স্তব্ধ হৃদকম্পন, বিপর্যস্ত স্নায়ু

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই, বেশ কিছু দুর্দান্ত ইনিংসের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। শেষ দিকে অসাধারণ কিছু ইনিংসে অকল্পনীয় কিছু জয়ের দেখা মিলেছে আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ম্যাজিকাল পারফরম্যান্সে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেওয়া কিছু ইনিংস নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই, বেশ কিছু দুর্দান্ত ইনিংসের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। শেষ দিকে অসাধারণ কিছু ইনিংসে অকল্পনীয় কিছু জয়ের দেখা মিলেছে আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ম্যাজিকাল পারফরম্যান্সে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেওয়া কিছু ইনিংস নিয়ে আলোচনা করা যাক।

  • প্যাট কামিন্স – কলকাতা নাইট রাইডার্স, প্রতিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই অলরাউন্ডার। ম্যাচে যখন ব্যাকফুটে দল, ঠিক তখনই ব্যাট হাঁতে ত্রাতা হয়ে আসেন কামিন্স। মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর চালালেন তাণ্ডব! আর এই তাণ্ডবের অধিকাংশ ছিল নিজ দেশের সতীর্থ ক্রিকেটার ড্যানিয়েল স্যামসের উপর।

১৫ ওভার শেষে কামিন্সের তখন ৮ বলে ২২ রান। শেষ ৫ ওভারে দরকার মাত্র ৩৫ রানের। সেই ৩৫ রান তুলতে খুব বেশি বল নষ্ট করেননি কামিন্স! এরপর ১৬ তম ওভারে অজি অলরাউন্ডার ড্যানিয়েল স্যামসের উপর চড়াও হয়ে চার ছক্কা, দুই চার ও নো বল থেকে আদায় করেন মোট ৩৫ রান!

স্যামসের এক ওভারে ৩৫ রান নেওয়ার মধ্যে দিয়ে মাত্র ১৪ বলেই পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন কামিন্স! আইপিএল ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটিতে লোকেশ রাহুলের সাথে যৌথভাবে শীর্ষে অবস্থান করছেন কামিন্স।

  • রাহুল তেওয়াতিয়া – গুজরাট টাইটান্স, প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব কিংস

পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে শেষ ২ বলে ২ ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন রাহুল তেওয়াতিয়া। রাহুলের ম্যাজিকে জয় পায় গুজরাট টাইটান্স। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিয়াম লিভিংস্টোনের ২৭ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৯ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় পাঞ্জাব কিংস।

লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুভমান গিলের ৫৯ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৯৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে গুজরাট। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে ৯৬ রানে আক্ষেপ নিয়ে গিল ফিরলে সাত বলে দরকার ছিল তখন ২০ রানের! সেখান থেকে তিন বলে প্রয়োজন ১৩ রানের! স্ট্রাইকে ছিলেন ডেভিড মিলার।

স্মিথের চতুর্থ বলটা ঠিকভাবে মারতে পারেননি মিলার। স্মিথের হাতেই আসে বল! কিন্তু রান নেওয়ার জন্য ক্রিজ ছেড়ে খানিকটা বেরিয়ে আসেন বোলিং প্রান্তে থাকা তেওয়াতিয়া। আর তাঁকে আউট করার নেশায় মত্ত হয়ে থ্রো করেন স্মিথ। ব্যাস, ওভারথ্রো থেকে পেয়ে গেলেন একটি রান। এই এক রানই কাল হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও পাঞ্জাবের জন্য।

শেষ ২ বলে প্রয়োজন ১২ রানের। ম্যাচে পাঞ্জাবের জয় প্রায় নিশ্চিত। যদি-কিন্ত থাকলেও দুই বলে দুই ছক্কা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সেই অসাধ্যই যেন সাধন করে ফেললেন তেওয়াতিয়া। শেষ দুই বলই ইয়োর্কার লেন্থে করতে যান স্মিথ। কিন্তু দুই বলই পড়ে যায় ফুলার লেন্থে। সেখান থেকেই উঠিয়ে নিয়ে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে পর পর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেন তেওয়াতিয়া। তেওয়াতিয়ার ৩ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় গুজরাট টাইটান্স।

  • রশিদ খান – গুজরাট টাইটান্স, প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ

শূন্যতা কাটিয়ে জেদ আর আত্মবিশ্বাস দিয়েই দিনে দিনে ব্যাট হাতেও পরিণত হয়ে উঠছেন রশিদ খান। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন গুজরাট টাইটান্সকে। ১৯৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে গুজরাট। সেখান থেকে তেওয়াতিয়া, রশিদের ব্যাটে শেষ ওভারে জয়ের জন্য গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ২২ রানের। স্ট্রাইকে ছিলেন রাহুল তেওয়াতিয়া আর অপরপ্রান্তে ছিলেন রশিদ খান। বল হাতে প্রস্তুত মার্কো জেনসেন।

এইত কয়েক ম্যাচ আগেই পাঞ্জাবের বিপক্ষে শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তেওয়াতিয়া। তারই পুনরাবৃত্তি হয় কিনা সে নিয়েই সবাই ভাবছিলেন। প্রথম বলেই হাঁকালেন ছক্কা! এরপর সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করলেন। স্ট্রাইকে তখন রশিদ খান। তেওয়াতিয়া স্ট্রাইকে না থাকায় গুজরাট সমর্থকরাও সম্ভবত আর জয়ের আশা করেনি। শেষ চার বলে প্রয়োজন ছিল ১৫ রানের। স্ট্রাইকে যেয়েই সোজা আম্পায়ারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মারলেন রশিদ।

৩ বলে দরকার ৯ রানের। চতুর্থ বলটা ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না রশিদ। ২ বলে ৯ রান রশিদের কাছ থেকে অবশ্যই অনেক উচ্চাভিলাষী প্রত্যাশা। গুজরাটের ডাগ আউট থেকে শুরু করে সমর্থকরাও হয়ত সেসময় তেওয়াতিয়াকে স্ট্রাইকে প্রত্যাশা করছিলেন। কিন্তু এরপরই জন্ম নিল আরেক রূপকথার গল্প। আরেক অবিশ্বাস্য, নাটকীয় ফিনিশিং।

পঞ্চম বলটা ওয়াইড ইয়র্কার করার চেষ্টা করলেন জেনসেন। তবে সেটা না হয়ে লো ফুলটাস হয়ে যায়। সেখান থেকেই উঠিয়ে মেরে কভারের উপর দিয়ে রশিদের দুর্দান্ত এক ছয়। ম্যাচে টান টান উত্তেজনা, হায়দ্রাবাদের ডাগ আউটে অস্বস্তিতে দেখা গেল কোচ মুরালিধরন, টম মুডিডের। রশিদের ব্যাটে তখন ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।

১ বল থেকে প্রয়োজন ৩ রানের। এবার লেগ স্টাম্পের উপর শর্ট বল করলেন জেনসেন। রশিদও সজোরে ব্যাট চালালেন। থার্ড ম্যানের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা! রশিদ ম্যাজিকে অবিশ্বাস্য, নাটকীয় এক জয়!

তেওয়াতিয়ার ২১ বলে ৪০ ও রশিদে ৪ ছক্কায় ১১ বলে ৩১ রানের ক্যামিওতে রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নেয় গুজরাট।

  • রশিদ খান – গুজরাট টাইটান্স, প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস

শেষ তিন ওভারে গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ৪৮ রানের। ডেভিড মিলারের সাথে জুটি গড়ে রশিদের দুর্দান্ত এক ক্যামিওতে জয় পায় গুজরাট। ১৭০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১৬ রানে ৩ উইকেট হারায় গুজরাট। সেখান থেকে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে টাইটান্সরা।

তবে মিলারের ৫১ বলে ৯৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে জয়ের আশা জাগে আবারও। শেষদিকে রশিদের ২১ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪০ রানের ক্যামিওতে ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৩১ বলে ৭০ রানের জুটিতে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নেয় গুজরাট। মিলারের সাথে ব্যাট হাতে শেষদিকে তাণ্ডব চালিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন রশিদ।

মহেন্দ্র সিং ধোনি – চেন্নাই সুপার কিংস, প্রতিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

শেষ চার বল, প্রয়োজন ১৬ রানের।

জয়দেব উনাদকাতের পরের চার বলে – ছয়, চার, দুই ও চার! চার বলে ১৬ রান নিয়ে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল চার রানের। সেখান থেকে ফাইন লেগের উপর দিয়ে শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নেয় ধোনি।

আইপিএল ইতিহাসে শেষ চার বলে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডে এটি আছে চতুর্থতে। তৃতীয় নামটিও ধোনির! ২০১৬ সালে রাইজিং পুনে সুপার জায়েন্টসের হয়ে শেষ ওভারে অক্ষর প্যাটেলের শেষ ৪ বলে ১৬ রান নিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছিলেন ধোনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...