মালিক বনাম টু ডব্লিউজ, নব্বইয়ের পাকিস্তানি বিরোধ
দল এবং দলের বাইরে থেকে এত চাপ থাকার পরও অধিনায়ক হিসেবে সেলিমের রেকর্ডটা বেশ ভালই বলা চলে। পাকিস্তানের হয়ে ৩৪ ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে সেলিম মালিক জয় পেয়েছেন ২১ ম্যাচে। অপরদিকে, ১২ টেস্টের মধ্যে সাতটিতে পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। বিপরীতে হেরেছেন মাত্র তিন টেস্টে।
আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান ক্রিকেট দলটা বেশ শক্তিশালী ছিল। ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে তাঁরা। এরপর ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলে দলটি। পরবর্তীতে ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান।
যদিও বিশ্বকাপ শিরোপা আর ছুঁতে পারেনি তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল খেলে হারে বাজেভাবে। আর পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে বরাবরই বিতর্ক রয়েছে। সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক সেলিম মালিক যেমন দাবি করেন, যখন তাঁকে দলের অধিনায়ক করা হয় তখন দুই কিংবদন্তিতুল্য পেসার ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস ক্ষোভে তাঁর সঙ্গে কথাই বলেননি।
এক কালের গ্রেট ব্যাটার সেলিম মালিক দাবি করেছেন, যখন তাঁকে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক করা হয় ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস তাঁর সাথে বসতেও চাননি। সেলিমের উপর চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁরা। সেলিমের ভাষ্যমতে, ওয়াসিম, ওয়াকারের সমর্থন না পেলেও তিনি দলকে সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে সেলিম মালিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস আমাকে সমর্থন করেনি। কিন্তু পেশাদার হিসেবে তাঁরা তাঁদের পারফরম্যান্সের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। আপনি কি জানেন, আমাকে দলের অধিনায়ক করার কারণে দুজনেই আমার সঙ্গে কথা বলেনি। এ ব্যাপারে আমি তাঁদের সাথে কথাও বলেছিলাম। আমি তাঁদের বল করতে বললে তাঁরা আমার কাছ থেকে বলটা এক প্রকার কেড়েই নিত। আসলে, আমাকে অধিনায়ক করা হলেও ওয়াসিম ও ওয়াকার আমাকে মানতো না। কারণ তাঁরা নিজেরাই তখন অধিনায়ক হতে চেয়েছিল।’
সেলিম মালিকের অভিযোগটা অবশ্যই বেশ কড়া। ফলে তাঁর কথায় নড়েচড়ে বসতেই হচ্ছে। তাঁর দাবি, অধিনায়কত্ব না পাওয়াতে ‘টু ডব্লিউ খ্যাত ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস খুবই নাখোশ ছিলেন মালিকের ওপর।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমার সাথে কথা বলেনি, কিন্তু তবুও আমরা প্রথম সিরিজটা জিতেছিলাম। আমি আকরামকে বলতাম তুমি বিশ্বের এক নম্বর বোলার। তুমি উইকেট নাও বা না নাও, সেটা আমাকে প্রভাবিত করবে না। বরং এটা তোমার যশ-খ্যাতির উপর প্রশ্ন তুলবে। ওয়াকার অবশ্যই পাঁচ উইকেট নিবে। এই একই কথা আমি ওয়াকার ইউনুসকেও বলতাম। একেই বলে ম্যানেজমেন্ট। আমি ব্রেইনের সঠিক ব্যবহার করতাম যাতে তাদের সেরা পারফরম্যান্সটা নিশ্চিত করা যায়।’
কোনো রাজনৈতিক কারণ তো অবশ্যই ছিল। কিংবা দলের সাথে না থাকা সত্ত্বেও সেলিমের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিল অনেকেই। দলের বাইরের থেকেও অনেকে প্রভাব খাটাচ্ছিল। সেলিমকে অধিনায়কত্ব থেকে সরাতে অনেকেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল।
সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে আমরা ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছিলাম। শুধুমাত্র পাকিস্তানের জন্য কিছু ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের কারণে কিছু মানুষের এটা নিয়ে সমস্যা ছিল। আমার ভাল অনেকেই চাইতো না। কিভাবে আমাকে আক্রমণ করা যায়, কিভাবে আমাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো যায় – এসব পরিকল্পনা করছিল অনেকেই। আমি তখন বুঝতেই পারছিলাম না কেন এমন হচ্ছে! কারণ আমি কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা কিছুর সাথে জড়িত ছিলাম না।’
দল এবং দলের বাইরে থেকে এত চাপ থাকার পরও অধিনায়ক হিসেবে সেলিমের রেকর্ডটা বেশ ভালই বলা চলে। পাকিস্তানের হয়ে ৩৪ ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে সেলিম মালিক জয় পেয়েছেন ২১ ম্যাচে। অপরদিকে, ১২ টেস্টের মধ্যে সাতটিতে পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। বিপরীতে হেরেছেন মাত্র তিন টেস্টে। যদিও, শেষ পর্যন্ত ফিক্সিংয়ের কলঙ্কে ডুবে ক্যারিয়ারের সুনামটা একদমই বিসর্জন দিয়েছেন সেলিম মালিক।