উমরান-হারিস ও ভারত-পাকিস্তান

দুর্দান্ত গতিতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে ২২ গজ মাতাচ্ছেন কাশ্মীরের উমরান মালিক। আইপিএলের এবারের আসরে হায়দ্রাবাদের প্রতি ম্যাচেই গতিশীল বলের পুরষ্কারটা উঠছে এই পেসারের হাতে। ইতিমধ্যেই গতির ঝড় তুলে বর্তমান থেকে সাবেক ক্রিকেটারদেরও প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন তিনি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা উমরান নিয়মিত ১৪৫+ কিলো/ঘন্টার গতিতে বল ছুঁড়তে পারেন। ২২ গজে গতি দিয়েই মুগ্ধ করছেন সবাইকে।

পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ফ্র‍্যাঞ্চাইজি দল লাহোর কালান্দার্সের মালিক সামিন রানা মনে করেন পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফের ক্রিকেটের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। হারিস রউফও এভাবেই উঠে এসেছিলেন।

একদিন লাহোরে ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলেন আরেক তরুণ তারকা হারিস রউফ। কালান্দার্সের হয়ে ট্রায়াল দিতে যেয়ে দেখেন গেইটের সামনে কমপক্ষে ২০ হাজার ক্রিকেটার এসেছিল ট্রায়াল দিতে! কালান্দার্সের প্রধান কোচ ছিলেন সাবেক পাকিস্তানি তারকা আকিব জাবেদ। সেখানে ৯২ কি.মি ঘন্টায় বল করে জাবেদকে আউট করেন হারিস! এরপর সেখান থেকেই উঠে আসা।

২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে অভিজ্ঞতা ছাড়াই রউফকে দলে ভেড়ায় লাহোর কালান্দার্স। এর এক বছর বাদে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক হয় রউফের। সেই গল্পের সাথে উমরানের গল্পের মিল পান কালান্দার্সের মালিক রানা।

সামিন রানা বলেন, ‘আমি বড্ড খুশি যে লাহোর কালান্দার্স শুধু পাকিস্তান ক্রিকেট নয়, ভারতীয় ক্রিকেটকেও বেশ প্রভাবিত করেছে। আপনি যদি উমরান মালিকের গল্পের দিকে তাকান আপনি দেখতে পাবেন যে এর সাথে হারিস রউফের গল্পের মিল আছে। হয়ত ওরা হারিসের গল্প অনুসরণ করেছিল। তাঁরা ভেবেছিল পাকিস্তান পারলে ভারত কেনো পারবে না। কারণ তাঁদের মাঝে অনেক মিল আছে। দুজনই সাদা বলের ক্রিকেট দিয়ে শুরু করে। দু’জনই জম্মু কাশ্মীরের। দু’জনই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলে এসেছে।’

২০২১ সালের আইপিএলে থাঙ্গারাসু নটরাজনের বদলি হিসেবে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলার সুযোগ পান উমরান। নটরাজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ভাগ্য খুলে যায় উমরানের। ২১ বছর বয়সী এই পেসার তখন নিজ রাজ্যের হয়ে মাত্র দুইটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, একটি টি-টোয়েন্টি ও একটি লিস্ট এ ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। সেখান থেকে আইপিএলে উঠে এসে গতির ঝড় তুলে নজর কেড়েছেন সবার।

রানা বলেন, ‘এর আগে আমি আইপিএলে এমনটা কখনো দেখিনি। হারিস এভাবে প্রথম সফল হয়েছিল এবং অন্যদেরকে নতুন পথ দেখায়। কিন্তু হারিসকে যখন আমরা দলে নিয়েছিলাম, প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েছিলাম। আমরা নাকি ঘরোয়া ক্রিকেটকে হত্যা করেছি। কিন্তু আজকে সে পাকিস্তানের পাকিস্তানের গর্ব। সে যখন বাইরে খেলতে যায় ইয়র্কশায়ারের মত একটা দলে, তখন ওরা ওকে পাকিস্তানি সুপারস্টার বলে ডাকে। আমরা ক্রিকেটারদের নতুন এক পথ দেখিয়েছি। এর জন্য আমরা কৃতিত্ব নিতে চাই।’

পাকিস্তানের পেস বিভাগে অন্যতম সেরা তারকা এখন হারিস রউফ। খেলছেন কাউন্টি লিগেও। অপরদিকে, আইপিএলের এবারের আসরে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে এবারের আসরে এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে ৭.৯৭ ইকোনমিতে প্রায় ১৬ গড়ে শিকার করেছেন ১৫ উইকেট। গেল ম্যাচেই গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে নিয়েছেন মাত্র ২৫ রানে ক্যারিয়ার সেরা ৫ উইকেট। উমরানের গতির ঝড়ে এখন কাঁপছে আইপিএলের মঞ্চ।

সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন উমরান মালিকও হারিসের মতই খেলবেন জাতীয় দলে। হয়তো দ্রুতই তাঁরা মুখোমুখিও হবেন। দুয়ারে কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link