ঘদেহী এক আম্পায়ার জোর পায়ে হেটে এসে সামনে দাড়ালেন। পাইলটকে লক্ষ করে তর্জন করে উঠলেন, ‘হেই, মিস্টার পাইলট! আর ইউ স্টুপিড?’

পাইলট হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না কী বলবেন।

আম্পায়ার আরও চটে উঠে বললেন, ‘ইউ ডোন্ট নো, দেয়ার ইজ আ  ‘লিস্ট এ’  ম্যাচ গোয়িং অন?’

এটাই ছিলেন নাদির শাহ। ক্রিকেট, ক্রিকেট এবং ক্রিকেটই যার একমাত্র জগত ছিলো, সেই নাদির শাহ।

শুধুই ক্রিকেট নিয়ে বাঁচা মানুষটাও চলে গিয়েছেন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। দুই বছর ক্যান্সারের সাথে লড়ে আর পেরে উঠেননি। গতবছর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

তবে তিনি বিদায় জানালেও ক্রিকেট তাঁকে আজও বিদায় জানায়নি। ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো তাঁকে এখনো ভুলতে পারেনি। যেমন ধানমন্ডি চার নাম্বার রোডের মাঠটায় আড্ডা বসতো তাঁকে ঘিরে। সাবেক এই আম্পারকে কেন্দ্র করেই মূলত আসর গুলো জমে উঠতো।

সেখানে খালেদ মাসুদ পাইলট সহ আরো অনেক ক্রিকেটাররা জড়ো হতেন। একপাশে ধানমন্ডির মাঠটায় ছোট ছোট ছেলেরা ব্যাট হাতে ছুটোছুটি করছে আরেক কোনে ক্রিকেট জগতের বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতেন নাদির শাহ।

এখনো এইসবকিছুই আছে। ধানমন্ডি চার নাম্বার রোডের ছোট ওই মাঠটায় বিকেল হলে এখনো ছেলেরা ব্যাট বল নিয়ে ছুটে আসে। এখনো সেখানে ক্রিকেট নিয়ে গল্প হয়, আড্ডা হয়। সেই আড্ডায় আর নাদির শাহ থাকেন না, তবে গল্পে তিনি থাকেন নিশ্চয়ই।

এখন মাঠটায় তাঁর সম্মানে একটা ছোট স্ট্যান্ডও করা হয়েছে, নাদির শাহ স্ট্যান্ড।

নাদির শাহ আইসিসির প্যানেল আম্পায়ার ছিলেন। ৬ টি টেস্ট ম্যাচ, ৬৩ ওয়ানডে ম্যাচ ও ৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছিলেন। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটের অসংখ্য ম্যাচে আম্পায়ারি করেছেন। এছাড়া তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা কম আলোচনা হলেও সেই সময় খেলেছিলেন আবাহনী, মোহামেডান কিংবা বিমানের মত দলগুলোর হয়ে।

বাংলাদেশ এখনো মাঠে নামে। আবাহনী মাঠ কিংবা মিরপুরে এখনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হয়। ক্রিকেটের সবকিছুই নিয়ম করে হচ্ছে। তবে আম্পায়ার নাদির শাহ, ক্রিকেটার নাদির শাহকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link